খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১০ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  রিসেট বাটন বলতে ৭১ এর গর্বিত ইতিহাস নয় দূর্নীতিগ্রস্থ রাজনীতি মুছে নতুন সূচনার কথা বলেছেন ড. ইউনূস : প্রেস উইং
  পিরোজপুরে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে শিশুসহ ৮ জন নিহত
শুরুতেই আশার আলো দেখছেন সংশ্লিষ্টরা

কপিলমুনি শিংয়ের বাড়ি ঢিবি খননে উঠে আসছে মধ্য যুগের নিদর্শন

শেখ নাদীর শাহ্, পাইকগাছা

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খননকাজের শুরুতেই সফলতা এসেছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি শিংয়ের বাড়ি ঢিবিতে। মাত্র ১০ দিনের খননে সেখানে উঠে আসছে প্রাচীন আমলের বৌদ্ধ মন্দির। নিদর্শনটি ঠিক কোন সময়ের তা এখনি নিশ্চিত করে বলা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে, স্থাপনাটি আদি মধ্য যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।

প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজে সংশ্লিষ্টরা জানান, উঠে আসা মন্দিরটির নক্সা বাংলাদেশ ও ভারতের বেশিরভাগ বৌদ্ধ স্থাপনা মন্দির বা বিহারের চেয়ে কিছুটা ব্যাতিক্রম হলেও বৌদ্ধ মন্দিরের অনেক বৈশিষ্টই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাধারনত বৌদ্ধ মন্দির বা বিহারগুলো আয়তাকার বর্গাকার হয়। চারিদিকের বাহুতে থাকে ভিক্ষু কক্ষ, ছোট মন্দির বা চৈত্য, মাঝখানে ফাঁকা বিহারঙ্গন বা কোর্টইয়ার্ড। বিহারঙ্গনে মন্দির বা নিবেদন সুতপকার কিংবা ফাঁকাও থাকতে পারে। তবে এখানকার স্থাপনায় এমনটি এখনো দৃশ্যমান না হলেও বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সম্পর্কযুক্ত ব্যাপক স্থাপত্য শিল্পের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরো এলাকার স্থাপনাগুলি দীর্ঘ দিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার পর পরবর্তী পর্যায়ে ক্রমান্বয়ে এলাকাবাসী বিক্ষিপ্তভাবে (অপরিকল্পিত উপায়ে) এখানকার ইট উঠিয়ে আধুনিক স্থাপনাসমূহে এর ব্যবহার শুরু করে। এসব খননে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ইট, মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ, প্রাণীর হাঁড় উঠে আসে। বর্তমান খনন কাজেও উঠে আসছে এমন উপকরণ। তবে এখানকার কোন নমুনার রেডিও কার্বন ডেটিং ও পরিচিতিমূলক প্রত্নতাত্ত্ব না পাওয়ায় সুনির্দিষ্টভাবে স্থাপনাগুলির সময়কাল কিংবা কি ধরনের স্থাপনা তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছেনা।

প্রত্নতাত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনা ও বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা জানান, প্রাচীনকালে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুসন্ধানে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে পাইকগাছা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় জরিপ ও অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। জরিপ শেষে শনাক্তকৃত উল্লেখযোগ্য ঢিবিগুলোর মধ্যে শিংয়ের বাড়ি কপিলমুনি ঢিবিটিকে নির্বাচন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এক মাস এই খনন কাজ চালানোর নিমিত্তে কার্যক্রম শুরু করা হলেও বর্তমান অবস্থায় নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছেনা ঠিক কতদিন খননকাজ চলবে। তবে শিংয়ের বাড়ি ঢিবিতে তারা স্পষ্ট আশার আলো দেখছেন বলেও জানান তিনি।

এর আগে গত ১৬ মার্চ (বুধবার) থেকে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ঢিবি (শিংয়ের বাড়িতে) প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুসন্ধানে আনুষ্ঠানিকভাবে খননকার্যক্রম শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

আফরোজা খান মিতা আরও জানান, তাদের টিমে ৪ জন কর্মকর্তা, ৫ জন বিভিন্ন গ্রেডের কর্মচারী, বগুড়ার মহাস্থানগড়ের ২ জন দক্ষ খনন শ্রমিক, বাগেরহাটের ৪ জন খনন শ্রমিক ও স্থানীয় ১০ জন শ্রমিক রয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, সুন্দরবন উপকূলীয় পাইকগাছা উপজেলার এই জনপদে প্রাচীনকালের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন শাসনামলের ধ্বংসাবশেষ’র অস্তিত্ব রয়েছে। বিভিন্ন সময় উঁচু ঢিবিগুলোতে ইটের পাশাপাশি ব্যবহৃত তৈজসপত্র, মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশসহ বিভিন্ন উপকরণ পাওয়া যায়। কালক্রমে তাদের সেসব স্থাপনা মাটির নীচে চাপা পড়ে আছে। স্থানীয়ভাবে এসব ব্যাক্তি বা শাসনামল নিয়ে রয়েছে নানান লোকগাঁথা।

স্থানীয়রা বলছেন, শুধু রেজাকপুর নয় পার্শ্ববর্তী কাশিমনগর ও রামনগরজুড়ে ব্যাপক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অস্তিত্ব রয়েছে। তাদের ধারণা, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের দীর্ঘ মেয়াদী সুষ্ঠু খননকাজে উঠে আসতে পারে বৌদ্ধ কিংবা বিভিন্ন আমলের অজানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ভান্ডার।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!