খুলনার চালনা পৌরসভা নির্বাচনের ভোট সকাল আটটা থেকে শুর হয়। সকালে ভোট গ্রহণের শুরুতে কেন্দ্রগুলোয় লোকজনকে লম্বা সারিতে দেখা গেছে। বিশেষ করে নারীদের লাইন ছিল অনেক দীর্ঘ। তবে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হওয়ায় অনেকে বুঝে উঠতে পারছেন না। ফলে, ভোট চলছে ধীরগতিতে।
২ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্র চালনা কেসি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লম্বা লাইনে ভোটররা দাঁড়িয়ে ছিলেন। ১ হাজার ৬০০ ভোটারের ওই কেন্দ্রে প্রথম একঘন্টায় ৯৪ টা ভোট পড়েছিল।
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটার প্রিতিলতা রায় বলেন, সংসারের কাজ রেখে ভোট দিতে এসেছি। ভোট দিয়ে ধান কাটতে যেতে হবে। তাই সকাল সকাল আসলাম। তবে এখন দেখছি লম্বা লাইন।
ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসা মোহনলাল বিশ্বাস বলেন, ভীড় এড়ানোর জন্য আগে এসেছিলাম। লাইন চলছিল না। তবে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে সমস্যা হয়নি। ব্যালটের চেয়ে সোজা। তবে অনেকে এই বিষয়ে নতুন হওয়ায় ঝামেলা হচ্ছে। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র চালনা মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা জোহুরা বেগম বলেন, এক ঘণ্টা ধরে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। তবে লাইন এগোচ্ছে না।
ওই কেন্দ্রের বাইরে নারী-পুরুষ ভোটারের দীর্ঘ লাইন। প্রার্থীদের লোকজন কেন্দ্রের বাইরে টানানো ইভিএম ব্যানার দেখিয়ে ভোটারদের ভালো করে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। বুথের মধ্যে নির্বাচন কর্মকর্তারা অনেক ভোটারদের সাহায্য করছেন। ওই কেন্দ্রের একটি বুথের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বিকাশ কুমার মণ্ডল খুলনা গেজেটকে বলেন, অনেকে বুঝতে না পেরে ডাকছেন। আমরা প্রক্রিয়াটা দেখিয়ে দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ভোটারদের উপস্থিতি অনেক ভালো তবে ভোট চলছে ধরিগতিতে। ৯৩৯ জন ভোটারের ওই কেন্দ্রে প্রথম দুই ঘন্টায় ১৬০টা ভোট পড়েছে। সকাল পৌঁনে ১১ টায় শিশু কানন প্রি-ক্যাডেট স্কুল কেন্দ্রে গিয়েও লম্বা লাইন চোখে পড়ে। বয়স্ক ভোটারদের কোলে করে নিয়ে এসছেন স্বজনরা।
ওই কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়ানো ভোটার রূপবান বেগম (৬৫) বলেন, সকাল নয়টার দিকে না খেয়ে ভোট দিতে আসছি। এখনও লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। লাইনতো টানে না। ওই কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা প্রণয় রঞ্জন মণ্ডল বলেন, ১ হাজার ৬৯৯ জন ভোটারের এই কেন্দ্রে সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রায় ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ২৬০টা ভোট পড়েছে।
সকাল ১১ টা পর্যন্ত ১৫টা ভোট বুথে গিয়ে দেখা গেছে, সব বুথেই নৌকা, ধানের শীষ এবং জগ প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্ট আছে। বাইরেও উৎসবমুখর পরিবেশ।
সকাল সাড়ে আটটার দিকে শিশু কানন প্রি-ক্যাডেট স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সনত কুমার বিশ্বাস। ভোট দেওয়ার পর তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, ভোটের পরিবেশ নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট। জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।
বিএনপির প্রার্থী মো. আবুল খয়ের খাঁন অসুস্থ থাকায় খুলনা নগরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এবার তিনি নিজে প্রচারনায় নামতে পারেননি। ভোট দিতেও আসতে পারছেন না। তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট মোজাফফর হোসেন বলেন, আমাদের লোকদের হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। অনেক কেন্দ্রে এজেন্টদের চাপ দেওয়া হচ্ছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল সকাল আটটার দিকে চালনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, বয়স্ক লোকদের সঙ্গে আনসার বা পুলিশের লোক যাচ্ছে। এতে সমস্যা হচ্ছে। বয়স্ক লোকদের স্বজনদের যেতে দেওয়া হোক। এছাড়া ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্রে মাসুম নামের একজন নৌকার এজেন্ট বোতামে চাপ দিয়ে দিচ্ছেন। সারাদিন ভালো ভোট হলে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোট কেন্দ্রে পিসাইডিং কর্মকর্তা প্রবীর রায় খুলনা গেজেটকে বলেন, প্রার্থীর কাছ থেকে অভিযোগ পায়নি। তবে ওই এজেন্ট নিয়ে অন্যরা আপত্তি জানানোয় তাঁকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
বেলা ১১টার দিকে খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী সাংবাদিকদের বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট চলছে। প্রত্যন্ত এই অঞ্চলেও ইভিএমে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। সব কেন্দ্রে আমরা ঘুরেছি। এখনও পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর আমাদের কাছে নেই।
খুলনা গেজেট/ এআর / এমএম