গভীর বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় ইলিশের কাঙ্খিত প্রজনন না হওয়ায় খুলনার মোকামে এর আমাদানি অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত দু’বছর যাবত উচ্চমূল্যে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। তা সত্ত্বেও গেল অর্থবছরে বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে ৩২৫ মেট্রিকটন রপ্তানি হয়। স্থানীয় বাজারে এবারো ইলিশের মূল্য চড়া।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)’র খুলনা অবতরণ কেন্দ্রের সূত্র জানায়, গত দু’বছরে বঙ্গোপসাগরের গভীর এলাকা ও সুন্দরবন সংলগ্ন নদ নদীতে ইলিশের কাঙ্খিত প্রজনন হচ্ছে না। এসময় দাবদাহের পরিমাণ বেড়েছে। সমুদ্রের তলদেশে ইলিশের খাদ্য প্লাঙ্কটনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া বৈরি আবহাওয়ার কারণে ইলিশ ডিম ছাড়ছে না। মা ইলিশও ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বরগুনা জেলার চরদুয়ানী, পটুয়াখালীর মহিপুর, বাগেরহাটের রায়েন্দা থেকে যে পরিমাণ ইলিশ আমদানি হয়েছে তাতে স্থানীয় বাজারের চাহিদা পুরণ হয়নি।
সূত্র জানায়, খুলনা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৮০ মেট্রিকটন ইলিশ আমদানি হয়। সরকারি রাজস্ব আদায় হয় ৫৪ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে আসা ৮শ’ মেট্রিকটন ইলিশ থেকে রাজস্ব আয় হয় ৫৮ লাখ টাকা। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ইলিশ আমদানি হয় ৪শ’ মেট্রিকটন। রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
খুলনা অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্ব) মোঃ রাসেল শিকদার জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে বঙ্গোপসাগরে ইলিশের প্রজনন কমেছে। এছাড়া রূপসায় অননুমোদিত মাছ ঘাটে ইলিশ নামায় একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে খুলনা নগরীতে মোট ইলিশ আসার পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টির পানিতে লবনাক্ততা কমলে ইলিশ আহরণ বাড়বে বলে তিনি দাবি করেন।
এ কেন্দ্রের পরিদর্শক মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, বৈশাখের শুরুতে ইলিশ আসেনি। এছাড়া ২০ মে থেকে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ। ঈদের পর জেলেরা সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, এ মৌসুমের শুরুতেই খুলনা অবতরণ কেন্দ্রে জাটকার পরিমাণ মোটেও ছিল না। এক কেজি ওজনের ইলিশের আমদানিটাই বেশি। তিনি জানান, মৌসুমের শুরুতেই ৭শ’ থেকে ১ কেজি ওজনের প্রতিমণ ৫২ হাজার টাকা, এক কেজি থেকে ১২শ’ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের প্রতিমণ ৬০ হাজার টাকা এবং ১২শ’ থেকে ১৫শ’ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের প্রতিমণ ৭৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
৪ নং ঘাটে জাল মেরামতকারী বহরদার মোঃ শাজাহান ফকির জানান, গত মৌসুমে গভীর সমুদ্রে তারা কাঙ্খিত ইলিশ পায়নি। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ১০ নং সিগনাল থাকায় জেলেরা সমুদ্র ত্যাগ করে কিনারায় আসে। তিনি জানান, ১৯ জন জেলে নিয়ে ২৪ জুলাই বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকারে রওনা হচ্ছে। গত দু’বছর কাঙ্খিত ইলিশ না পাওয়ায় লোকসান দিতে হয়েছে।
থানার মোড়ে খুচরা ইলিশ বিক্রেতা রজব আলী জানায়, ৫ শ’ ওজন সাইজের ইলিশ প্রতিকেজি ৮শ’ টাকা এবং দেড়কেজি ওজনের প্রতি কেজি ১৮শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতার পরিমাণ অনেক কম বলে তিনি জানান।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি