খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ঠা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  জুলাই অভ্যুত্থানে হামলায় অভিযুক্ত ঢাবির ১২৮ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার
  দেশ বদলাতে একক নির্দেশে নয়, টিম হয়ে কাজ করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ত্রিভুজ প্রেমের বলি তাজকিরকে যেভাবে হত্যা করা হয়!

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনায় ত্রিভুজ প্রেমের বলি হওয়া তাজকির আহমেদকে হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। সোমবার (১৭ মার্চ) সকালে কেএমপি’র মিডিয়া ব্রিফিংয়ে হত্যার মূল রহস্যের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। আলোচিত এ হত্যাকান্ডের নৃশংসতা যেন সিনেমাকেও হার মানায় বলে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে পুলিশ। মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) এম এম শাকিলুজ্জামান।

ঘটনায় বিবরণ উল্লেখ করে পুলিশ জানায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি আসিফ মাহমুদ খালিশপুর থানায় তার মামাতো ভাই তাজকির আহম্মেদ নিখোঁজ হয়েছে মর্মে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যার জিডি নং-১১৫৪, তারিখ-২২/০২/২০২৫। ঘটনার তদন্তে পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পারে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে প্রেমিকার ব্যবহৃত হোয়াটস্অ্যাপ থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে ভিকটিম তাজকির তার চাচাতো ভাই রনির শ্যালিকা সীমার সাথে দেখা করার জন্য ঢাকা থেকে খুলনা আসেন। তাজকির আহমেদ গত ২১ ফেব্রুয়ারি খালিশপুর থানাধীন গোয়ালখালি এলাকায় তার মামাতো ভাই আসিফ মাহমুদের বাড়িতে মাত্র এক ঘন্টার জন্য আসে এবং বাসাতে কিছু সময় থেকে প্রেমিকা সীমার সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এই ঘটনায় পরবর্তীতে নিখোঁজ যুবকের পিতা মুরাদ হোসেন বাদী হয়ে এজাহারে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে খালিশপুর থানার মামলা নং-২২, তারিখ-২৫/০২/২০২৫, ধারা-৩৬৫/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়।

তৎপ্রেক্ষিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশ এজাহারনামীয় আসামি নগরীর খালিশপুরের নিউজপ্রিন্ট মিল এলাকার মো. জলিল হাওলাদারের মেয়ে সুরাইয়া আক্তার সীমা (২০), খালিশপুর হাউজিং এলাকার মিন্টু মিয়ার স্ত্রী লাবনী বেগম (৪২), একই এলাকার মৃত: নজরুল ইসলামের ছেলে শহিদুল ইসলাম সাহিদ (২০) কে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে।

মামলা তদন্তকালে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খালিশপুর থানা পুলিশ খানজাহানআলী থানাধীন ভৈরব নদীর বালুর মাঠ ঘাটে বস্তা বন্দী একজন অজ্ঞাতনামা যুবকের লাশ পড়ে আছে মর্মে সন্ধান পায়। পুলিশের অনুরোধে জিডির বাদী আসিফ মাহমুদসহ ভিকটিমের পিতা এবং তাদের নিকট আত্মীয়রা খুলনা মেডিকেল হাসপাতাল মর্গে উপস্থিত হয়ে লাশের শরীরে পরিহিত চেক শাট ও পরনের প্যান্ট দেখে অজ্ঞাতনামা লাশটি ভিকটিম তাজকির আহম্মেদের বলে সনাক্ত করেন। পুলিশের চৌকস তদন্ত টিম কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ, নিরবিচ্ছিন্ন তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রযুক্তির সহযোগিতায় অল্প সময়ের মধ্যে মামলার রহস্য উদঘাটন করতে সমর্থ হয়।

তদন্তে জানা যায় যে, প্রেমিকা সীমা সম্পর্কে ভিকটিমের ভাইয়ের শ্যালিকা। সীমার এজাহারনামীয় ১নং আসামি ইসমাইল হোসেন অভির সাথে তিন বছর পূর্বে তাদের পরিবারের অমতে বিয়ে হয়। পরবর্তীতে অল্পদিনের মধ্যে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায় এবং অভি দেশের বাইরে চলে যায়। এই সুযোগে তাজকির আহম্মেদ এর সাথে সীমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ডিভোর্সের ৭/৮ মাস পরে অভি দেশে ফিরে এসে প্রাক্তন স্ত্রী সীমার সাথে যোগাযোগ করে এবং তাদের মধ্যে পুনরায় সম্পর্ক তৈরি হয়। এসময়ে ত্রিভূজ প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় যা একমাত্র সীমা জানতো। সীমা একই সাথে দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দুই প্রেমিকের সাথে সম্পর্ক চলমান রাখে যাতে কেউই বিষয়টি বুঝতে না পারে। এদিকে অভি আর সীমার পুনঃ রিলেশনের বিষয়টি তাদের উভয় পরিবারের লোকজন জানলেও ভিকটিম তাজকিরের সাথে প্রেমের বিষয়টি অপ্রকাশ্যে থেকে যায়। কিন্তু ঘটনা পরিক্রমায় অভি সীমার সাথে তাজকিরের প্রেমের সম্পর্কের কথা জেনে যায়। এটা নিয়ে সীমা এবং অভির মধ্যে ঝগড়া হতে থাকে। অভি ভিকটিম তাজকিরকে শায়েস্তা করার জন্য সীমার ব্যবহৃত গোপন মোবাইল ফোন থেকে হোয়াটস্অ্যাপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভিকটিমকে খুলনায় আসতে বলে। তাজকির খুলনা আসলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অভি তার বন্ধুদের সহায়তায় তাকে অপহরণ করে নিজ বাসায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অভিসহ ৪ বন্ধু মিলে তাজকিরের হাত-পা বেঁধে মুখে কচটেপ পেচিঁয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে ও পুরুষাঙ্গে উপর্যুপরি আঘাত করে, গলায় রশি দিয়ে ফাঁস দিয়ে নৃশংসভাবে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরবর্তীতে তারা ৪ বন্ধু মিলে ডাকবাংলা থেকে ১০০/- টাকা দিয়ে বস্তা ক্রয় করে তাজকিরের লাশ বস্তায় ভরে ইজিবাইকে করে ভোর রাতে ৪/৫ টার দিকে হার্ডবোর্ড খেয়াঘাটে নিয়ে যায়। সেখান থেকে পূর্বে ভাড়া করে রাখা ট্রলারযোগে দৌলতপুর যাওয়ার দিকে নদীর মাঝখানে নিয়ে লাশ ফেলে দেয়।

ইতোমধ্যে খালিশপুর থানা পুলিশ আলোচিত তাজকির আহম্মেদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় সুরাইয়া আক্তার সীমা, লাবনী বেগম এবং শহিদুল ইসলাম সাহিদকে পূর্বে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। গত এছাড়া হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত খালিশপুর হাউজিং বাজার এলাকার মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে মশিউর রহমান জিতু (২৪), খালিশপুরের বিআইডিসি রোড এলাকার শহিদুল ইসলাম কাজীর ছেলে রিয়াদ কাজী (২২) কে গ্রেপ্তার করে আদালতে সৌপর্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত জিতু এবং রিয়াদ তাজকির হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। হত্যাকান্ডের পর লাশ বহনের কাজে ব্যবহৃত ইজিবাইকের চালক শহিদুল ইসলাম সাহিদকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। থানার রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আরও কোন মামলা আছে কী না তা যাচাই করা হচ্ছে। নির্মম এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!