খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ
  আজ থেকে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ শুরু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট

খুলনায় বিএনপির সমাবেশে পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনায় বিএনপির সমাবেশে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারগ্যাস ছোড়া হয়। এতে বিএনপির অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ ১০ জনকে আটক করেছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার বিকাল ৪টায় প্রেসক্লাবে এ ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষের সময় পুলিশ গুলি ছুড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। তাদের দাবি, দিঘলিয়া সেনহাটি ইউনিয়ন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুজিবুর রহমান, যুবদল নেতা জাহিদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

সরকারের পদত্যাগ, মামলা ও গণগ্রেপ্তার বন্ধ, সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে প্রেস ক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করে বিএনপি। সমাবেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের একটি মিছিলে বাঁধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘাত শুরু হয়।

খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন অভিযোগ করেন, বিনা উস্কানিতে পুলিশ সমাবেশে পন্ড করতে গুলি, টিয়ারগ্যাস ও লাঠিচার্জ করেছেন। অসংখ্য নেতাকমী আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন ক্লিনিকে নেওয়া হচ্ছে। পরে নামসহ বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।

বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছে। কিন্তু খুলনায় কেন প্রত্যেকবার শান্তিপূর্ণ সমাবেশে এইভাবে পুলিশ উস্কানি দিয়ে টিয়ারশেল মারবে। পুলিশ আমাদের উপরে টিয়ারশেল রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। আজকে আমাদের ১২ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ, অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্যর শুরু করা মাত্র মুহুর্মুহু টিয়ারশেল নিক্ষেপ। এই ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছিলাম। হঠাৎ করে টিয়ারশেল-গুলি নিক্ষেপ করা হয়েছে। বেশকিছু নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আমাদের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার আছে সভা-সমাবেশ করার। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাঁধা কেন আসবে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (সাউথ) মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, আজকে বিএনপির একটি কর্মীসভা ছিল। তারা খুলনা প্রেসক্লাবে প্রোগ্রাম করছিলো। কিন্তু তাদের নেতৃস্থানীয় নেতারা আসার পর বেশকিছু নেতা-কর্মী রাস্তায় বসে যায়। রাস্তা বন্ধ করে প্রোগ্রাম শুরু করে। আমরা পেছনে সরে গেলে কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী আমাদের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আমরা বাধ্য হয়ে টিয়ারসেল এবং গ্যাসগান নিক্ষেপ করি। এ পর্যন্ত আমরা ১০ জনকে আটক করেছি। আমাদের বেশ কিছু সদস্য আহত হয়েছে। পরে জানতে পারবো।

এদিকে বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,  বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিনাউস্কানিতেই পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ এবং টিয়ারগ্যাস ও শটগানের গুলিবর্ষণ করেছে। এতে অন্তত ৩০জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ ও রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ১০/১২জনকে আটক করেছে পুলিশ।

তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী পুলিশ সাংবিধানিক দায়িত্ব ভুলে ভোটডাকাত ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের রক্ষাকারী হিসেবে পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত পূর্বনির্ধারিত এ বিক্ষোভ সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলে পুলিশ সম্পূর্ণ বিনাউস্কানিতে নিরীহ নেতাকর্মীদের বেধড়ক পিটিয়ে রবারবুলেট বর্ষণ করেছে। এতে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ ও রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। আটক করা হয়েছে ১০/১২জনকে।

বিএনপি ১০দফা বাস্তবায়নের দাবিতে শুক্রবার (১৯ মে) বিকেল ৪টার দিকে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি’র বিক্ষোভ সমাবেশ খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে শুরু হয়। মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক এ্যাড. এসএম শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে নগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মোঃ শফিকুল আলম তুহিন ও জেলার সদস্য সচিব এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পীর সঞ্চালনায় শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আমীর এজাজ খান।

বিএনপির পক্ষ থেকে আরো বলা হয়,  কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি সফলে কেএমপি কমিশনার বরাবর চারটি স্থান ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে লিখিত আবেদন করা হয়েছিল। পূর্বনির্ধারিত স্থানে অনুমতি না পাওয়ায় ও পুলিশের আক্রমনাত্মক মনোভাবের কারণে তাৎক্ষনিকভাবে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি। দুপুরের পর থেকেই স্যার ইকবাল রোডস্থ খুলনা প্রেসক্লাবের আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ জমায়েত হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রবেশে বাধা দিতে শুরু করে। পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে  হাজার হাজার নেতাকর্মী জমায়েত হয় খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে। পিকচার প্যালেস মোড়ের দিক থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আসার সময় বিনাউস্কানীতে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে নেতাকর্মীরা দিক-বিদিক ছোটাছুটি শুরু করলে নিরীহ নেতাকর্মীদের উপর পুলিশ নির্বিকারে গুলিবর্ষণ করে। অসংখ্য টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী আহত হন। গুলিবিদ্ধ ও রক্তাক্ত জখম হয়েছেন অন্তত ৩০ থেকে ৩৫জন নেতাকর্মী। পুলিশের মারমুখী আচরণের কারণে বিএনপি শীর্ষ নেতৃবৃন্দ খুলনা প্রেসক্লাবে ঢুকে আশ্রয় নেন। এসময়ে স্যার ইকবাল রোড, বেনীবাবু রোড, মির্জাপুর, ফুলমার্কেট, সিটি কলেজের সামনে খানজাহান আলী রোড, পিকচার প্যালেস মোড়সহ আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ বিএনপি’র অন্তত ১০ থেকে ১৫জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে। এরপর বিক্ষিপ্ত নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আমীর এজাজ খান ও সদস্য সচিব এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পীর নেতৃত্বে নগরীর জাতিসংঘ শিশুপার্কের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।

খুলনা গেজেট/ এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!