খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী : রায় কবে জানা যাবে আজ

খুমেক হাসপাতালে বহিরাগতদের নিয়ে তদারকি কমিটি, পরিচালকের হাতে চিকিৎসক লাঞ্ছিত!

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের হাতে একজন মেডিকেল অফিসারের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার দুপুর ১১টায় হাসপাতালের বর্হিবিভাগের ২১২ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া স্বাস্থ্য সেবা কমিটির সভাপতি কোন অনুমতি না নিয়ে তার একক সিদ্ধান্তে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বহিরাগতদের নিয়ে তদারকি কমিটি গঠন করা, কর্মচারিদের হয়রানী, তুচ্ছ কারণে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়া, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিজ এলাকার লোক নিয়োগসহ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডেও ক্ষুব্ধ ও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা অবিলম্বে এর প্রতিকার দাবি করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সোমবার বেলা ১১টার দিকে মেডিকেল অফিসার ডাঃ সুমন রায় নিজের চোখের চিকিৎসার জন্য পাশে সহকর্মীর চেম্বারে যান। এসময় হাসপাতালের বহির্বিভাগে তার চেম্বার ২১২ নম্বর রুমে যান হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মুন্সী রেজা সেকেন্দার। সেখানে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছিলেন ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডাঃ বাপী রায়। সেখানে সুমন রায়কে না পেয়ে বাপী রায়কে দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালের স্টাফসহ রোগীদের সামনে অপমান করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তাকে ওই রুম থেকে বের করে দেন। ঘটনা জানতে পেরে অন্যান্য সহকর্মীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে তারা লিখিতভাবে জানাবেন বলে জানান ডাঃ সুমন রায়।

হয়রানীর শিকার হাসপাতালের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডাঃ বাপী রায় বলেন, ‘চোখের চিকিৎসার জন্য ডাঃ সুমন রায় পাশের ডাক্তারের ওখানে গেলে আমি তার চেম্বারে বসে রোগী দেখছিলাম। এসময় পরিচালক মহোদয় রুমে এসে রোগী ও হাসপাতালের স্টাফদের সামনে আমাকে গালিগালাজ করেন। আমাকে রুম থেকে বের করে দেন। পরে আমরা অন্যান্য সহকর্মীরা মিলে তার চেম্বারে গেলেও তিনি সেভাবে রেসপন্স করেননি।’

হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, কয়েকদিন আগে হাসপাতালের সাথে সম্পৃক্ত নন এমন কয়েকজনকে নিয়ে পরিচালক একটি তদারকি কমিটি গঠন করেছেন। ওই কমিটি গঠনের বিষয়ে অন্যান্য চিকিৎসকরাও কিছু জানেন না। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা মনিটরিং করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য সেখ সালাউদ্দিন জুয়েলকে সভাপতি করে গঠিত আছে স্বাস্থ্য সেবা কমিটি। কিন্তু সংসদ সদস্যকে কোন তথ্য না জানিয়ে হঠাৎ করেই হাসপাতালের পরিচালক এই তদারকি কমিটি গঠন করে। এই কমিটিতে দুইজন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা থাকায় তাদের নিয়ে কোন কথা না বললেও একজন মাদকসেবীকে অন্তর্ভুক্ত করায় ক্ষুব্ধ হন চিকিৎসকরা।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানের দেওয়ালে এই তদারকি কমিটির পোস্টার লাগানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে অধ্যাপক ও বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানসহ কেউ পরিচালকের কাছে পাত্তা পাননি। পরিচালক এ বিষয়ে কারও সাথে কথাও বলেননি। গঠিত কমিটির এক সদস্য চিকিৎসকদের বিভিন্ন বিষয়ে হয়রানী করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া পরিচালক ডাঃ মুন্সী রেজা সেকেন্দার সম্প্রতি বিভিন্ন অভিযোগে আউট সোর্সিং কর্মচারী শামিম এবং এক ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিকে গায়ে হাত তুলে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।

এদিকে হাসপাতালের কর্মচারীদেরকেও হয়রানীর অভিযোগ করেছেন চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে আউটসোর্সিং কর্মচারীদের মধ্যে বিরোধকে কেন্দ্র করে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে হাসপাতালের সরকারি স্টাফ হাসানকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেন পরিচালক। হাসানের ছেলের সাথে বেতনের টাকা নিয়ে আউটসোর্সিংয়ের ঠিকাদারের লোকদের বিরোধের জের ধরেই এমন কান্ড ঘটান পরিচালক। তিনি বলেন, আউটডোর থেকে ডাক্তারের চেম্বারের সামনে থেকে এটেন্ডেন্টদের টেবিল চেয়ার সরিয়ে দিয়েছেন পরিচালক। এতে রোগীর বিবরণ লিখতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।

এসব বিষয় নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখা করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মুন্সী রেজা সেকেন্দার বলেন, রোগীর সেবা নিশ্চিতকরণে আমি যেকোন পদক্ষেপ নিতে রাজি। ডাঃ বাপী রায়কে গালিগালাজ করা হয়নি। তাকে শুধু চেম্বার থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছে। রোগীর সঠিক সেবা দিতেই একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে জনবল নিয়োগেও কোন স্বজনপ্রীতির ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি দাবি করেন।

খুলনা গেজেট/এমবিএইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!