সাতক্ষীরার তালায় ১২ বিঘা জমি লীজ দিতে রাজী না হওয়ায় প্রহল্লাদ মন্ডল নামের এক ঘের মালিককে অপহরণের পর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। গত সোমবার তালা উপজেলার খরাইল গ্রামে এ ঘটনার পর থেকে ওই ব্যবসায়ি সাতক্ষীরা সদর হাপসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় নির্যাতিতের স্ত্রী মীনাক্ষী রানী মন্ডল বাদি হয়ে নির্যাতনকারিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রহল্লাদ মন্ডল জানান, খরাইল বিলে নিজের ছয় বিঘা জমি ও বিঘা প্রতি ২১ হাজার টাকা করে হারিতে স্থানীয় মোস্তাফিজুর রহমান মল্লিক ও ব্রজেন মন্ডলের কাছ থেকে আরো ছয় বিঘা জমি লীজ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে ধান ও মাছ চাষ করে আসছেন তিনি। কিন্তু ওই জমি পার্শ্ববর্তী ঘের মালিক যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার চুয়াডাঙ্গা গ্রামের মোস্তাক আহম্মেদ, তার ভাই ফারুক আহম্মেদ, তাদের ব্যবসায়িক পার্টনার বাবলু তাদের কাছে লীজ দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। ওই জমি লীজ দিতে রাজী না হওয়ায় ইতিপূর্বে মোস্তাক আহম্মেদ ও ফারুক আহম্মেদ এর ঘের কর্মচারিরা বিভিন্ন সময়ে তার ঘেরের বাসা থেকে জাল, দা ও কাঁচি চুরি করে নিয়ে যায়। বিষয়টি তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্যকে অবহিত করেন।
প্রহল্লাদ মন্ডল আরো বলেন, গত সোমবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে তিনি ঘেরের বাসা থেকে সবজি ও হাঁসের ডিম নিয়ে বাজারে যাওয়ার সময় তাল গাছের সারি নামক স্থান থেকে মোস্তাক আহম্মেদ, তার ঘের কর্মচারি ইকবালসহ কয়েকজন তাকে ধরে ১১০০ বিঘা ঘেরের বাসায় নিয়ে যায়। এরপর তাকে ঘেরে ব্যবহৃত নৌকায় তুলে হাত ও পা বেঁধে কাঁঠের চেলা দিয়ে ব্যাপক মারপিট করে তারা। পরে তাকে তাদের ঘেরের ঘোষপাড়া কর্ণারে নিয়ে গেলে প্রদীপ ঘোষের স্ত্রী তার কান্নার আওয়াজ শুনে প্রতিবাদ করেন। পরে সেখান থেকে সন্তোষ মেম্বরের পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখালে একদল মহিলা ঝাঁটা নিয়ে তেড়ে আসায় তাকে নিয়ে অপহরণকারিরা সরদারপাড়া কানপুকুর পাড়ে তাল গাছের সঙ্গে নৌকা বাঁধে। এরপর তার পিঠের বাম পাশে ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে সেখানে গোবর ঢুকিয়ে দিয়ে লিকোপ্লাস্ট লাগিয়ে দেয়। এ সময় তাকে ছয়টি অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে সাক্ষর করতে বলা হয়। রাজী না হওয়ায় তার বাম হাত গ্যাস লাইটার জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে জীবন ভিক্ষা চেয়ে ওই ছয়টি স্টাম্পে সাক্ষর করে দিতে বাধ্য হন তিনি। পরে তাকে মোহনা বাজারে মোস্তাক আহম্মেদের অফিসে নিয়ে মাছ চুরি ও চার লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে বলে সাধারণ মানুষকে অবহিত করা হয়। একপর্যায়ে তিনি সঙ্গা হারিয়ে ফেলেন। খবর পেয়ে তার স্বজনরা তাকে উদ্ধার কওে প্রথমে তালা উপহেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় তার স্ত্রী মিনাক্ষী মন্ডল বাদি হয়ে মোস্তাকসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বৃহষ্পতিবার মামলা দিলেও শনিবার বিকাল পর্যন্ত পুলিশ কোন আসামী ধরতে পারেনি।
এ ব্যাপারে শনিবার বিকেল মোস্তাক আহম্মেদ এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ফয়সাল আহম্মেদ জানান, প্রহল্লাদ মন্ডলের পিঠের বাম পাশে ধারালো অস্ত্র দিয় কেটে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ছাড়াও তার বাম বাহুতে আগুন লাগানোর ফলে ফোস্কা পড়েছে। তার বাম পায়ের হাটুতে ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করায় হাড়ভাঙ্গা জখম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, ‘প্রহল্লাদ মন্ডলের উপর নির্যাতনের ঘটনায় তার স্ত্রী মীনাক্ষী মন্ডল বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামীরা ভিন্ন জেলার হওয়ায় গ্রেপ্তারে সমস্যা হচ্ছে। তবে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যহত রয়েছে।’
খুলনা গেজেট/ এস আই