চাকুরী থেকে অবসরের ৪ বছর অতিবাহিত হলেও অবসরভাতাসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পাননি খুলনার রাষ্টায়ত্ব প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ণ জুট মিলস লিঃ এর স্থায়ী শ্রমিক মোঃ হাসেম বিশ্বাস। বিজ্ঞ শ্রম আদালতের রায় অনুযায়ী রিলিভার পদে বহাল হিসেবে অবসরকালিন ভাতা ৪০ দিনের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ থাকলেও মিল কর্তৃপক্ষ সে নির্দেশনা উপেক্ষা করে উল্টো হাসেম বিশ্বাসকে হয়রানি করছেন। অপরদিকে অর্থাভাবে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটানো ওই শ্রমিক পরিবার প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী, পাটমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ফুলতলার দামোদর কারিকরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত ইজার আলী বিশ্বাসের পুত্র মোঃ হাসেম আলী বিশ্বাসের দায়ের করা শ্রম আদালত, খুলনার মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৮ সালের ২৮ আগস্ট রাষ্টায়ত্ব প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ণ জুট মিলস লিঃ এর তাঁত বিভাগের ‘ক’ পালায় বড় তাঁতী হিসেবে স্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রয়ারী উক্ত বিভাগের রিলিভার মোঃ মোজাম্মেল হকের অবসারান্তে জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে মিলের উৎপাদনের স্বার্থে মোঃ হাসেম আলী বিশ্বাসকে ইজেএম/শ্রম/তাঁত/২৯৬/ক/২/২০০/১০ নং স্মারকে তৎকালিন উপ-ব্যবস্থাপক (শ্রম কল্যাণ) স্বাক্ষরিত একই বছরের ৫মে থেকে রিলিভার পদে পদোন্নতি দিয়ে চিঠি প্রদান করেন। কিন্তু রিলিভার পদে চাকুরীর ১৩ মাস পর ২০১১ সালের ৩০ মার্চ ইজেএম/শ্রম/তাঁত/২/২৫১/১১ স্মারকে মিল কর্তৃপক্ষ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রিলিভার পদ হতে পুনরায় তাঁত পদে পদোবনতির চিঠি প্রদান করেন এবং উক্ত পদে গ বিভাগের তাঁতী জনৈক আঃ গফফার গাজীকে নিয়মবর্হিভূতভাবে পদোন্নতি প্রদান করেন। পদোনবনতির চিঠি পেয়ে শ্রমিক মোঃ হাসেম বিশ্বাস মিল কর্তৃপক্ষের বেআইনি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শ্রম আদালত, খুলনা বিভাগে মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলার নথি পর্যালোচনা করে মিল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বেআইনিপূর্বক পূর্ণ মজুরী ও আনুসাঙ্গিক সুবিধাসহ রিলিভার পদে পুনঃবহাল করার নির্দেশ দেন।
অপরদিকে বিজ্ঞ আদালতের রায় মিল কর্তৃপক্ষের বিপক্ষে যাওয়ায় মিলের প্রকল্প প্রধান ঐ রায়ের বিরুদ্ধে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল (নং-৩০১/২০১২) করেন। শ্রম আপিল ট্রাইবুনাল এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শামসুল হুদা পুর্বের রায় বহাল রেখে (অর্ডার নং-১৫, ২৯/০৯/২০১৫) আপিলটি খারিজ করে দেন। ফলে পূর্বের রায় অনুযায়ী মোঃ হাসেম বিশ্বাসকে স্বপদে বহালের নির্দেশনা বহাল থাকে। ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ায় নিয়মতান্ত্রিকভাবে ১০/০৬/২০১৭ সালে শ্রমিক হাশেম বিশ্বাস অবসরে যান। কিন্তু শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল এর রায়ে হেরে গিয়ে প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে মিল কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ ৪ বছরেও হাসেম বিশ্বাসের অবসরকালিন পাওনাদি পরিশোধ করছে না বলে তার অভিযোগ।
এ বিষয়ে মিলের প্রকল্প প্রধান ড. জি এম মাহাবুবুর রশিদ জুলফিকার এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি লেবার অফিসারের সাথে কথা বলতে বলেন।
লেবার অফিসার সুমন সরকার বলেন, হাসেম বিশ্বাসের পাওনা পরিশোধে মিল কর্তৃপক্ষ আন্তরিক। তবে বিজেএমসি’র নির্দেশনানুযায়ী শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল এর রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালতে রায়ের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। রায় পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শ্রমিক হাসেম বিশ্বাস বলেন, পদোবনতির বিষয়ে দুই আদালতেরই রায় আমার পক্ষে থাকলেও মিল কর্তৃপক্ষ আমার পাওনা না দিয়ে উল্টে হয়রানি করছে। এমনকি আমার পাওনার টাকার হিসাব চাইতে গেলে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। অর্থাভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি প্রধানমন্ত্রী, পাটমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
খুলনা গেজেট/ টি আই