খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা

জনরোষ সামাল দিতে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণে রাজি গোতাবায়া

আন্তর্জা‌তিক ডেস্ক

দেশের টালমাটাল অর্থনীতি ও তার ফলে সৃষ্ট জনরোষ সামাল দিতে অবশেষে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে তার বড়ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসেকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণে রাজি হয়েছেন। পাশাপাশি, একজন নতুন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব সর্বদলীয় সরকার গঠনের পক্ষেও মত দিয়েছেন তিনি।

শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান জোট সরকারের অন্যতম শরিক দল ফ্রিডম পার্টির নেতা মাইথ্রিপালা সিরিসেনার বরাত দিয়ে শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অপসারণ ও সর্বদলীয় সরকার গঠনে গোতাবায়া রাজাপাকসে শিগগিরই পার্লামেন্টের বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন বলেও জানা গেছে। শ্রীলঙ্কার কমিউনিস্ট পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা ও এমপি বীরসুমনা বীরাসিংহ সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকেও অবশ্য এ তথ্য জানা গেছে। দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যে পার্লামেন্টের বিরোধী দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে একটি সর্বদলীয় মন্ত্রিপরিষদ গঠন বিষয়ক খসড়া প্রস্তাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিরোধী দলগুলো এই খসড়া পাঠালে তার ভিত্তিতে দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন প্রেসিডেন্ট।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়া ও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়া এই সংকটের প্রধান কয়েকটি কারণ।

২০২২ সালে শ্রীলঙ্কাকে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ শোধ করতে হবে, অথচ দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে মাত্র ১৫ কোটি ডলার, যা তাদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়ায় বাইরের দেশ থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারছে না শ্রীলঙ্কার সরকার। ফলে, ভয়াবহভাবে ব্যহত হচ্ছে দেশটির বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং গত বেশ কিছুদিন ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ।

বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকটের সঙ্গে যোগ হয়েছে দ্রব্যমূল্যর উর্ধ্বগতি। শ্রীলঙ্কার পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে দেশটিতে খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি।

এই পরিস্থিতিকে অর্থনৈতিক সংকটে অতিষ্ঠ শ্রীলঙ্কার সাধারণ জনগণ গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে সরকার পতন আন্দোলন শুরু করেন। জনগণের ক্ষোভ প্রশমন করতে গত ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসে ব্যতীত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের ২৬ সদস্যের সবাই একযোগে পদত্যাগ করেন।

তবে তারপরও থামছে না জনতার বিক্ষোভ। তাদের দাবি, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী— উভয়কেই পদত্যাগ করতে হবে।

এদিকে, নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জরুরি পণ্য আমদানি করতে গত ২৭ এপ্রিল শ্রীলঙ্কাকে ৬০ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই সহায়তার ৪০ কোটি ডলার দ্রুত ছাড় দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও শ্রীলঙ্কার সরকারকে দিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম আর্থিক সহায়তা ও ঋণদানকারী সংস্থা।

এছাড়া চলতি মাসের শুরুতে আর্থিক সহায়তা পেতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে শ্রীলঙ্কা। তবে আইএমএফ জানিয়েছে, সহায়তা পেতে হলে প্রথমে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে হবে।

ভারত ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কাকে ১৯০ কোটি ডলার দিয়েছে। এর বাইরে জ্বালানিসহ নিত্যপণ্য আমদানির জন্য আরও ১৫০ কোটি ডলারের তহবিল পেতে দিল্লির সঙ্গে কথা বলছে কলম্বো।

পাশাপাশি চীনের কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলারের একটি সিন্ডিকেটেড ঋণ পাওয়ার জন্যও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির সরকার।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!