খুলনায় এই প্রথম ছেলেকে সার্জারি করে মেয়েতে রূপান্তর করা হয়েছে । বিরল এ সফল সার্জারিটি সম্পন্ন করেছেন খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলোজিস্ট এন্ড এন্ড্রোলজিস্ট ডাঃ নিরুপম মন্ডল। সফল অপরেশন করে নজির সৃষ্টি করলেন তিনি। সার্জারির পর রোগী ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলোজিস্ট এন্ড এন্ড্রোলজিস্ট ডাঃ নিরুপম মন্ডল বলেন, ১৭ বছরের একজন ছেলে। যাকে অপারেশন করে নারীতে রূপান্তর করা হয়েছে। কেননা তিনি জীনগতভাবে পুরুষ। কিন্তু বাইরে নারী। একজন নারীর যেসব বৈশিষ্ট রয়েছে তা সবই রয়েছে তার। কণ্ঠস্বর নারীর মতো। তার চলন বলন, শরীরের গঠন অংগভঙ্গি সবই নারী। সামাজিকভাবে নারী হিসেবে বড় হয়েছে। ১৭ বছর বয়স হয়ে গেছে। এখন সে ও তার অভিভাবকরা চায় নারীতে রূপান্তরিত হতে। এটা করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে।
সার্জারিতে কত সময় লেগেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাড়ে ৪ ঘণ্টা একটানা অপারেশন করা লেগেছে। আশা করি এখন একজন নারীর জীবন যাপন করতে পারবে। কিন্তু একজন পূর্ণাঙ্গ নারীর জীবন পেতে হলে তো মাতৃত্বের স্বাদ পেতে হয়। এটা সে কোনদিন পাবে না। এরপর তাকে আমরা হরমন রিপলেসমেন্ট দেব। কিন্তু তার বাচ্চা হবে না।
তিনি আরও বলেন, ভিক্টোরিয়া নার্সিং হোমে শুক্রবার (১২ মে) এ অপারেশন করা হয়েছে। আমার সাথে অধ্যাপক ডাঃ সামসুন নাহার লাকি, প্রফেসর ডা. দিলীপ কুন্ড সহ আমার কিছু সহযোগী ছিল। দক্ষিণাঞ্চলে এ অপারেশন এটাই প্রথম। রোগী ভালো আছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ১০ বছরে ১টি অপারেশন হতে দেখেছি। এটা সাধারণত কেউ করেন না। অনেকের লজ্জার ভয়ে গোপনে পাশের দেশে আবার যার সামর্থ্য থাকে সে উন্নত দেশে চলে যায়। আমাদের এখানে এ ধরণের অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হওয়া আমাদের জন্য এটা গর্বের।
এ ধরণের অস্ত্রোপচারের খরচ কেমন জানতে চাইলে ডা. নিরুপম মন্ডল বলেন, এ ধরণের অস্ত্রোপচারে প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়।
ছেলে থেকে মেয়েতে রূপান্তরিত হওয়া রোগীর অভিভাবকরা বলেন, সে ছোট বেলা থেকেই মেয়েদের সাথে মিশতো। সবাই তাকে মেয়ে হিসেবে চিনে। আমরা চেয়েছিলাম আমাদের মেয়েটা সমাজে মেয়ে হিসেবে পরিচিত হোক, সংসার করুক। তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পারিবারিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ডেনমার্কে বিশ্বে প্রথম সফলভাবে লিঙ্গ পরিবর্তনের সার্জারিটি হয় ১৯৫২ সালে। জর্জ জোর্গেনসন নামের সাবেক এক মার্কিন সৈন্যে লিঙ্গ পরিবর্তন করে পরিণত হন হলিউডের তত্কালীন সময়ে পরিচিত মুখ ক্রিস্টিন জোর্গেনসনে। তবে সামাজিক প্রতিরক্ষা ও ব্যক্তিগত আকাঙ্খার জের ধরেই লিঙ্গ পরিবর্তন করার দাবিকে মানতে নারাজ বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, সামাজিকভাবে প্রভাবিত ফ্যাক্টরগুলোর চেয়ে মানুষের জন্মের আগে জিন ও হরমোন দ্বারা সৃষ্ট জৈব রাসায়নিক সিগন্যাল লিঙ্গ পরিবর্তন আকাঙ্খার উপর বেশী প্রভাব ফেলে।
খুলনা গেজেট/ এসজেড