জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মহান আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে ডাকার শক্তি ছিল না। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। গায়ে ছিল প্রচন্ড ব্যাথা আর জ্বর। শুকনো কাশি লেগেছিল। তেমন রুচি ছিল না খাবারে। এমনিভাবে করোনায় আক্রান্তের দিনগুলির বর্ণনা করছিলেন শেখ মোঃ শহিদুল ইসলাম। খুলনায় তিনি দীর্ঘদিন থাকলেও বর্তমানে বসবাস করেন ঢাকার বসুন্ধরায়।
মঙ্গলবার খুলনা গেজেটকে তিনি জানান, ৩ জুলাই খুব ভোরে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করেন। নামাজের পর ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম থেকে ওঠার পর শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করেন শহিদুল ইসলাম। সাথে কাশি শুরু ও জ্বর অনুভূত হয়। এর আগে ৩০ জুন তিনি বসুন্ধরা এলাকায় কোভিড টেস্ট করেন। ওইদিন বেলা ১২ টায় তাকে ম্যাসেজ’র মাধ্যমে জানানো হয় তিনি করোনায় পজিটিভ।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে থাকেন তিনি। পরে জ্বর, কাশি ও গলা ব্যাথার মাত্রা বেড়ে গেলে তিনি ঢাকায় শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর তিনি জানতে পারেন বড় ছেলেও করোনায় আক্রান্ত। দু’জনই একই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এক পর্যায়ে তার অক্সিজেনের মাত্রা প্রথম দু’দিন ওঠা নামা করে। শ্বাস কষ্ট প্রকট আকার ধারণ করলে ডাক্তাররা তাকে পর্যবেক্ষণে রাখেন। ১৯ দিন হাসপাতালে থাকার পর তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।
হাসপাতালের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি কেঁদে ফেলেন। নিকট আত্মীয়দের কাছে দেখতে না পেয়ে মন খুব খারাপ থাকতো। ফুসফুস বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল তার। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শপত্র সঠিকভাবে গ্রহণ করায় তিনি এখন অনেকটা সুস্থ। তবে শরীরের নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে তার। শারীরিক দূর্বলতাতো আছেই, সেই সাথে ক্ষুধা মন্দা ও পুরোনা ব্যাধিগুলো যোগ হয়েছে।
করোনা আক্রান্ত হয়ে এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন নগরীর পূর্ব বানিয়াখামার চৌধুরী গলির বাসিন্দা শামসুল আলম তিতু বিশ্বাস। এপ্রিল মাসের ৩ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত তিনি গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ছিলেন। হঠাৎ সকাল থেকে শরীরে প্রচন্ড তাপমাত্রা আর কাশি। কাশির প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় একসময়ে তার শ্বাস কষ্ট বৃদ্ধি পায়। পরিবারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। এরপরও জ্বর, কাশি ও গায়ে ব্যাথা না কমলে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওইদিন রাতে ভর্তি হন। এরপর ডাক্তার সম্পূর্ণ শরীরের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ফুসফুসের ৩৫ ভাগ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। ওই রাতেই ডাক্তারের পরামর্শে তাকে আইসিইউ সাপোর্টেড এ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেওয়া হয়। এর আগে খুলনা তার নমুনা টেষ্ট করা হয়। ঢাকায় গিয়ে জানতে পারেন তিনি করোনা পজেটিভ। ঢাকার ল্যাব এইডে চিকিৎসা নেন। ১১ দিন চিকিৎসা শেষে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন।
হাসপাতালের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, যখন শ্বাস কষ্ট উঠেছিল তখন চারিদিকে অন্ধকার দেখছিলেন। অক্সিজেন লেভেল কমে গিয়েছিল। খুলনায় ডাক্তাররা আইসিইউতে নিতে চেয়েছিলেন। অক্সিজেনের অভাব দেখে পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় নিয়ে যান। লাশের পর লাশ দেখে মনে হতো ‘এইবার বুঝি আমার পালা’।
সুস্থ হওয়ার পরে শারীরিক দূর্বলতায় ভুগছেন তিনি। ক্ষুধা নেই। মনের জোর ও স্মরণ শক্তি কমে গেছে।
শুধু শহিদুল ইসলাম ও তিতু বিশ্বাস নয়, এরকম অভিজ্ঞতা অনেকেরই। করোনার ভয়াবহতার দিনগুলির কথা মনে করতে গিয়ে সকলকে সর্তক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে।
খুলনা গেজেট/এএ