কথিত নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পরিচয়ে ছদ্মনাম ব্যবহার করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একের পর এক খুন ও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেই চলেছে। এসব অপরাধীদের হাতে রয়েছে অস্ত্র ও গুলি। যা তারা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহার করছে। সর্বশেষ অভয়নগরের সুন্দলী ইউনিয়নের নবনির্বাচিত মেম্বার উত্তম সরকার হত্যার ঘটনায় নতুন করে আটক তিন চরমপন্থী এসব তথ্য দিয়েছে পুলিশকে।
এরআগে আটক হওয়া পাঁচ চরমপন্থী সন্ত্রাসী হত্যাকান্ডের দায় ও এক লাখ টাকা চাঁদার দাবির ঘটনা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দেয়। চাঁদার টাকা না পেয়েই উত্তমকে হত্যা করা হয় বলে আটককৃতরা জানিয়েছে। যশোরাঞ্চলে ওই চরমপন্থী সংগঠনের তৎপরতা রুখতে, তাদের অস্ত্র ভান্ডারের খোঁজে এবং চক্রের অন্যদের আটকে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গত ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে অভয়নগরের হরিশংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের মাঠে উত্তম সরকারকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে চরমপন্থীরা। এ ঘটনায় অভয়নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর হওয়ায় পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার দ্রুততম সময়ে রহস্য উদঘাটনে গোয়েন্দা পুলিশকে দায়িত্ব দেন। তার নিদের্শনায় ডিবির অফিসার ইনচার্জ রুপন কুমার সরকারের নেতৃত্বে পরিদর্শক শেখ শাহিনুর রহমান, তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম হোসেন ও এসআই মফিজুল ইসলামসহ একটি টিম এই মামলা তদন্তে মাঠে নামেন।
১৫ জানুয়ারি মধ্য রাত থেকে ১৬ জানুয়ারি ভোর পর্যন্ত খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থান ও যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে উল্লেখিত পাঁচ জনকে আটক করা হয়। এরা হচ্ছে, খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘর গ্রামের ইকরামুল গোলদার জুয়েল, অভয়নগরের সুন্দলী গ্রামের প্রজিৎ বিশ্বাস বুলেট, মণিরামপুর উপজেলার সুজাতপুর গ্রামের পল্লব বিশ্বাস সুদিপ্ত, ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর গ্রামের প্রশান্ত মন্ডল ও দিঘলিয়া গ্রামের বিজন কুমার মন্ডল ওরফে বিনোদ। তাদের কাছ থেকে হত্যার মিশনে ব্যবহৃত একটি ওয়ান শুটারগান, তিন রাউন্ড গুলি, দুটি গুলির খোসা, ৬ রাউন্ড কার্তুজ, একটি এয়ারগান, ১টি ককটেল, দুটি মোটরসাইকেলসহ বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার হয়। আটক ৫ জন কথিত নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য বলে পুলিশ জানায়। তারা লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে এ হত্যাকান্ড ঘটায় বলে জানায়।
ওই ৫ জন আটকের পর আরও তথ্য আসে পুলিশের কাছে। তারা জানতে পারে মূল শুটার আটক এড়িয়ে চলছে। ওই তথ্যে তার অবস্থান নিশ্চিত করতে থাকে পুলিশ। স্থান পরিবর্তনের এক পর্যায়ে ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যা থেকে ১ ফেব্রুয়ারি ভোর পর্যন্ত নতুন করে ডিবি পুলিশ অভিযান চালায় মণিরামপুর এলাকায়। অভিযানে আটক হয় উপজেলার পাঁচাকুড়ি গ্রামের সহদেব বিশ্বাসের ছেলে অজয় বিশ্বাস (১৯), পাঁচকাটিয়ার নির্মল পাড়ের ছেলে পলাশ পাড়ে (৩২) ও অভয়নগর উপজেলার কচুয়ার প্রফুল্ল বিশ্বাসের ছেলে সাধন বিশ্বাস (২১)।
এর মধ্যে অজয় বিশ্বাস মেম্বার উত্তম হত্যার মূল শুটার। পুলিশ এদের কাছ থেকে দুটি পাইপগান, দুই রাউন্ড গুলি ও দুটি গুলি খোসা উদ্ধার করেছে। এরা হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে ডিবি পুলিশকে জানিয়েছে, তারাও ‘নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট’ পার্টির সক্রিয় সদস্য। দলীয় ছদ্মনাম ব্যবহার করে তারা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ অস্ত্রগুলি, বিস্ফোরকদ্রব্য ব্যবহার করে হত্যা, চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। তারা অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুরসহ পাশ্ববর্তী জেলায় বিভিন্ন মাছের ঘের দখল, চাঁদাবাজি ও হত্যার ঘটনা ঘটাচ্ছে। মঙ্গলবার জেলা পুলিশ প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এসব তথ্য জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বলেন, উত্তম সরকারের কাছে নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য পরিচয় দানকারী এসব সন্ত্রাসীরা লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। উত্তম কিছু টাকা দিয়েছিলেন, কিন্তু বাকি টাকা না দেয়ায় তাকে হত্যা করা হয়। আগে আটক ৫ জন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য নামধারীরা এই হত্যাকান্ড ঘটায় বলে তারা স্বীকার করে। এছাড়া নতুন করে আটক ৩ জনও নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পাটির সদস্য বলে জানিয়েছে। ওই চক্রের আরো সদস্যকে শনাক্ত ও আটকে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।
খুলণা গেজেট/ এস আই