সাতক্ষীরার দেবহাটা থানার ওসি এবং এস আই নুর মোহাম্মদ কর্তৃক দীর্ঘ দিনের দখলীয় খাস সম্পত্তি থেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের উচ্ছেদ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সদর উপজেলার খানপুর গ্রামের মৃত খোদাবক্স গাজীর ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আহারুল ইসলাম এই অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমার মুক্তিযোদ্ধা সনদ নং- ম-১৭১১১৫৯, গেজেট নং- এবং লাল মুক্তিবার্তা নং- ০৪০৪০১০০২৮। দেবহাটার রামনাথপুর মৌজার এস.এ ১নং খাস খতিয়ানের ২৩৬, ২৩৭ ও ২৩৮ দাগে ৭৬ শতক জমির মধ্যে ৩৩ শতক জমিতে আমার জামাতা আসাদুল ইসলাম ঘর নির্মাণ পূর্বক বসবাস করে আসছেন। উক্ত সম্পত্তি ২০১৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সভায় ১৭৬ নং স্মারকে বাতিলকৃত বন্দোবস্তের গ্রহীতা পারুলিয়ার কালাবাড়িয়া গ্রামের আদম মল্লিকের ছেলে মোঃ আবুল কাশেম ও তার স্ত্রী ছালেহা খাতুন ২০১৬ সালের ১২ জুলাই দেবহাটা সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী ২৪/২০১৬ নং মোকদ্দমায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক সহ তার অধীনস্থ ৪ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বিবাদী শ্রেণিভুক্ত করেন।
বিবাদীগণ হাজির হয়ে জবাব দাখিল করেছেন। জবাবে তপশীল বর্ণিত সম্পত্তিতে কখনোই বাদী আবুল কাশেম গং দখল করতেন না এবং উপজেলা প্রশাসনের সার্ভেয়ার প্রদত্ত রিপোর্ট অনুযায়ী দখলকার হিসাবে জনৈক আবুল হোসেন, মোঃ রেজাউল ইসলাম ও আমার জামাতা মোঃ আসাদুল ইসলামের নাম উল্লেখ থাকায় তাহাদেরকেও বিবাদী শ্রেণিভুক্তকরণের আবেদন করেন। সে মোতাবেক জমিতে দখলে থাকা উল্লেখিত ব্যক্তিগণ চলমান মামলায় অংশগ্রহণ করছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আহারুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, যে মামলা সরকারের বিরুদ্ধে এবং আসামী সরকারি কর্মকর্তা, অথচ দেবহাটা থানার ওসি ও এসআই নুর মোহাম্মদ সরকারি কর্মকর্তা হয়েও সরকারের পক্ষ অবস্থান না নিয়ে উল্টো ওই সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতকারীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সম্প্রতি দেবহাটা থানার এস আই নুর মোহাম্মদ আমার জামাতাকে তার ঘরে প্রবেশ করতে বাধা দেন এবং গত ২৬ জুলাই সকাল ১১টায় থানায় ওসি সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করতে বলেন। সে মোতাবেক আমার জামাতা এবং তার পুত্র থানায় উপস্থিত হলে ওসি সাহেবের নির্দেশে এসআই নূর মোহাম্মাদ উল্লেখিত দেওয়ানী মামলার বাদীদের সম্মুখে জোর পূর্বক অঙ্গীকার নামায় তাদের পিতা-পুত্রকে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।
পরদিন ২৭ জুলাই সকালে উল্লেখিত আবুল কাশেম, তার স্ত্রী সালেহা খাতুন গংরা তপশীল জমিতে প্রবেশ করে আমার কন্যাকে নাজেহাল করে বাড়ী ভাংচুর, বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। সেখানে দখলদাররা ঘর নির্মাণ করে। তাৎক্ষণিক আমার কন্যা ৯৯৯ এ ফোন দিলে দেবহাটা থানার ওসি সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎকারী দখলদারদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।
তিনি আরো বলেন, এসআই নূর মোহাম্মাদ সম্পূর্ণ প্রতারণা মূলকভাবে ২০১৯ সালের ২৮ আগষ্টের এক ইনফরমেশন স্লীপের আংশিক অর্ডারের কথা উল্লেখপূর্বক অজুহাত দেখিয়ে দীর্ঘদিন ভোগ দখলে থাকার পর আমার কন্যা ও তার পরিবারের সকল সদস্যকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এভাবে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দেবহাটা থানার ওসি ও এসআইসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেবহাটা থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা সংবাদ সম্মেলনে করা মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আহারুল ইসলামের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটি জমি জমা নিয়ে ঘটনা, যা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন। আমরা উভয় পক্ষকে ডেকে বলেছি, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে, সেহেতু আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে পুলিশ কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না। একমাত্র বিজ্ঞ আদালতই এর সিদ্ধান্ত দিবেন। বর্তমানে আপনারা উভয় পক্ষ শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে চলবেন।
খুলনা গেজেট/এনএম