খুলনা, বাংলাদেশ | ২ মাঘ, ১৪৩১ | ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  ১৭ বছর পর কারামুক্ত হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফু্জ্জামান বাবর
  দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) আক্রান্ত নারীর মৃত্যু
  মোংলার চাপড়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২, আহত ২
  গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র : আজ প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে সর্বদলীয় বৈঠক
উদ্বিগ্ন অভিভাবক, শিক্ষকদের কার্যকর ভূমিকা দরকার

করোনার ২য় ধাপে ফেসবুক-ইউটিউবে ব্যস্ত ঘরবন্দী শিক্ষার্থীরা 

শেখ বদর উদ্দিন

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। করোনার ২য় ধাপে শিশু, কিশোর ও তরুণরা গৃহবন্দী। ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যেই কাটছে তাদের দিন-রাত। বন্দী ঘরে কী করছে শিক্ষার্থীরা ? কেমন করে কাটছে তাদের সময় ?

একাধিক অভিভাবকের সাথে কথা বলে জানা যায়, পড়ার বইয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই বললেই চলে। লেখাপড়ায় মনোযোগও নেই আগের মতো। পুরো সময় কাটছে টিভি দেখে আর স্মার্ট ডিভাইসএ। অনেকের আচার ব্যবহারেও এসেছে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ অভিভাবকেরা।

এই অবস্থা চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের সামনের দিনগুলো কেমন হতে পারে ? জানতে চাইলে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ এইচ এ এম নাজমুল আহসান বলেন, প্রতিটি মানুষের শরীরে যেমন পুষ্টি দরকার, তেমনি মস্তিকেরও পুষ্টি দরকার হয়। সারা দিন ফেসবুক-ইউটিউবে থাকলে মস্তিকের সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে যায়। চিন্তায় পরিবর্তন আসে। ভালো চিন্তা বাদ দিয়ে খারাপ চিন্তাগুলো মস্তিকে ভর করে। আচার , আচরণ বদলে যায়, মানুষের সঙ্গে ব্যবহারও খারাপ হতে থাকে। ফলে এখনই শিক্ষক ও অভিভাবকদের বিশেষ নজর দিতে হবে ঘরে বন্দী থাকা তরুণ শিক্ষার্থীদের দিকে। ’

গিলাতলা কেডিএ আবাসিকের বাসিন্দা কামরুল হাসান এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলছিলেন, ‘আমার ছেলে মাহবুব ইসলাম একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। ছুটির এই পুরো সময়টাতে আমরা চেষ্টা করেও তাকে বইয়ের কাছে নিতে পারিনি। সারা দিন নিজ রুমে বসে হয় ল্যাপটপে নতুবা মোবাইল ফোনে মাথা গুঁজে থাকে। প্রতিদিন শেষরাতে ঘুমাতে যায়, বিকেলে ঘুম থেকে ওঠে। ওর কোনো কাজে বাধা দিলেই মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। কেমন যেন খিটমিটে স্বভাবের হয়ে গেছে ছেলেটা।’

একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন আফিলগেট পালপাড়া এলাকার বাসিন্দা সরকারি চাকুরিজিবি মোস্তফা হায়দার। তার ছেলে আটরা শ্রীনাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। মোস্তফা হায়দার বলেন, ‘অধিকাংশ সময়ই ছেলের সময় কাটে নিজের ঘরে। সেখানে কী করে কিছুই জানি না। এখন বড়ো হয়েছে, বেশি কিছু বললে মাইন্ড করে। কিন্তু লেখাপড়া বাদ দিয়ে সারা দিন ফেসবুক নিয়ে থেকে ওর যে ক্ষতি হচ্ছে, সেটা আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু কী করব ?’

আটরা শ্রিনাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহসেন বিশ্বাস বলেন, স্কুল পর্যায়ে অনলাইনে আমার শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিছু ক্লাস হচ্ছে, এটা ভালো দিক। প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পৃথক ফেসবুক গ্রুপ আছে। ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর হাতে স্মার্টফোনও আছে। পড়াশোনা বাদ দিলাম, ঐ গ্রুপগুলোতেও যদি ছাত্র ছাত্রীরা নিয়মিত এ্যাকটিভ থাকে, তাহলেও কিন্তু তাদের মানসিক অবস্থাটা কিছুটা হলেও ভালো রাখা যেত। শিক্ষার্থীদের রক্ষায় আমাদের শিক্ষকদের কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। এমন অসংখ্য অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে চিন্তার মধ্যে আছেন। করোনাকালীন অধিকাংশ শিক্ষার্থীর সময় কাটছে মোবাইল, ল্যাপটপ আর টিভি দেখে। অনেক তরুণ ভিডিও গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে । সারাদিন ইন্টারনেটে থেকে পর্নোগ্রাফির দিকে ঝুঁকছে অনেক তরুণরা ।

শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এখনকার তরুণরা বেশ সেনসেটিভ। তাদেরকে বেশি বিরক্ত না করাই ভালো। পাশাপাশি তাদের লেখাপড়ার মধ্যেও রাখতে হবে। টিভি দেখা বা ঘরের মধ্যে অন্য ধরনের খেলাধুলার (লুডু, দাবা, ক্যারাম) ব্যবস্থা করতে হবে। এখন আপনি যদি নিজেই সারা দিন মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকেন, তাহলে তো আপনার সন্তান সেটাই করবে ! করেনাকালীন এ সময়ে সন্তানদেরকে কিছুটা সময় দেওয়া প্রয়োজন, এটা কিন্তু ভালো সুযোগ। পাশাপাশি তাদের সাথে সদ্ব্যবহারও করতে হবে।

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!