কেশবপুর উপজেলার রামচন্দ্রপুর পাঁচপীর দরগা মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলাম কর্তৃক একই মাদ্রাসার ৯ম শ্রেণির ছাত্রীর শ্লীলতাহানী এবং জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে কেশবপুর থানায় সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলামকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়াও তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় শিক্ষক শহিদুল ইসলামকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সাময়ীক বরখাস্ত করেছেন।
মামলা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, রামচন্দ্রপুর পাঁচপীর দরগা মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলামের নিকট একই মাদ্রাসার ৯ম শ্রেণির ছাত্রী প্রাইভেট পড়ে। প্রতিদিনের ন্যায় গত ১৫ আগস্ট বিকালে ব্রহ্মকাটি গ্রামে শিক্ষকের বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে যায়। ওই সময় অন্য ছাত্রীরা প্রাইভেট পড়তে না আসায় ওই ছাত্রী শিক্ষকের বাড়ির পাশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। বিষয়টি শিক্ষকের দৃষ্টিগোচর হলে ছাত্রীকে বাড়ির ভেতর আসতে বলে। কিন্তু ব্যাচের অন্য ছাত্রীরা না আসায় ওই ছাত্রী বাড়ির ভেতর যেতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করে। এরপরও শিক্ষক তার কুমনবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য বৃষ্টি পড়ার ওজুহাত দেখিয়ে বাড়ির ভেতর আসতে বাধ্য করে।
শিক্ষকের কথায় ছাত্রী বাড়ির ভেতর যেয়ে প্রাইভেট পড়ানোর ঘরে বসে অংক করতে থাকে। ওই দিন শিক্ষক শহিদুল ইসলামের বাড়িতে তার ছোট ছেলে ছাড়া আর কেউ ছিলোনা। শিক্ষক শহিদুল ইসলামের ছোট ছেলে অন্য একটি ঘরের ভেতর ছিল এবং শিক্ষক শহিদুল ইসলাম তার নিজ ঘরে অবস্থান করছিল। একপর্যায় শিক্ষক শহিদুল ইসলাম তার ঘরের ফ্যান চালিয়ে প্রাইভেট পড়ানোর ঘরে ছাত্রীর নিকট আসে। ওই সময় সুচতুর শিক্ষক শহিদুল ইসলাম তার কুমনবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য কৌশলে ঘরের ফ্যানের সুইচ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ওই ছাত্রীকে যেতে বলে। ছাত্রী শিক্ষকের কথায় সরল বিশ্বাসে ফ্যানের সুইচ বন্ধ করার জন্য ঘরের ভেতর গেলে শিক্ষক শহিদুল ইসলাম তার পিছু পিছু গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে ওই ছাত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জাপটে ধরে শরীরে বিভিন্ন ষ্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানী করে জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায় এবং বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য হুমকী প্রদান করে। এরপর ওই ছাত্রী বাড়িতে ফিরে এসে তার দাদিকে ঘটনার বিষয় জানায়।
ওই দিন রাতে ছাত্রীর পিতা বাড়িতে আসলে তার মা মেয়ের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিস্তারিত বলে। লোক লজ্জার ভয়ে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পিতা কোথাও কোন অভিযোগ করেননি। এরই মধ্য ছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষকের শ্লীলতাহানীর ঘটনা এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর মানসম্মানের কথা চিন্তা করে ছাত্রীর পিতা গত ২০ আগস্ট সকালে একই গ্রামের ওই মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ওলিয়ার রহমান ও মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে গিয়ে মৌখিকভাবে শিক্ষক শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
রামচন্দ্রপুর পাঁচপীর দরগা মহিলা দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ওলিয়ার রহমান বলেন, ছাত্রীকে শ্লীলতাহানী করার অভিযোগে সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলামকে মাদ্রাসা থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করার বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক শহিদুল ইসলাম এর কাছে বক্তব্য নেয়ার জন্য তার ব্যবহৃত ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন না। তারপর থেকেই ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর সরেজমিন এলাকায় গিয়ে শিক্ষক শহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগযোগ করার চেষ্টা করলে জানা যায় তিনি এলাকা ছেড়ে গাঢাকা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ বোরহান উদ্দীন বলেন, ছাত্রী শ্লীলতাহানীর ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামীকে গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
খুলনা গেজেট/এইচআরডি