খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৪শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, খুলেছে ৭ আবাসিক হল
  অন্যায়ভাবে ভিসি’কে অপসারণ করলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ: কুয়েট শিক্ষক সমিতি

কুয়েটে অনশনের ৪০ ঘণ্টা : ৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ, দুর্বল হয়ে পড়ছেন আন্দোলনরত ২৬ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমরণ অনশন কর্মসূচিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) আরও এক শিক্ষার্থী। মেকানিক্যাল বিভাগের ২২ ব্যাচের ওই শিক্ষার্থীর নাম সাইফুল ইসলাম। তাকে কুয়েট মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। এনিয়ে অনশনে ৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হলেন।

বুধবার সকাল ৮টায় কুয়েটে গিয়ে দেখা গেছে, টানা ৪০ ঘণ্টার অনশনে আন্দোলনরত ২৬ শিক্ষার্থীদের সবাই শারীরিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েছেন। অনেকের শরীরে রক্তচাপ কমে গেছে। কুয়েটের আবাসিক হল ও বাইরের ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে সামনে জড়ো হচ্ছেন।

এদিকে বুধবার সকাল থেকে কুয়েটের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ক্যাম্পাসের ফটকগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাদিক হোসেন পরামানিক বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আজকে যেন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে অনশন থেকে প্রত্যাহার করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষকরা। মঙ্গলবার সারাদিন কয়েক বার কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তারসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানান। উপ-উপাচার্য অনশনস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড় রয়েছেন।

কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অপসারণের দাবিতে গত সোমবার (২১ এপ্রিল ) বিকেল ৪টা থেকে ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন ৩২ জন শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে অনশনরত শিক্ষার্থী আজিমুল হক সিয়াম কিছুটা অসুস্থ বোধ করলে কুয়েটের মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক এসে তাকে স্যালাইন দেন। পরে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে ভর্তি করা হয়। দুপুর দেড়টার দিকে জোহরের নামাজ পড়ার সময় অনশনরত শিক্ষার্থী সাদিক সিদ্দিক ফারিব অজ্ঞান হয়ে পড়েন। প্রথমে তাকে কুয়েটের মেডিকেল সেন্টারে ও পরে নগরীর বেসরকারি সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।

শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার রাতে ২ জন শিক্ষার্থী কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের অভিভাবকরা এসে তাদেরকে নিয়ে যান। এছাড়া একজন শিক্ষার্থীর মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও বহিরাগতরা হামলা করলেও কুয়েট প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। হামলাকারীদের নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাত পরিচয় লোকজনের বিরুদ্ধে দায়সারা একটি মামলা করেছে কুয়েট প্রশাসন। হামলার ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

তারা বলেন, কিছুদিন আগে বহিরাগত একজন বাদি হয়ে ২২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলায় ছাত্রদের ব্যক্তিগত পরিচয়, বিভাগ ও রোল নম্বর যেভাবে নিখুত বর্ণনা করা হয়েছে তা কুয়েট প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব না। এরপর কর্তৃপক্ষ ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। এর মধ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীও রয়েছে। উপাচার্যের কাছে বারবার দাবি জানালেও তিনি তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করেননি।

শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা গত ১৩ এপ্রিল ক্যাম্পাসে ঢুকে হল খুলে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। ২ রাত তারা খোলা আকাশের নিচে থাকার পর ১৫ এপ্রিল তালা ভেঙে হলে ঢোকেন। কিন্তু হলে খাবার, পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ তাদের দাবি পূরণের উদ্যোগ নেয়নি। তাই তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।

এ ব্যাপারে কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। তাদেরকে অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। তারপরও আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

এদিকে কুয়েটের  সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডীন প্রফেসর ড. মোঃ হারুন অর রশিদ শিক্ষার্থীদের দেখতে গিয়ে বলেছেন, ইউনিভার্সিটি কিন্তু আমার ব্যক্তিগত কোন জিনিস না। এটা ব্যক্তির কোন কিছু না। ইউনিভার্সিটি হল আমাদের সবার। সুতরাং  ইউনিভার্সিটির ডিগনিটি, সম্মান এটা আপ হোল্ড  করার দায়িত্ব তোমার আমার সবার।
প্রফেসর ড. হারুন অর রশিদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমার জন্য ইউনিভার্সিটি যে কত বড় জিনিস, এটা কিন্তু তুমি আমার চেয়ে বেশি বুঝতে পারছ। এই এই বিষয়টা নিজেদের মধ্যে একটু ভালোভাবে আলোচনা কর। করে ইউনিভার্সিটির ডিগনিটি, ইউনিভার্সিটির সম্মানের জন্য যেটা ভালো, আমি আশা করি তোমার জন্য যেটা ভালো, সেটা তোমরা করবে। তোমরা কেউ তো অবুঝ না বা ছোট শিশু না। তোমাদের সবার মঙ্গল কামনা করছি।

 

খুলনা গেজেট/লিপু/হিমালয়




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!