খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কয়েকজন বিচারপতির আচরণের বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে, এ বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে : সুপ্রিম কোর্ট
  সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক বিকালে
  ১৫ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট জয় বাংলাদেশের

ঋণের বাঁধনে

শাহনওয়াজ বেগম

বিষাক্ত বেদনায় নীল হয়ে আছে আকাশ। ওকে কাছে টানতে ভাল লাগে। কুৎসিত পাখীটির ফ্যাকাসে বিবর্ণতায় ও কেমন অসাড় হয়ে হাসছে। এই তো গতকাল সন্ধ্যায় সে বলেছিল ‘আপনি এখন আর যান না কেন সমীর ভাই’?

ওর কাছে যাব? কেন যাব? ওকে ভাল লাগে বলে? এই যে সেদিনের নোটটা, কড়কড়ে পাঁচশ টাকার নোটটা এখনও আমার পকেটে, ধার করেছি ওর কাছ থেকে। এই নিয়ে লাবনীর কাছ থেকে সম্ভবতঃ পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হল। ওর কাছে যাইতো! সত্যি ওকে আমি কি যে ভালবাসি, তাই না? দূরে ওই গাছে এক ঝাঁক পাখির বিকট উল্লাস, ওদের ডানার ঝাপটায় কই আমি তো ক্লান্ত হইনা।

এখন রামধনু রঙ বিকেল। ঠিক লাবণীর দু’টি লাল কপোলের মত। পকেটে সেই নোটটা। সত্যি কি আনন্দ। আজ রাত বারোটায় সেই বিশেষ ‘শো’ দেখতেই হবে, তারপর কান্তদের সেই আড্ডা। বেশ জমবে, চুড়ান্ত জমবে। পাখীটা এদিকে নেমে আসছে কেন? আকাশের রঙটাও কী ঐ পাখীটির ঠোঁটের মত শক্ত?
‘আরে যাবি না? চল্্’-বন্ধুর কণ্ঠে আমেজ।

‘চল, চল্। শোন, আজ কিন্তু সব খরচ তোর’ বন্ধু স্বদেশের প্রস্তাবে সমীর ঘাবড়ালো না। “তা’তে কি আছে? সমীর চৌধুরীর পকেট কখনও খালি থাকে না, এই দ্যাখ।”

“বাঃ ! চমৎকার ! এই না হলে কি হয় দোস্ত”। স্বদেশের কণ্ঠ আমাকে আন্দোলিত করে।

আমি মনের আনন্দে একটা সুখস্বপ্ন খুঁজে বেড়াচ্ছি, “লাবণী, তোমাকে যে কত ভালবাসি”। সারাটি পথ আমি ভেবেছি-কাল কোন ফিকিরে লাবণীর কাছে যাওয়া যায়, ওর মা যে বড্ড একরোখা মানুষ—-

রাতে এসে শুয়েছি, জানলাটা খোলাই ছিল। কিছুতেই ঘুম আসছে না। পাখীটির বিষাক্ত নিঃশ্বাস যেন, ভেসে আসছে। আমি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি ধীরে, অতি ধীরে। টেবিলের পরে বইগুলো অগোছালো। অতিপ্রিয় “মেঘদূত” খানা খুলে ধরলাম। বইয়ের ভিতর থেকে লাবণীর ছবিখানা মাটিতে পড়ে গেল। ছবিটা ভারী সুন্দর। কেমন স্নিগ্ধতা বিরাজ করছে মুখটিতে। কপালে ছোট একটি টিপ, ভ্রু দুটি চিকন করে টানা। প্লাক করেছে বোধ হয়, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। দু’টি বেগুনী রঙের ছ্ট্টো টব দুই কানে। সামান্য এতটুকুতেই ছবির মধ্যে লাবণী যেন স্বপ্নপুরীর রাজকন্যার মত চমকাচ্ছে। ছবির পিছনে লাবণী লিখেছে “বইটা তো পড়তে দিতে চাইছিলেন না, কিন্তু এখন? খুশী তো? বিনিময়ে আমি একটা চাই কিন্তু”।

সত্যি ও কি করছে এখন? ওকে এখনই কি কাছে পাওয়া যায়? এক্ষুনি! ঠিক এই মুহুর্তে? পাখীটির অসহ্য নিঃশ্বাসে আমি যেন ভিজে উঠেছি। আহা! ও আমাকে কত ভালবাসে। পরদিন ভোরে আবার ওখানে যাবার পালা। মুখটা ঘসে মেজে প্রসাধন করেছি কিছু। ভালোই লাগছে। রাতের সেই বিষন্নতা নেই চেহারায়। লাবণীর পছন্দ করা টাইটা পরলাম।

আয়নায় দাঁড়িয়ে দেখছি নিজেকে—চমকে দেখি-পিছনে লাবণী দাঁড়িয়ে—-
“ও! তুমি? আরে! কখন এলে”?
“তা, অনেকক্ষণ! এত সাজছো কেন? কোথায় যাবে শুনি? কাল সারাদিন অপেক্ষা করেছি। কই গেলে না তো”?
আচমকা ওর মুখের এই ‘তুমি’ সম্বোধনে আমি হকচকিয়ে গেলাম। কোনকিছু বলার অবকাশ না দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে টেনে নিলাম। ওর বুকের ওঠা-নামা উচ্ছ্বাস আমার হৃদয়ের কিনারে কিনারে উত্তাপ দিয়ে গেল। ও অসাড় হয়ে গেল। বহুবার এভাবে ও আমার কাছে এসেছে, আমি নিজেকে হারিয়েছি, ওকে চেয়েছি, পেয়েছি।

“সমীর, তুমি যাবে না? ওঠ, রেডি হয়ে নাও”।
লাবণীর ডাকে উদাসী কণ্ঠে সমীর বলে
“কোথায় যাবে বলতো?”
“কেন? বিকেলে আমার সাথে সেই প্রোগ্রাম কি ভুলে গেলে ?” লাবণীর সুরে অভিমান গুমরে উঠে।
প্রত্যুত্তরে বলে “ওঃ। আই,সি চল চল।” ওরা চলতে থাকে।

লাবণী যখন সাথে আছে, তখন পকেটে টাকা না থাকলেও নির্বিঘেœ পথ চলা যায়। আমি উঠলাম। আমি বহুবার গিয়েছি ওদের বাড়ী, লাবণীদের ভালবেসে? কি জানি হয়তো বা তাই। কাল লাবণীকে দেখতে আসবে। লাবণীর বাবা বিয়ের সম্বন্ধ করবার চেষ্টায় আছেন। লাবণী আমাকে গোপনে লিখে পাঠিয়েছে-আমরা পালিয়ে যাবো, পরে বিয়ে হবে। আপাততঃ পালিয়ে গেলে বদনামের জন্য আর কেউ আমাকে বিয়ে করতে আসবে না, ফাইন্যাল একজামিন দিয়ে আমরা বিয়ে করব।

আমি আজ রাতেই ঢাকার কোচ ধরব, নয়তো কাল সকালে লাবণী গোপনে এসে পড়লে এড়িয়ে যাওয়া মুসকিল হবে। কিন্তু টাকা ! না, কুলোবে না তো, কি করি এখন? “আবদুল ! আবদুল ! শোন, তুই এক্ষুনি গিয়ে তোর আপামণিকে এই চিঠিটা দিবি, দিয়েই চলে আসবিনা কিন্তু; দাঁড়িয়ে থাকবি, উত্তর নিয়ে-তবে আসবি, বুঝলি তো? শিগগীর চলে যা।”

লিখলাম-“লাবণী! লাবু! লক্ষ্মীটি আমার! পাঁচশ টাকা এর হাতে দিয়ে দাও। বিশেষ প্রয়োজন। রাতে প্রস্তুত থেকো। আমি অবশ্যই ঐ জায়গায় থাকবো”-তোমারই সমীর। আমি সেই টাকা দিয়েই টকিট কিনেছি। বর্তমানে জহিরের (আমার বন্ধু) বৈঠকখানায় আরামে চা পান করছি। আজ শনিবার ৬ই ডিসেম্বর, লাবণীর বিয়ের দিন। আমি ওই বিরাট পাখীটির সাথে একাত্ম হয়ে গেছি। ও পথের পাশে মরা মাখার খুলি থেকে কি যেন খাচেছ। আমি চা পান করছি। সঙ্গে বিস্কিট, কেক, চানাচুর।

খুলনা গেজেট/এমএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!