খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  যাত্রাবাড়িতে ব্যাটারিচালিত অটো রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষে দুই পুলিশ আহত
  জুলাই গণহত্যা : ৮ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক মাসে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ
  বিশ্বকাপ বাছাই : মার্টিনেজের ভলিতে পেরুর বিপক্ষে জয় পেল আর্জেন্টিনা

গুড় পুকুর মেলা থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

হিন্দু ধর্মের স্বর্পদেবী মা মনসা পূজার মধ্যদিয়ে প্রতিবছর বাংলা সনের ভাদ্র মাসের শেষ দিনে সাতক্ষীরায় শুরু হয় ২০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহি গুড় পুকুরের মেলা। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা যৌথভাবে এই মেলার আয়োজন করে। এবছরও সব ধর্মের শ্রেণী পেশার মানুষের পদচারণায় মূখরিত হয়ে উঠেছে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের মেলা প্রাঙ্গণ। প্রতিদিন সকাল ৮ থেকে প্রায় রাত ১২ টা পর্যন্ত মেলায় দর্শনার্থীদের ভীড় লেগেই থাকে।

এবছরও যথা সময়ে মেলা শুরু হলেও মেলাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে মোটা অংকের অর্থ বাণিজ্য। মেলার চেয়ারম্যান নানা অজুহাতে প্রতিদিন দোকানিদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। দোকান ভাড়ার নামে দূর দূরান্ত থেকে আসা দোকানদারদের কাছ থেকে এই টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন। বর্তমানে মেলাটি জমে উঠলেও লোকসান ঠেকাতে বাধ্য হয়ে মার্কেট ছাড়া বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এতে করে বিপাকে পড়েছে মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা।

সোমবার (৯ অক্টোবর) শহরের রাজ্জাক পার্কস্থ গুড়পুকুরের মেলায় ঘুরে দেখা গেছে, এবছরও মেলা প্রাঙ্গণ নানা ধরনের পরসা সাজিয়ে বসেছে তিন শতাধিক স্টল। সকাল ৮টা থেকে প্রায় রাত ১২টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। প্রতিদিন দূর দুরান্ত থেকে ভীড় জমাচ্ছে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধরা। তবে ঐতিহ্যের এ মেলায় আগে দেখা যেতো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরী বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র, কাঠের ফার্নিচার ও কুটির শিল্পের বিভিন্ন পন্য। কিন্তু এগুলো এবারের মেলায় না থাকায় অনেকে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ মেলায় নিন্ম মানের থ্রি-পিচ, বাচ্চাদের খেলনা এবং ইমেটেশনের গহনা ও প্লাস্টি সামগ্রীতে ছয়লাব। মানহীন পণ্য আর চড়া দামের কারণে ক্রেতা সাধারণ না কিনেই ফিরে যাচ্ছে। ত্রেতাদের অভিযোগ মার্কেট ছাড়া মেলায় অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে নিম্ন মানের জিনিসপত্র।

মেলায় ঘুরতে ও কেনাকাটা করতে আসা ত্রিশমাইলের জাকির হোসেন, লাবসার সাগর হোসেন ও পাটকেলঘাটার লিটন ও সাতক্ষীরার হাফিজ ও কাটিয়া এলাকার শিউলি আক্তার জানান, বাইরের মার্কেটে যে সকল পণ্যের দাম ৭০ থেকে ১০০ টাকা। সেই একই পণ্য মেলায় দাম হাকানো হচ্ছে তিন থেকে চারগুন বেশী। এছাড়া মেলায় এবার মানহীন পণ্যের ছড়াছড়ি। ফলে বাধ্য হয়ে কোন কিছু না কিনেই ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।

তবে ঢাকা-খুলনা, যশোর-নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা স্টল মালিকরা বলছেন, ৮ থেকে ১০ ফুট আয়তনের একটি স্টলের ফ্লোরে বিছানো ইট ভাড়া, দোকান ভাড়া, কারেন্ট বিল তার পরে আবার দোকানের উপরের ছাউনি ভাড়া সব মিলিয়ে প্রতিটি দোকানভেদে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা করে প্রতিদিন গুনতে হচ্ছে মেলার চেয়ারম্যান মানিক শিকদার ও তার ছেলে হাসানকে। বেচা বিক্রি হোক আর না হোক মেলার আয়োজক কমিটিকে টাকা গুনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। লোকসান ঠেকাতে যে কারনে একটু চড়াদামে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। আর এই বাড়তি দামের কারণে ক্রেতা-সাধারণের ভীড় হলেও অধিকাংশরা পণ্য না কিনে শুধু দাম শুনেই ফিরে যাচ্ছে।

এদিকে শিশুদের বিনোদনের জন্য মেলায় রয়েছে, ট্রেন, নাগরদোলা-হানি সুইং, ইলেকট্রনিক ভাসমান নৌকাসহ বিভিন্ন ধরনের রাইড। শিশুদের সখ ও বিনোদন মিটাতে বিভিন্ন রাইডে চড়তে গেলে মাথা পিছু ৫০ থেকে ১০০ টাকায় টিকিট ক্রয় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অভিভাবকদের। টিকিটের মূল্য অতিরিক্ত ধরা হয়েছে যা অযৌক্তিক বলে মনে করছেন তারা। এই অবস্থায় মেলার চেয়ারম্যান মেয়াদ আরো বাড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।

অপরদিকে মেলায় অবস্থিত তিন শতাধিক স্টল মালিকদের কাছ থেকে আয়োজক কমিটি’র চেয়ারম্যান মানিক শিকদারসহ তার নিয়ন্ত্রিত একটি প্রভাবশালী মহল প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এতে করে ক্ষুব্দ এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা। তবে মেলা আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান মানিক শিকদারের দাবি দোকানের নীচে বিছানো ইট, ঘরের ছাউনি ও বিদ্যুৎ বিল এবং জেনারেটর ভাড়া বাদে প্রতিদিন দোকান প্রতি ৪শ’থেকে ৫শ. টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

এক সময় পলাশাপোল এলাকার বট তলা থেকে শহরব্যাপী বিস্তৃত ছিল গুড় পুকুরের মেলা। কিন্তু এখন রাজ্জাক পার্কে মেলাটি সীমাবদ্ব থাকায় বিপাকে পড়েছে মেলা প্রাঙ্গণে অবস্থিত পার্ক মসজিদসহ মেলা সংলগ্ন সদর থানা জামে মসজিদ ও মুনজিতপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ সংলগ্ন জামে মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিরা। একই সাথে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মেলার মধ্যেই অবস্থিত কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি, গনগ্রন্থগারের পাঠকরা ছাড়াও পাশেই অবস্থিত নবারুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি মহিলা কলেজ, মহিলা কলেজের হোস্টেল ও পিএন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষরা।

মেলায় সর্বক্ষন হৈ-হুল্লর আর মাইকে গান-বাজনার কারণে শ্রেণি কক্ষে পাঠদান বাধাগ্রস্থ্য হচ্ছে। রাতে মহিলা কলেজের হোস্টেলের মেয়েরা লেখা-পড়ায় মনোনিবেষ করতে পারছেনা। এজন্য মেলাটির মেয়াদ না বাড়িয়ে যথা সময়ে শেষ করার দাবি জানিয়েছেন উল্লেখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গত ২২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন হওয়া মেলা চলবে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। মেলার মেয়াদ আরও যেন বৃদ্বি করা না হয় সে জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, নামাজের সময় এবং মেলায় রাত ১০টার পরে কোন প্রকার বাদ্য-বাজনা ও মাইকে গান বাজনা না বাজে সে জন্য মেলার চেয়ারম্যানকে নিষেধ করা হবে। এছাড়া মেলার সময় সীমা বৃদ্বির ব্যাপারে তিনি জানান এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সামনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব দুর্গা পূজা। পূজা কেন্দ্রিক মেলার সময় সীমা বৃদ্বি করা যাবে কিনা তা আলোচনার পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!