টানা আট মাস অনাবৃষ্টি। এপ্রিলের প্রথমে কালবৈশাখীর ঝাপটা। জানুয়ারির পর থেকে লবণাক্ততা বৃদ্ধি। সহনশীল মাত্রার চেয়ে বোরো ক্ষেতে দু’ডিগ্রী তাপমাত্রা বেশী। ফলে এ মৌসুমে চার কারণে বোরো আবাদ চাষীর অনুকূল ছিল না। ধানে তিন শতাংশ চিটা পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য খুলনা ও বাগেরহাটে এবারে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।
সেপ্টেম্বর ও এপ্রিল পর্যন্ত দক্ষিণ অঞ্চল জুড়ে অনাবৃষ্টি। বোরিং এর পানি দিয়ে সতেজ রাখতে হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটজনিত কারণে সেচ যন্ত্রে ডিজেল ব্যবহার করতে হয়। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়ে। কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেশী ছিল। রোপনের পর মাজড়া ও পাতা মোড়ানো পোকা আক্রমণ করে। মৌসুমের বড় একটি সময় নন ইউরিয়া সারের সংকট দেখা দেয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বিগত বছরগুলোতে বোরো মৌসুমে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এবারে বীজতলা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা মেলেনি। পুরো মৌসুমটাই সেচের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। তাছাড়া তাপমাত্রা ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে বোরো আবাদের উপযোগী। ২৫ মার্চ এ অঞ্চলের তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ফলে বোরো ক্ষেতে ধানের চিটা বেশী দেখা যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোঃ আতিকুল ইসলাম খুলনা গেজেটকে জানান, গত ৪ এপ্রিল ঝড়ো হাওয়ায় ১১০ হেক্টর জমির বোরো ধান শুয়ে পড়েছে। দাবদাহজনিত কারণে ১৯ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে টানা অনাবৃ্িষ্ট। একই সাথে লবনাক্ততা বেড়েছে। ফলশ্রুতিতে দৌলতপুর, ডুমুরিয়া, ফুলতলা, পাইকগাছা, দিঘলিয়া, বটিয়াঘাটা, দাকোপ ও কয়রা উপজেলায় উৎপাদনে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে।
মৌসুমে খুলনা জেলায় ৬০ হাজার একশ’ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। কর্তৃপক্ষ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে ২ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন। ধান কাটা শুরু হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, অনাবৃষ্টি, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ঝড়ো হাওয়া ও লবনাক্ততার কারণে জেলার চিতলমারীতে ৪২০ হেক্টর জমি বোরো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
চিতলমারী উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের সাথী মন্ডল, রত্না বৈরাগী জানান, ধান কাটার আগে দেখা যাচ্ছে চিটার পরিমাণ বেশী। কৃষি বিভাগ বলেছে, বাগেরহাট জেলায় ৫৫ হাজার ৫শ’ ৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম