খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২১৮
  বিএনপি কর্মী খুনের মামলায় সাবের হোসেন ৫ দিনের রিমান্ডে
  সামিট গ্রুপের আজিজসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

কুয়েটের দুই হল প্রভোষ্টের পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) হলের প্রভোষ্টের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন দুই শিক্ষক। ইতোমধ্যে উপাচার্যের কাছে তারা তাদের পদত্যাগ পত্র জমাও দিয়েছেন।

পদত্যাগ করা প্রভোষ্টরা হলেন-খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোষ্ট প্রফেসর কল্যান কুমার হালদার ও ফজলুল হক হলের প্রভোষ্ট প্রফেসর মোঃ হাবিবুর রহমান।

এদিকে প্রভোষ্টরা পদত্যাগ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে প্রভোষ্ট সংকটের শঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ প্রফেসর সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর শিক্ষকরা কেউই প্রভোষ্টের দায়িত্ব নিতে চাইছেন না।

জানা গেছে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোষ্ট প্রফেসর কল্যান কুমার হালদার ও ফজলুল হক হলের প্রভোষ্ট প্রফেসর মোঃ হাবিবুর রহমান প্রভোষ্টের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ পত্র উপাচার্যের কাছে জমা দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, ড. সেলিমের মৃত্যুর পর থেকে তারা মানুষিক বিপর্যস্তের পাশাপাশি জীবন শঙ্কাও করছেন। হলের পরিবেশও সুষ্ঠু নয়। তাছাড়া পরিবারের সদস্যরাও ঘটনার পর থেকে উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। অপর চার হলের প্রভোষ্ট ও সাত হলের সহকারী প্রভোষ্টরা ৫ দফা দাবি পূরণ না হলে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
কুয়েটের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোষ্ট প্রফেসর কল্যান কুমার হালদার বলেন, ড. সেলিম আমার বন্ধু ছিল। তার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছি না। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তার মৃত্যুর পরের দিনই আমি প্রভোষ্ট পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। এরপর আরও একজন প্রভোষ্ট পদত্যাগ করেছেন।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, কুয়েটের সাতটি হল পরিচালনা নিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। হলের ডাইনিং ম্যানেজার নিয়োগ, খেলাধূলা, ফ্লোর মনিটরিং ও ইন্টারনেটসহ আরও কিছু বিষয় থেকে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি হলের সিট বরাদ্দ নিয়ে সংগঠনটির মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে। এ নিয়ে প্রভোষ্টদের মানুষিক চাপে রাখা হয়, যার শিকার সেলিম হোসেন।

প্রভোষ্টরা জানান, তাদের পদত্যাগ-সহকর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুরই প্রতিবাদ। তারা শিক্ষক সমিতির দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ৫ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে সাত দিনের আল্টিমেটাম দেন। কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ, প্রভোষ্টদের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগসহ বিভিন্ন দাবি তোলেন তারা।

কুয়েটের রোকেয়া হলের প্রভোষ্ট প্রফেসর এবিএম মামুন জামাল বলেন, শিক্ষক সেলিম হোসেন সুস্থ ছিলেন। তার চলে যাওয়া কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না। তার মৃত্যুতে আমরা সকলেই মানষিকভাবে বিপর্যস্ত। তার মৃত্যুর পর প্রভোষ্ট টবং সহকারী প্রভোষ্টদের নিয়ে সভা হয়েছে। সেখানে সবাই শিক্ষক সমিতির ৫ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে দুইজন প্রভোষ্ট পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। অন্যরা সাত দিনের মধ্যে দাবি আদায় না হলে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। ইতোমধ্যে ৯ জন ছাত্রকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। তবে এটি স্থায়ী কোন সমাধান নয়। এছাড়া ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটি কাজ করছেন। মঙ্গলবার তদন্ত কমিটি আমাকে ডেকেছিল। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে কথা শুনেছেন। তদন্ত কমিটি ভালো কাজ করছেন উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, প্রভোষ্টদের দেয়া সাত দিন আজ শেষ হচ্ছে। এখন আবারও সভা করার কথা রয়েছে। সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

কুয়েটের সাতটি হলের মধ্যে প্রফেসর সেলিম হোসেন, লালন শাহ হলের প্রভোষ্টের দায়িত্বে ছিলেন। আর দুটি হলের প্রভোষ্ট পদত্যাগ করেছেন। বাকী চারটি হলের প্রভোষ্টরা পদত্যাগের জন্য প্রভোষ্টদের সভায় জানিয়েছেন।
কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিষদের পরিচালক অধ্যপক ইসমাঈল সাইফুল্যাহ বলেন, বুধবার (১ ডিসেম্বর) প্রভোষ্টদের নিয়ে সভা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। যা রেজুলেশন আকারে তৈরির প্রস্তুতি চলছে। সভায় দু-একজন প্রভোষ্ট পদত্যাগের বিষয় তুললে তাদের জানানো হয়-কেউ পদত্যাগ করতে চাইলে ব্যক্তিগতভাবে জমা দিতে। শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ তোলার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে।

খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার বিশ্বাস বলেন, শিক্ষক ড. সেলিমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কবর থেকে তোলার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া কুয়েটের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছি আমরা।
খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, কুয়েট শিক্ষকের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলনের আবেদন করেছিল খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। মরদেহ যেহেতু কুষ্টিয়াতে দাফন হয়েছে, সেকারণে খুলনা আবেদনটি কুষ্টিয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এরআগে গত ১ ডিসেম্বর ময়নাতদন্ত ছাড়াই ড. সেলিমের লাশ কুষ্টিয়া জেলার বাঁশখালি গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

 

খুলনা গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!