খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাঁধ ভেঙে ডুবছে ফসল, দাকোপে আমন হারানোর শঙ্কায় কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক

গেল বার ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আম্যাগি জমির ধান হুতি দ্যায়নি। সব নষ্ট ক্যুরি দ্যে গেলো। ধান না প্যায়ি জমি করার খরচ তুলতে পারিনি। এ বছর আবার ধার-দেনা ক্যুরি ধান লাগাইছি। কিন্তু রাস্তা ভ্যাঙি গ্যাংয়ের পানি খেতের ম্যধি ডুকতিছে। জুয়ারে প্রতিদিন জমিতে পানি ডুকি ধান তুল্যায় যাতিছে। বাঁধ ভাঙনের পাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন খোনা গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ কৃষক শেখর সরদার।

শেখরের মতো ওই গ্রামের অন্তত ৬০ জন কৃষক এই ক্ষতির সম্মুখীনে পড়তে হয়েছে। অতিবৃষ্টিতে খুলনার দাকোপ উপজেলার পানখালী ইউনিয়নের খোনা গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে আমনের খেত তলিয়ে গেছে। এতে উপজেলার দুটি গ্রামের জমির আমন ধান জোয়ারের পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। কষ্টের ফসল হারানোর শঙ্কায় দিশেহারা সেখানকার কৃষক।

কয়েকজন স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খোনা গ্রামের পাশেই ঢাকি নদী। কয়েক দিনের বৃষ্টি ও নিম্নচাপের কারণে নদীতে পানি বেশি ছিল। তার ওপর গত সোমবার রাতে ব্যাপক বৃষ্টি হয়। পানির চাপে রাতে খোনা গ্রামের বাঁধের একাংশ ভেঙে ব্যাপকভাবে পানি ঢুকতে থাকে। সারা রাতেই এভাবে চলে। এতে প্লাবিত হয় খোনা গ্রামসহ তিলডাঙা ইউনিয়নের চরডাঙা গ্রামটিও। ভেসে যায় পুকুরের মাছ। খোনা গ্রামের মোল্যা বাড়ির সামনের ওয়াপদার বেড়িবাঁধটি ঢাকি নদীতে বিলীন হওয়ার ১০ দিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ সম্ভব হয়নি।

খোনা গ্রামের কৃষক ইমরান গাজী বলেন, পানিতে পুরা গ্রামের ধান তলাই গিছে। গ্রামের দিকে চাইলে অখন খালি পানি দেখা যায়। রাতে যেভাবে মেঘ (বৃষ্টি) অইছে তখনই বুজছি ধান সব শেষ। প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে আমন খেত তলিয়ে যাওয়ার ফলে ধানের ফলন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে ধারণা করেন কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আরও যদি সাতদিন এভাবে পানিতে তলিয়ে যায়, তাহলে সেখানকার ফসল এ বছর হবে না।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দাকোপে এ বছর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে বাঁধ ভেঙে দুটি গ্রামের প্রায় ৮০ হেক্টর জমির আবাদ তলিয়ে গেছে। ১৫ হেক্টর জমির সবজির আবাদ নষ্ট হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শাহাবুদ্দীন মোল্যা বলেন, খোনার অধিকাংশ আমন ধানই পানিতে তলিয়ে গেছে। সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে সবজির খেত। যেভাবে পানি ঢুকছে তাতে মনে হয় গ্রামের কোনো ধানই আর কৃষক কাটতে পারবেন না। ভাঙন কবলিত এলাকাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১ নম্বর পোল্ডারের আওতায়। নিম্নচাপ ও ভারিবর্ষণের কারণে নদীতে পানি বেড়ে গিয়ে হঠাৎ বেড়িবাঁধটি ভেঙে প্লাবিত হয়ে ফসলহানি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ইউপি সদস্য।

কৃষক দীপক সরদার জানান, এমন সময় বাঁধ ভেঙে তলিয়েছে যখন ধানের থোড় এসেছে। সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে পারছি না। কয়েকদিন বাদে ধান গাছের বুক চিরে শীষ বের হবে। জোয়ারের পানিতে প্রতিদিন ডুবে যাচ্ছে ধানখেত। গত বছরের মতো এ বছরও আমন ধান না পাওয়ার শঙ্কা আছে।

দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন, অধিকাংশ খেতে ধানের থোড় এসেছে। কিছু জায়গায় শীষও বের হয়েছে। প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ধানের ওপর নদীর পলি জমে থাকায় থোড় নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে ধানগাছের পরাগ রেণু আসার সময়। যদি এভাবে প্রতিদিন তলিয়ে যায়, তাহলে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যাণার্জী মুঠোফোনে বলেন, বাঁধ ভাঙার পর দুদিন নিম্নচাপ থাকায় বাঁধ নির্মাণ করতে একটু দেরি হচ্ছে। ভিতরে যাতে পানি ডুকতে না পারে সেজন্য কিছুটা বাঁধ দেয়া হয়েছে। তবে পূর্ণিমার গোনে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধ ছাপিয়ে পানি প্রবেশ করছে। বাঁধের ভিতরে সম্পূর্ণভাবে নদীর পানি প্রবেশ আটকানোর জন্য চেষ্টা করছি।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!