যশোরের চৌগাছায় ১০ বছরে দ্বিগুণ টাকা লাভ দেয়ার লোভ দেখিয়ে প্রায় কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে স্থানীয় দুটি ভূয়া বেসরকরি সংস্থা (এনজিও)। প্রথমে পিডো পরে আড়পাড়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার নামে উপজেলার জগদীশপুর ও ফুলসারা ইউনিয়নের ১০ থেকে ১৫টি গ্রামের পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের প্রায় এক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে ওই দুটি এনজিও।
জানা যায়, উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের মাড়ুয়া, আড়পাড়া, কান্দি এবং ফুলসারা ইউনিয়নরে সৈয়দপুর, কোটালিপুর, রায়নগর, চারাবাড়িসহ ১০ থেকে ১৫টি গ্রাম থেকে সঞ্চয় ও ডিপিএস-এর নামে “১০ বছরে দ্বিগুন” টাকার লোভ দেখিয়ে এই টাকা সংগ্রহ করে এনজিও দুটি।
জগদীশপুর ও ফুলসারা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক গ্রাহকের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার ওই উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের আড়পাড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায় বাজারের একটি দোকান ঘরে ‘আড়পাড়া সমাজ কল্যান সংস্থা’ নামে একটি সাইনবোর্ড ঝুলছে। তাঁদের প্রধান কার্যালয় হিসেবে যশোর শহরের সমবায় মার্কেট (মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটি প্রাঃ অনুমোদিত) লেখা রয়েছে। সাইনবোর্ডওয়ালা বন্ধ ঘরটির সামনে জড়ো হয়েছেন বেশ কিছু নারী পুরুষ। তাঁদের অভিযোগ গত কয়েক বছর ধরে সংস্থাটি তাঁদের কাছ থেকে সঞ্চয় ও ডিপিএস জমার কথা বলে টাকা নিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে তাঁদের সাথে কোনভাবে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। স্থানীয়ভাবে সংস্থাটির পক্ষে গ্রামের পারভীনা খাতুন নামে এক নারী সঞ্চয় ও ডিপিএসএর টাকা আদায় করতেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯ সালে পল্লী অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থা পিডো উপজেলার দুটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। সেসময় ফুলসারা ইউনিয়নের সলুয়া বাজারেও তাদের অফিস ছিল। পরে আড়পাড়া বাজারে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থকে। বছর পার না হতেই সেই নাম পরিবর্তন হয়ে একই ভবনে “আড়পাড়া সমাজ কল্যান সংস্থা” নামে অফিসটির নাম পরিবর্তন হয়ে যায়। সংস্থা দুটির নামে প্রায় ৩বছর সঞ্চয় ও ডিপিএস কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। সংস্থাটির অফিসের সাইনবোর্ড এবং স্থানীয়দের সংগ্রহে থাকা সংস্থা দুটির অর্থ সংগ্রহের রশিদ ও টাকা জমা নেওয়ার বইতে পিডো’র ঠিকানা যশোর, রূপদিয়া, সদর যশোর। স্থাপিত ১৯৯৮ ইং লেখা আছে। এছাড়া ‘আড়পাড়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা’র সাইনবোর্ডে অফিসের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা যশোর সমবায় মার্কেট এবং নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নাসিমা খাতুন তিথি’র নাম লেখা আছে। সংস্থা দুটি তিন বছরে স্থানীয়দের কাছ থেকে সঞ্চয় ও ডিপিএস কার্যক্রমের নামে প্রায় ১ কোটি টাকা গ্রহণ করেছে। এ এলাকায় তাদের পাঁচশতাধিক গ্রাহক রয়েছে।
চৌগাছা ও যশোর সমাজসেবা কার্যালয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ‘পিডো’ বা ‘আড়পাড়া সমাজ কল্যান সংস্থা’ নামে সরকার অনুমোদিত কোনো সংস্থার অস্তিত্ব নেই। অনুমোদন ছাড়াই তারা চৌগাছার এ অঞ্চলে মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এমনকি যশোর সদরের রূপদিয়া বা যশোর শহরের সমবায় মার্কেটেও এই সংস্থার কোনো অফিস খুজে পাওয়া যায়নি। তবে পিডো’র পক্ষে ওই অঞ্চলের প্রথম মাঠ কর্মী পারভিনা খাতুন বলেন.‘পিডো’র সরকারি অনুমোদন ছিল। আমি রূপদিয়াতে ওই সংস্থার ৫দিনের ট্রেনিং নিয়েছি। তবে পরে অফিসটি ভেঙে গেছে।
আড়পাড়া বাজারে ওই সংস্থার অফিসের ঘরের মালিক বাবলুর রহমান বলেন, শুধু গ্রাহকদের টাকা নয় আমার ৭ মাসের ঘর ভাড়া না দিয়ে পালিয়েছে তাঁরা। তিনি আরো জানিয়েছেন, এ অঞ্চলে পিডো’র পক্ষে পাশের গ্রামের পারভিনা নামে একজন প্রথম ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। পরে তারাই নাম পরিবর্তন করে আড়পাড়া সমাজ কল্যান সংস্থা নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ওই অফিসে একই কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। এ বিষয়ে পিডোর সেই মাঠ কর্মী কান্দি গ্রামের পারভিনা জানিয়েছেন, দেড় বছর আগে পল্লী অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংস্থা পিডো (চঊউঙ) ছেড়ে চলে এসেছি। তখন পিডোর নির্বাহী পরিচালক ছিলেন যশোর রূপদিয়ার মাসুদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি। তিনি গ্রাহকদের টাকা পয়সা মেরে ভারতে পালিয়ে যান। ভূক্তভোগীরা জানিয়েছেন পিডোর মাঠ কর্মী পারভিনা এবং খাদিজা চলে যাওয়ার পরে পারভিনার চাচাতো ভাই আড়কান্দি গ্রামের কাশেমের ছেলে সোহাগ হোসেন এবং কালিগঞ্জ থানার গৌরীনাথপুরের স্বপ্নারানী সংস্থার টাকা সংগ্রহ করতেন।
সোহাগ হোসেন জানান, যশোরের আবু সাঈদ নামে একজন ‘আড়পাড়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা’র এমডি এবং তার স্ত্রী নাসিমা খাতুন তিথি নির্বাহী পরিচালক। তবে পরে জেনেছি তাদের সরকারি কোনো অনুমোদন নেই এবং যশোরের কোথাও তাঁদের কোনো অফিস নেই।
এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মেহেদি হাসান বলেন, আড়পাড়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা নামে কোনো সংস্থার নাম আমাদের তালিকায় নেই।
জগদিশপুর ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান মাষ্টার সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে ওই গ্রামের পারভিনের বাবা এসেছিলেন। আমি তাকে অফিস খুলে ভূক্তভোগিদের টাকা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বলেছি ।
খুলনা গেজেট/ টি আই