মেরি এবং ফ্রেডরিকের জীবনের গল্পটি সিনেমার গল্পের মতোই রোমাঞ্চকর। বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করা অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ মেয়ে মেরি ডোনাল্ডসনের সঙ্গে সিডনি শহরের একটি ক্লাবে পরিচয় হয় ডেনমার্কের যুবরাজ ক্রাউন প্রিন্স ফ্রেডরিকের। তারপরের ঘটনাটি হয়ে গেছে ইতিহাস।
আর মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া মেরি ডোনাল্ডসন ডেনমার্কের রানি হবেন।
এ মাসের ১৪ তারিখ বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম শাসক ডেনমার্কের রানী মারগ্রেথ সিংহাসন ছাড়ছেন। নববর্ষ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রানি দ্বিতীয় মারগ্রেথ ক্ষমতা গ্রহণের ৫২ বছর পর সিংহাসন ছাড়ার ঘোষণা দেন। ভাষণে সন্তান ফ্রেডরিককে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন তিনি। ফলে ১৪ জানুয়ারি যখন মারগ্রেথ আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব ছাড়বেন তখন তার ছেলে প্রিন্স ফ্রেডেরিক রাজা হবেন আর প্রিন্সেস মেরি হবেন রানি।
রাজ্যাভিষেক শুরু হবে ফ্রেডেরিক এবং মেরির খ্রিস্টানবার্গ প্রাসাদে যাওয়ার মাধ্যমে। খ্রিস্টানবার্গ প্রাসাদ ১৪০০ সাল থেকে ডেনমার্ক রাজ্যের ক্ষমতার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার হোবার্টে জন্ম ম্যারি ডোনাল্ডসনের। সেখানেই লেখাপড়া করেন। তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য ও আইন বিষয়ে স্নাতক হন তিনি।
২০০০ সালে অলিম্পিক গেমসের সময় সিডনিতে যুবরাজ ফ্রেডরিকের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। মেরি সেখানে তার বন্ধুদের সঙ্গে ছিলেন।
পরে এক টিভি সাক্ষাৎকারে মেরি ডোনাল্ডসন বলেন, ‘প্রথমবার দেখা হওয়ার পর আমরা করমর্দন করি। আমি জানতাম না যে তিনি ডেনমার্কের যুবরাজ। এক ঘণ্টা বা তারও পর কেউ আমার কাছে এসে বলল, ”আপনি কি জানেন এই লোকেরা কারা?”
যুবরাজের সঙ্গে ওই রাতে ইউরোপীয় রাজপরিবারের অনেক সদস্য ছিলেন। তাদের মধ্যে ফ্রেডরিকের ছোট ভাই প্রিন্স জোয়াচিম, চাচাতো ভাই গ্রিসের প্রিন্স নিকোলাসও ছিলেন।
৩ বছর প্রেমের পর ২০০৩ সালের অক্টোবর মেরি-ফ্রেডরিকের বাগদান হয়। পরের বছরের ১৪ মে কোপেনহেগেন ক্যাথেড্রালে বিয়ে হয় তাদের।
প্রিন্সেস মেরি বর্তমানে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপীয় আঞ্চলিক কার্যালয়সহ ৩০টিরও বেশি দাতব্য সংস্থার পৃষ্ঠপোষক হিসাবে কাজ করছেন। তিনি ডেনিশ শরণার্থী কাউন্সিলের অন্যতম সংগঠক। মেরি ২০০৭ সালে পুরস্কার বিজয়ী সামাজিক সংগঠন মেরি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।
গত ডিসেম্বরে ডেনিশ টেলিভিশন টিভি২ এক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, দেশটির রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে জনপ্রিয় তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন ম্যারি ডোনাল্ডসন। প্রথম স্থানে রানি মারগ্রেথ। এরপরই তার ছেলে ফ্রেডরিক।
এই দম্পতি ১৯ বছর ধরে সুখি বিবাহিত জীবনযাপন করছেন এবং তাদের চার সন্তান আছে।