খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ পৌষ, ১৪৩১ | ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  জাহাজে ৭ খুনে জড়িতদের বিচার দাবিতে সারাদেশে নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতি শুরু
  মারা গেছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং

খুলনা বিভাগের ১৮ উপজেলা : স্বতন্ত্রের মোড়কে ৭৪ ভাগ প্রার্থীই আ.লীগের

এ এইচ হিমালয়

খুলনা বিভাগের ৯টি জেলার ১৮টি উপজেলা পরিষদে প্রথম ধাপে নির্বাচন হচ্ছে। সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে এ সব উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৮৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সবাই নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাবি করেছেন।

তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, স্বতন্ত্রের মোড়কে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৮৪ চেয়ার‌ম্যান প্রার্থীর মধ্যে ৬২ জনই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। এছাড়া একটি উপজেলায় বিএনপি এবং ৮টি উপজেলায় জামায়াত নেতারা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় বাগেরহাট সদর আসনে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নাসির খান বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

নির্বাচন কমিশন থেকে জানা গেছে, প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে ভোট হবে দেশের ১৫০টি উপজেলায়। এর মধ্যে খুলনা বিভাগের ৯টি জেলার ১৮টি উপজেলায় ভোট হচ্ছে। প্রথম ধাপে খুলনা জেলার কোনো উপজেলায় ভোট হচ্ছে না। গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বিভাগের ১৮ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৮৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯০ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বাগেরহাট সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে একজন এবং বাগেরহাট সদর,  কুষ্টিয়া সদর এবং চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একজন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই ৪ প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া অনেকটা সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

এবারের কোনো দলই প্রার্থী ঘোষণা দেয়নি। সব প্রাথীই স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, স্বতন্ত্র নাম দিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বিগত দ্বাদশ সংসদ  নির্বাচনে দেখা যায়, বিএনপিসহ কয়েকটি দল নির্বাচন বর্জন করায়, সংসদীয় আসনগুলো আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা স্বতন্ত্রের মোড়কে প্রার্থী হন। এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পরবর্তীতে ‘ডামি’ প্রার্থী  হিসেবে পরিচিত পায়। এবারের উপজেলা নির্বাচনেও স্বতন্ত্র মোড়কে সেই ডামি প্রার্থীর ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে।

চেয়ারম্যান প্রার্থী  যারা

মেহেরপুর সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এস এম ইবরাহীম শাহীন, সহ সভাপতি আবদুল মান্নান, সদর উপজেলা যুবলীগের সদস্য নিশান সাবের, উপজেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাশেম আলী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনারুল ইসলাম।

মুজিবনগর উপজেলার চেয়ারম্যান পদে ৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন মহাজন ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আমাম হোসেন মিলু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম তোতা, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুল হাসান চাঁন্দু ও ফল ব্যবসায়ী মাহাবুব হোসেন।

মাগুরা

মাগুরা সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৭ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ৭ জনই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। তারা হলেন জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রানা আমির ওসমান, সদর উপজেলা আ’লীগের সহসভাপতি প্রকৌশলী শেখ নবীব আলী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন, জেলা আ’লীগের উপ প্রচার সম্পাদক জাহিদ রেজা চন্দন, কছুন্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আ’লীগের সমর্থক মীর আবদুল কুদ্দুস, জেলা আ’লীগের প্রচার সম্পাদক শেখ মোঃ রেজাউল ইসলাম ও আ’লীগের সমর্থক উত্তম কুমার বিশ্বাস।

শ্রীপুর উপজেলায় ৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এর মধ্যে ৩ জনই আ’লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও আ’লীগের সমর্থক মিয়া মাহমুদুল গনি শাহিন, শ্রীপুর উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এমএম মুতাসিম বিল্লা সংগ্রাম, আ’লীগের সমর্থক শরীয়ত হোসেন মিয়া এবং স্বতন্ত্র খন্দকার আশরার ইলাহী।

চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দু’জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান ও সাংবাদিক এস.কে লিটন।

দামুড়হুদা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নজমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের ৩ নেতা। তারা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান, দর্শনা পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগর টগরের ভাই আলী মুনছুর বাবু, উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী শহিদুল ইসলাম এবং উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক আবু তালেব।

কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তারা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, সদর উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক সুজা উদ্দিন জোয়ার্দার ও স্বতন্ত্র আহাদ আল মামুন।

খোকসা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৭ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তারা হলেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বাবুল আখতার, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আল মাসুম মোর্শেদ শান্ত, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রহিম উদ্দিন খান, তার অনুগত উসমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওহিদুল ইসলাম, রহিম উদ্দিন খানের ছেলে শাওন মাহমুদ খান, ওহিদুল ইসলামের ভাই সাইফুল ইসলাম, ওহিদুল ইসলামের স্ত্রী সালেহা বেগম।

ঝিনাইদহ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিলেন। এর মধ্যে ৬ জন আওয়ামী লীগ ও একজন জামায়াত নেতা।

প্রার্থীরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর সিদ্দিকী ঠান্ডু, বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শিবলী নোমানী, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন সোহেল, উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, কষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. রাশেদ শমসের, জাতীয় শ্রমিক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সহ-সভাপতি ইমদাদুল হক সোহাগ, কালিগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা ওলিউর রহমান।

ঝিনাইদহের সদর উপজেলায় ৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গোলাম ছরওয়ার খান সউদ, ভাইস চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা নূর এ আলম বিপ্লব, পৌর আ’লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান মাসুম, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কে এম রশীদুল আলম এবং উপজেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান।

যশোর

যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলায় ৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দেন। তারা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু, যশোর জেলা যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি নাজমা খানম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিকাইল হোসেন এবং উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক ফজলুল হক।

কেশবপুর উপজেলায় ৮ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তারা হলেন কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার সাদেক, দপ্তর সম্পাদক মফিজুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক কাজী মুজাহিদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মাহবুবুর রহমান, আব্দুল্লাহ নূর আল আহসান, ওবায়দুর রহমান, এমদাদুল হক এবং যশোর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবদুস সামাদ।

সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলায় মনোনয়রপত্র জমা দিয়েছেন ৪ জন। তারা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাঈদ মেহেদী, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মেহেদী হাসান সুমন, স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ রাকিবুল জামান ও সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আজিজুর রহমান।

শ্যামনগর উপজেলায় মনোনয়রপত্র জমা দিয়েছেন ৫ জন।

তারা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক প্রভাষক সাঈদ-উজ-জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়র আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. কৃঞ্চপদ মন্ডল, শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক মাসুদুল আলম দোহা এবং উপজেলা জামায়াতের আমির মো. আবদুর রহমান।

নড়াইল

নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৫ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তারা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপদ ঘোষ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন-অর-রশীদ, সাবেক চেয়ারম্যান ও নড়াগাতি থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামিমুর রহমান ওসি, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সিকদার নাজমুল হক প্রিন্স এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান কায়েস।

বাগেরহাট

বাগেরহাট সদরে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার নাসির উদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তিনি ছাড়া এই উপজেলায় অন্য কোনো প্রার্থী প্রতিদ্বন্দীতা করছেন না।

কচুয়া উপজেলায় ৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর জায়েসী আশরাফি জেমস, বর্তমান চেয়ারম্যান ও কচুয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমা সরোয়ার, রাড়িপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক এস এম মাহফুজুর রহমানের ছেলে মেহেদী হাসান বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক কে এম ফরিদ হাসান।

রামপাল উপজেলায় ৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মোয়াজ্জেম হোসেন, রামপাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জামিল হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ মোঃ আবু সাইদ, রামপাল উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবদুল মান্নান ও জামায়াতের জেলা শাখার সহকারি সেক্রেটারী মোঃ ইকবাল হোসেন।

উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ১৫ এপ্রিল, মনোনয়নপত্র বাছাই ১৭ এপ্রিল, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিলের মধ্যে, আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল, প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল ও ভোট গ্রহণ অনষ্ঠিত হবে ৮ মে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!