খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী : রায় কবে জানা যাবে আজ

কখন সেঁক দিবেন

ডা. হিমেল ঘোষ

শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথায় সেঁক দেওয়ার পদ্ধতি বহু পুরোনো, বিজ্ঞানসম্মত এবং পরীক্ষিত। সেঁক সাধারণত দুই ধরনের হয়, যেমন- গরম সেঁক এবং ঠান্ডা সেঁক। কিন্তু কখন গরম সেঁক বা ঠান্ডা সেঁক দিতে হবে কিংবা কোনটাতে কী উপকার- তা নিয়ে অনেকের মনেই বিভিন্ন প্রশ্ন উঠে আসে।

সেঁক দিলে কিভাবে ব্যথা কমে?

আঘাত বা ইঞ্জুরি হতে পারে দুই ধরনের- একিউট ইঞ্জুরি ও ক্রোনিক ইঞ্জুরি। একিউট ইঞ্জুরি হঠাৎই বিগত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংঘটিত হয়। এটি সাধারণত হঠাৎ আঘাতের ফলে হয়ে থাকে, যেমন- পড়ে যাওয়া, ধাক্কা খাওয়া অথবা সংঘর্ষ হওয়া ইত্যাদি। ব্যথা, আঘাতের স্থানে স্পর্শজনিত ব্যথা বা অস্বস্তি, লালচে-উষ্ণ ত্বক এবং ফোলা ইত্যাদি হচ্ছে একিউট ইঞ্জুরির উপসর্গ। ক্রোনিক ইঞ্জুরি একিউট ইঞ্জুরি থেকে ভিন্ন। এটি সাধারণত ধীরে ধীরে দীর্ঘদিনের প্রদাহ থেকে উৎপন্ন হয়, যা শরীরের কোনো অংশের অতিরিক্ত ব্যবহার অথবা দীর্ঘদিনের আঘাতজনিত কারণ থেকে হতে পারে।

ক্রোনিক ইঞ্জুরি যে শুধু একটানা যন্ত্রণা দেবে এমনটা নয়, এই ব্যথা আসা-যাওয়া চক্রের মধ্যে থাকতে পারে অথবা ব্যথা অনেকদিন যাবৎ নিস্তেজও থাকতে পারে। একিউট ইঞ্জুরির জন্য বরফ হচ্ছে প্রমাণিত চিকিৎসা। বিশেষ করে এটি ফোলা হ্রাস এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। যত তাড়াতাড়ি বরফ প্রয়োগ করা যাবে, এ চিকিৎসা তত বেশি কার্যকর হবে, তাই আঘাতের প্রথম ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বরফ ব্যবহারে কার্যকরী ফল পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে গরম সেঁক রক্তসংবহন এবং ত্বকের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে, একারণে এটি একিউট ইঞ্জুরি কিংবা আকস্মিক প্রদাহের লক্ষণযুক্ত আঘাতের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা উচিত নয়। গরম সেঁক ক্রোনিক ইঞ্জুরির জন্য বেশ উপকারী। ক্রোনিক ইঞ্জুরিতে ভোগা অ্যাথলেটদের আক্রান্ত স্থানের নমনীয়তা বৃদ্ধি ও রক্তপ্রবাহ উদ্দীপিত করতে ব্যায়াম বা অনুশীলনের পূর্বে গরম সেঁক প্রয়োগ করা উচিত। ব্যায়াম অনুশীলনের পরে ক্রোনিক ইঞ্জুরির জন্য সর্বোত্তম হচ্ছে বরফ, কারণ এটি ফোলা ও ব্যথার সূত্রপাতকে নিরূৎসাহিত করে।

গরম সেঁক

দীর্ঘদিনের ক্রোনিক ব্যথা, বাতের ব্যথা, মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, অস্থিসন্ধি বা লিগামেন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া, কোমর ও ঘাড়ের দীর্ঘমেয়াদি কোনো ব্যথা বা আঘাত কিংবা টেন্ডনে আঘাতজনিত ব্যথায় গরম সেঁক খুবই কার্যকরী। যখন দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত মাংসপেশি বা অস্থিসন্ধিতে গরম সেঁক দেওয়া হয়, তখন সেখানে রক্তনালি প্রসারিত হয় ও রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। এর ফলে আক্রান্ত স্থানে অক্সিজেন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ বেড়ে যায়। সুষ্ঠুভাবে রক্ত চলাচল হয় বলে সংশ্লিষ্ট জায়গায় ব্যথা কম অনুভূত হয় এবং আরাম বোধ হয়।

গরম সেঁক কিভাবে দিবেন?

হট ওয়াটার ব্যাগে গরম পানি ভরে সেঁক দিতে পারেন। তবে এ বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। কারণ, অনেক সময় ব্যাগ ফেটে বা অসাবধানতায় কর্ক খুলে যেয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ডায়াবেটিস ও স্নায়ুর সমস্যাজনিত রোগীদের সংবেদন অনুভূতি কম থাকে বলে অতিরিক্ত গরমে অনেক সময় ত্বক পুড়ে যেতে পারে। গরম পানির ব্যাগ দিয়ে দিনে তিনবেলা ১৫-২০ মিনিট করে সেঁক দিতে পারেন। কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে বা গামছা ভিজিয়ে নিন। এরপর এটি নিংড়িয়ে যে গরম ভাপটি থাকবে, তা ব্যথার স্থানে ১৫-২০ মিনিট করে দিনে ৩-৪ বেলা দিতে পারেন। দিনের শুরুতে গরম পানিতে দীর্ঘ সময় ধরে গোসল করলেও উপকার পাবেন। এতে বাত রোগীদের সকালবেলায় অস্থিসন্ধির স্টিফনেস বা জড়তা অনেকটাই দূর হয়। গোসলের পানির তাপমাত্রা ৯২-১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট হওয়া উচিত। যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন বা হাঁটতে বের হন, তাঁরা ব্যায়ামের আগে গরম পানিতে গোসল করতে পারেন। এতে সন্ধি ও মাংসপেশি শিথিল হবে এবং আঘাতের ঝুঁকি কমবে। যেসব রোগী বাত বা আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন, তাঁরা সুইমিংপুলে হালকা গরম পানিতে সাঁতার কাটতে পারেন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৩-৪ দিন।

যেসব ক্ষেত্রে গরম সেঁক উপযোগী নয়

যদি ত্বক গরম, লালচে হয়ে যায় বা ত্বকে কোনো প্রদাহ থাকে, যাঁদের চর্মরোগ বা শরীরে কোনো উন্মুক্ত আঘাত থাকে, শরীরের এমন কোনো স্থান- যেখানে বোধশক্তি বা সংবেদন ক্ষমতা নেই, পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি জনিত জটিলতার কারণে যেসব ব্যক্তি তাপের প্রতি অসহনীয় কিংবা যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ অথবা হৃৎপিণ্ডে কোনো রোগ রয়েছে – তাঁদের ক্ষেত্রে গরম সেঁক পরিহার করে চলা উচিত।

ঠান্ডা সেঁক

আকস্মিক (৪৮ ঘণ্টার মধ্যে) যেকোনো আঘাত পেলে, গেঁটে বাত, মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথা, মচকে যাওয়া কিংবা খেলার সময় প্রাপ্ত আঘাতে কোল্ড কমপ্রেশন বা ঠান্ডা সেঁক বেশ কাজে আসে। এ ধরনের ক্ষেত্রে যখন মাংসপেশি বা অস্থিসন্ধিতে ঠান্ডা সেঁক দেওয়া হয়, তখন রক্ত চলাচল হ্রাস পায়। এর ফলে অকস্মাৎ প্রদাহ জনিত শারীরিক প্রতিক্রিয়াও হ্রাস পায় এবং আক্রান্ত স্থানে ফোলা ও প্রদাহ অনেকাংশে কমে যায়। ফলে সংশ্লিষ্ট অংশে ব্যথা কমে যায় এবং আরাম বোধ হয়।

ঠান্ডা সেঁক কিভাবে দিবেন?

প্যাকে জেল নিয়ে ঠান্ডা করে তা আক্রান্ত স্থানে ৪-৬ ঘণ্টা পরপর ২০ মিনিট করে ঠান্ডা সেঁক দিতে পারেন। এটি ৩ দিন পর্যন্ত বেশ কার্যকরী ফল দেয়। এছাড়া ঠান্ডা পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে তা ব্যথা বা আক্রান্ত স্থানে দিতে পারেন। আবার একটি নরম কাপড়ে বরফের টুকরা বা প্যাক নিয়ে আক্রান্ত স্থানে ৫ মিনিট বৃত্তাকারে ম্যাসাজ বা মালিশ করুন। এটি দিনে ২-৫ বেলা পর্যন্ত করতে পারেন। তবে কখনো বরফ সরাসরি ত্বকের ওপর খুব বেশি সময় ধরে (৫-১০ মিনিটের বেশি) মালিশ করবেন না।

যেসব ক্ষেত্রে ঠাণ্ডা সেঁক উপযোগী নয়

কখনো সরাসরি ত্বকের ওপর বরফ মালিশ করবেন না। এতে আইস বার্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া কখনো একই জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বরফ মালিশ করবেন না, কারণ এতে ফ্রোস্ট বাইট আশঙ্কা বেশি থাকে। খুব বেশি জটিল কোনো আঘাতেও ঠান্ডা সেঁক দেবেন না- এতে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি।

ডায়াবেটিস, সিস্টেমিক স্ক্লেরোসিস বা রেনোড’স সিনড্রোমের কারণে যদি শরীরের কোনো স্থানে স্নায়ুর সংবেদনশীলতা কমে যায় বা আগে থেকেই রক্তনালিতে রক্ত চলাচল কম থাকে, তবে সেখানে বরফ ম্যাসাজ থেকে বিরত থাকবেন। পাশাপশি মেরুদণ্ডের হাড়যুক্ত স্থানে সরাসরি বরফ মালিশ করবেন না। এছাড়া যাঁদের কোনো খোলা আঘাত বা ব্লিস্টার ত্বক রয়েছে, যাঁদের ঠান্ডার প্রতি সংবেদনশীলতা বেশি বা যাঁদের রক্ত সঞ্চালনজনিত সমস্যা রয়েছে, তাঁরাও ঠান্ডা সেঁক দিবেন না।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!