খুলনার বর্ষিয়ান রাজনীতিক, ভাষা সৈনিক, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এম নূরুল ইসলাম দাদু ভাইয়ের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী শুক্রবার। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর তিনি ইন্তেকাল করেন। টুটপাড়া কবরখানায় তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।
মরহুম এম নুরুল ইসলাম দাদুভাই স্মৃতি পরিষদ শুক্রবার বেলা ১২ টায় টুটপাড়া কবরখানায় তাঁর কবর জিয়ারত এবং বাদ জুমা পিটিআই জামে মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ।
সংগঠনটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, গণতন্ত্র ও জনগণের মুক্তির সকল সংগ্রামের অগ্রসেনানী ছিলেন দাদু ভাই। দৃঢ়তা, অটুট মনোবল, সাহস, ধৈর্য্য এবং ব্যক্তিত্বে তিনি ছিলেন অনন্য উচ্চতার একজন ব্যতিক্রমী রাজনীতিবিদ। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীকার আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছিলেন।
ভাষা আন্দোলনের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে ৬৪ বছর আগে যারা খুলনায় মিছিল সমাবেশ-এর আয়োজন করতেন তাদের একজন এম নুরুল ইসলাম। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খুলনার রাজপথে উপস্থিতি ছিল সার্বক্ষনিক। সেদিন তিনি ছিলেন টগবগে যুবক।
ঢাকার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে খুলনা ভাষা আন্দোলন গড়ে তুলতে সেদিন হাতে গোনা কয়েকজন যুবক শ্রম ও মেধা নিয়োগ করেন। ঢাকার অনুরূপ খুলনায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল পালিত হয়। হরতাল সফল করতে যারা এগিয়ে আসেন তাদের মধ্যে তিনি একজন। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ছাত্রদের মিছিলে গুলিবর্ষণ ও ছাত্র নিহত হওয়ার প্রতিবাদে খুলনার যুব সমাজ ২৩ ফেব্রুয়ারি মিছিল বের করে। অবাঙালি ও মুসলিম লীগের গুন্ডাবাহিনী মিছিলের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ করে। ছাত্র জনতা সে আক্রমণ প্রতিহত করে। মুসলিম লীগ সমর্থকরা ভাষা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্তদের বাড়ি বাড়ি হামলা ও মারপিট করে। ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ায় তাঁর নামে মামলা হয়।
তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে দাদু ভাই বলে পরিচিত। ১৯৩৪ সালের ২ জুলাই তিনি খুলনা শহরের বাবু খান রোডে জন্মগ্রহণ করেন। মরহুম ডাঃ খাদেম আহমেদ তার পিতা ও আছিয়া খাতুন তার মা। তার পৈত্রিক নিবাস মাগুরা জেলার শালিখা থানার সোলাপুর গ্রাম। ১৯৪৭ সালে কলকাতা মেট্রোপলিটন হাই স্কুল থেকে মেট্রিক এবং ১৯৪৯ সালে বিএল একাডেমি থেকে আইএ পাশ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি নিখিল বাংলা মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৭ সালে খুলনায় ন্যাপের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৬২ সালে খুলনা পৌরসভার জাহানাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে ন্যাপের খুলনা শহর শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ফারাক্কা অভিমুখে মিছিলে অংশ নেন। দীর্ঘপথ হেটে চাপাইনবাবগঞ্জ কানসাটে উপস্থিত হন।
তিনি ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন জাগদলে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে খুলনা মহানগরী বিএনপি’র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘ সময় এই দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির মনোনয়নে খুলনা সদর আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে খুলনা-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এম নূরুল ইসলাম নাট্য নিকেতন, হার্ট ফাউন্ডেশন, শিল্পকলা একাডেমি, রূপসার আলাইপুর ডিগ্রী কলেজ, রূপসা কলেজ, উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি, সেন্ট জোসেফস্ হাই স্কুলের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর সফর করেছেন। লায়লা ইসলাম তার স্ত্রী। পুত্র আরিফুল ইসলাম লুনিক প্রকৌশলী, তরিকুল ইসলাম লুতাম, মনিরুল ইসলাম মনি, কন্যা সাহানা পারভিন, সাবেরা ইসলাম ও তাহেরা ইসলাম সবাই প্রতিষ্ঠিত।