বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, গত সাড়ে ১৫ বছর ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ তাদের মনের কথা বলতে পারেনি। বিরোধীদলের তিনজনকে একসাথে কথা বলতে দেখলে পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে সন্ত্রাস বিরোধী মামলা দেয়া হতো। সারা দেশে ফ্যাসিবাদের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল
তিনি বলেন, সরকারের ভিতরে ও বাইরে যারা ফ্যাসিবাদের দোসর লুকিয়ে আছে তাদেরকে চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে। বাংলাদেশের মাটিতে আর ফ্যাসিবাদের উত্থান হতে দেয়া হবে না। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ৩টায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর সরকারি এইচ.সি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শ্যামনগর উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাঃ ইজ্জত উল্যাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, সাবেক এমপি কাজী নজরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল, জেলা নাবেয়ে আমীর শেখ নুরুল হুদা, জেলা সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমান, সনাতন ধর্মাবলম্বী সন্দীপ কুমার মন্ডল প্রমূখ।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের নামের ষড়যন্ত্র করে শেখ হাসিনার সরকার গঠন করেছিল। সেই প্রহসনের নির্বাচন ছিল মইনুদ্দিন -ফখরুদ্দিন ও ভারতীয় “র’ পাতানো নির্বাচন। ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার মতিউর রহমান নিজামী সহ জামায়েত নেতাদের নামে মিথ্যে মামলা দিয়ে ১১ জন নেতার কাউকে ফাঁসি দিয়ে, কাউকে জেলখানায় হত্যা করা হয়েছে। তারা জামায়াতের নেতাকর্মীকে হত্যা করে দেশ থেকে জামায়েত ইসলামীকে নির্মূল করতে চেয়েছিল। জামায়েত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে যারা মিথ্যে মামলা, সাক্ষী ও বিচার করেছিল তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
প্রধান অতিথি আরও বলেন, শাপলা চত্বরে ঘুমন্ত মানুষের উপর গুলি করে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। আজকের এই কর্মী সম্মেলন থেকে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ জানাবো শাপলা চত্বরে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিচার করতে হবে। বিডিআর হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত খুনিরা আড়ালে আড়ালে রয়ে গেছে। ওই ঘটনার প্রকৃত খুনিদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। জুলাই বিপ্লবে দুই হাজারের বেশি মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের দায়ে ইতিমধ্যে শেখ হাসিনাসহ দোষীদের ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছে। বিচারের রায় অবিলম্বে ঘোষণা করতে হবে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে সকল দোষীদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে বিচারের রায় কার্যকর করতে হবে।
তিনি অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিরোধীদলের তিন-চারটা খুনি মামলার আসামিরা মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো জেলে আছে। অবিলম্বে এটিএম আজাহারুল ইসলামকে মুক্তি দিতে হবে। এই দাবি শুধু জামায়াতের নয় বাংলাদেশের মুক্তিকামি ১৮ কোটি মানুষের দাবি। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, অবিলম্বে এটিএম আযহারুল ইসলামকে মুক্তি না দিলে আপনারা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।
রফিকুল ইসলাম খান আরও বলেন, দেশে যেনতেন কোন নির্বাচন মানুষ মানবে না। দীর্ঘ ২৩ /২৪ বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। আবু সাঈদ ও মুগ্ধরা মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিয়েছে। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যতটুকু সংস্কার করার দরকার সেটুকু করে একটি ফ্রী ফেয়ার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের করা ভোটার তালিকা থেকে ২কোটি ভুয়া ভোটার বাদ দিতে হবে।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামী বর্তমান বাংলাদেশে সবচেয়ে সুশৃঙ্খল ও সুগঠিত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জনগণের আস্থার প্রতীক হিসেবে আজ দাঁড়িয়ে গেছে। জামাতকে যদি মানুষ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয় তাহলে আমরা রাজা হবো না দেশের মানুষের সেবক হবো।
খুলনা গেজেট/ টিএ