যতটা আশা করা হয়েছিল, ততটা বড় লিড নিতে পারেনি বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজ ও ইয়াসির আলীর জুটিতে লিড আসে ১৩০ রানের। এ রানের জবাবেই বেশ প্রতিরোধ গড়ে তোলে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের লিড টপকে বড় রানের আশা জাগান কিউই তারকা উইল ইয়ং।
তবে, সে আশা পূরণ হতে দেননি ইবাদত হোসেন। দিনের চতুর্থ সেশনে ইবাদতের আগুনে বোলিংয়ে লড়াই জমে উঠেছে মাউন্ট মঙ্গানুইতে। আগামীকাল বুধবার টেস্টের শেষ দিনের রোমাঞ্চের অপেক্ষায় থেকে শেষ হলো চতুর্থ দিনের লড়াই।
আজ মঙ্গলবার টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে ৫ উইকেটে ১৪৭ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে নিউজিল্যান্ড। দিন শেষে উইকেটে ৩৭ রানে অপরাজিত আছেন রস টেইলর। তাঁর সঙ্গে ৬ রানে ছিলেন রাচিন রবীন্দ্র। আজ শেষ সেশন পর্যন্ত ১৭ রানে এগিয়ে আছে টম ল্যাথামের দল।
লে ওভালে আজ চতুর্থ দিনের শুরুতে ১৩০ রানের লিড নিয়ে থামে সফরকারীরা। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে ভালোই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে নিউজিল্যান্ড। প্রতিরোধ গড়ার মূল কাজটাই করেছেন উইল ইয়ং। দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে নিউজিল্যান্ডকে ৬৯ রানের চমৎকার ইনিংস উপহার দিয়েছেন তিনি। তাঁর ব্যাটে চড়েই বাংলাদেশের লিড টপকে যায় কিউইরা।
যদিও কিউইদের ব্যাটিংয়ের শুরুতে সুযোগ দেয়নি বাংলাদেশ। কিউইদের দুই টপ অর্ডার লম ল্যাথাম ও ডেভন কনওয়েকে টিকতে দেননি তাসকিন আহমেদ ও ইবাদত হোসেন। টম ল্যাথামকে(১৪) ফিরিয়েছেন তাসকিন। আর, প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ডেভন কনওয়েকে(১৩) বিদায় করেছেন ইবাদত।
এরপর ইয়ং ও টেইলরের ব্যাটে ম্যাচের লাগাম টেনে ধরে কিউইরা। ১৩০ রানের লিড টপকে টার্গেট বাড়ানোর দিকে আগান দুই ব্যাটার। তখনই বোলিংয়ে চমক দেখান ইবাদত। একে একে তুলে নেন তিনিট উইকেট। ফিরিয়ে দেন টিকে যাওয়া উইল ইয়ং, হেনরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেলকে। তবে টেইলরের প্রতিরোধ ভাঙতে পারেননি। দ্রুত উইকেট হারানোর পর টেইলরের ব্যাটেই বাকি দিন পার করে দেয় নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ৩৯ রান দিয়ে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নেন ইবাদত। ২২ রান খরচায় একটি উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ।
এর আগে আজ চতুর্থ দিন সকালে ৪৫৮ রানে থেমেছে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। নিউজিল্যান্ডের ইনিংস টপকে বাংলাদেশ লিড নিতে পেরেছে ১৩০ রানের।
মিরাজের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে ইয়াসির ৭৫ রানের জুটি গড়েন। এর মধ্যেই বাংলাদেশের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এক হাজার রান ও একশ উইকেটের ডাবল স্পর্শ করেন মিরাজ। ক্যারিয়ারে ৩০টি টেস্ট খেলে এ মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি। তাঁর আগে এই রেকর্ড গড়েছিলেন সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ রফিক। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের লেগেছিল ২৮ ম্যাচ আর রফিকের লেগেছিল ৩৩ ম্যাচ।
বে ওভালে ৬ উইকেটে ৪০১ রান নিয়ে দিন আজ চতুর্থ দিন শুরু করে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ের শুরুতে কয়েক দফায় জীবন পেয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু নতুন বলও ভালোভাবে সামলান মিরাজ-ইয়াসির। কিন্তু বেশিদূর যেতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত এই জুটি ভাঙেন সাউদি। তাঁর অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল মোকাবিলা করে কিপারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন মিরাজ। ৮৮ বলে ৪৭ রান করে ফেরেন মিরাজ। ১৬০ বলে ভাঙে ৭৫ রানের জুটি। এরপরই একে একে ফিরতে থাকেন বাকিরা। শেষ পর্যন্ত ৪৫৮ রানে থেমে যায় বাংলাদেশ। মোট চতুর্থ দিন ২০.২ ওভারে ৫৭ রান যোগ করে বাংলাদেশ।
এর আগে প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডকে আজ ৩২৮ রানেই অলআউট করে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১২২ রান করেছেন ডেভন কনওয়ে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৫ রান করেছেন হেনরি নিকোলস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস : ১০৮.১ ওভারে ৩২৮ (ল্যাথাম ১, ইয়ং ৫২, কনওয়ে ১২২, টেইলর ৩১, টম ব্লান্ডেল ১১, নিকোলস ৭৫, রাচিন ৪, জেমিসন ৬, সাউদি ৬, ওয়্যাগনার ০, বোল্ট ৯*; তাসকিন ২৬-৭-৭৭-০, শরিফুল ২৬-৭-৬৯-৩, ইবাদত ১৮-৩-৭৫-১, মিরাজ ৩২-৯-৮৬-৩, শান্ত ২-০-১০-০, মুমিনুল ৪.১-০-৬-২)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১৭৬.২ ওভারে ৪৫৮ (সাদমান ২২, মাহমুদুল ৭৮, শান্ত ৬৪, মুমিনুল ৮৮, মুশফিক ১২, লিটন ৮৬, ইয়াসির ২৬, মিরাজ ৪৭, তাসকিন ৫, শরিফুল ৭, ইবাদত ০*; সাউদি ৩৮-৪-১১৪-২, বোল্ট ৩৫.২-১১-৮৫-৪, জেমিসন ৩৫-১১-৭৮-১, ওয়্যাগনার ৪০-৯-১০১-৩, রবীন্দ্র ২৮-৪-৬৭-০)।
নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস : ৬৩ ওভারে ১৪৭/৫ (ল্যাথাম ১৪, ইয়াং ৬৯, কনওয়ে ১৩, টেইলর ৩৭*, হেনরি ০, ব্লান্ডেল ০, রবীন্দ্র ৬*; তাসকিন ৯-০-২২-১, শরিফুল ১১-১-৩০-০, মিরাজ ২২-৫-৪৩-০, ইবাদত ১৭-৪-৩৯-৪, মুমিনুল ৪-০-৭-০)।
খুলনা গেজেট/এনএম