খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  কুয়েটের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলায় বিএনপি ও যুবদলের চার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার
  অপারেশন ডেভিল হান্টে ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার ৭৬৯

উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ করে স্বাবলম্বী চাষিরা

নিজস্ব প্রতি‌বেদক, সাতক্ষীরা

দেশের সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ির দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদন ক্ষেত্র সাতক্ষীরা। আশির দশকে শুরু হওয়া এই চিংড়ি চাষ এখনো সনাতন পদ্ধতিতে সীমাবদ্ধ থাকায় আগের মতো আর উৎপাদন হচ্ছে না। এই সময়ে উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে গলদা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন আশাশুনির বড়দল ইউনিয়নের লক্ষ্মীখোলা গলদা ক্লাস্টার চাষিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ মৎস্য বিভাগের সাসটেইনেবল ক্লাস্টার এন্ড মেরিল ফিশারিজ প্রজেক্টের আওতায় বিশ একর ২৪ শতাংশ জমি নিয়ে ২০জন মৎস্য চাষী উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ শুরু করেছে। যা গতানুগতিক চাষের তুলনায় দ্বিগুণ গলদা উৎপাদন হয়েছে। তবে লক্ষ্মীখোলা গলদা ক্লাস্টার চাষীদের দাবি প্রকল্পটি এক বছরের পরিবর্তে ২/৩ বছর করা হলে এই প্রকল্পের আওতায় এলাকার সকল চাষিরা অধিক লাভবান হবেন।

লক্ষ্মী খোলা গলদা ক্লাস্টার প্রকল্প কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার গাইন জানান, ২০২৪ সালে মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাসটেইনেবল ক্লাস্টার এন্ড মেরিল ফিশারিজ প্রজেক্টের আওতায় এক বছরের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যেখানে আশাশুনি উপজেলা মৎস্য অফিসের বাস্তবায়নে ২০ একর ২৪ শতক জমি ও ২০ মৎস্য চাষী নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এরপর মৎস্য বিভাগ থেকে নগদ অর্থ ও প্রশিক্ষণ সহ সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে ২০টি পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করি। যেটি গতানুগতিক পদ্ধতির চেয়ে দ্বিগুণ মাছ উৎপাদন করতে পেরেছি। যার ফলে কমিটির সকল সদস্য লাভবান হয়েছে। যা আমাদের সাতক্ষীরা জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

লক্ষ্মীখোলা গলদা ক্লাস্টার প্রকল্প কমিটির সহ সভাপতি বিজয় কুমার গাইন জানান, এই প্রকল্পের আওতায় বিশটা পুকুর খনন করা হয়েছে। পুকুরে গলদা চিংড়ির পাশাপাশি কিছু রুই কাতলা ও মৃগেল মাছ ছাড়া হয়েছে। নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে গলদা সহ সাদা মাছ গুলো অনেক বড় হয়েছে। শুধু তাই নয় পুকুরের বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে শীতকালীন সবজি টমেটো, লাউ, ওলকপি, ফুলকপি, সিম সহ নানা সবজি লাগানো হয়েছে। ফলে মাছের পাশাপাশি সবজিও উৎপাদন হচ্ছে। যার ফলে দিনমজুরি হিসাবে এলাকার অনেকেই এই প্রকল্পে কাজ করছেন বলে জানান।

গলদা ক্লাস্টার প্রকল্প কমিটির সদস্য আজারুল ইসলাম মন্টু জানান, বাংলাদেশে মৎস্য চাষের মধ্যে গলদা চিংড়ি চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, যা রপ্তানির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে, উন্নত সনাতন পদ্ধতি অনুসরণ করে চাষিরা এখন পরিবেশবান্ধব ও লাভজনক।

তিনি বলেন, মৎস্য বিভাগের ক্লাস্টার প্রজেক্ট এর সকল কার্যক্রম সহজভাবে কৃষকের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। কারণ সময়মতো মাছ থেকে শুরু করে খাদ্য, চুন সহ চাষের সরঞ্জাম সহজলভ্য না হয় চাষীদের বিলম্বনা শিকার হতে হচ্ছে। তাছাড়া প্রথম বছরেই সকল খরচ করে প্রজেক্ট চালু করতে হয়। আর এক বছরের মধ্যে শেষ হয়। তাই এই প্রজেক্ট এর মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

আশাশুনি উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সত্যজিত মজুমদার বলেন, আশাশুনি উপজেলায় তিনটি ক্লাস্টার রয়েছে। যার মধ্যে বড়দল ইউনিয়নের লক্ষ্মীখোলা গলদা ক্লাস্টারের মাছ ধরা হচ্ছে। যেখানে ফলাফল অনেক ভালো। এই প্রজেক্টের আওতায় মৎস্য চাষীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি চুন, সার, খাবার থেকে শুরু করে সকল সহযোগিতা করা হয়েছে। যার ফলে চাষিরা এই প্রজেক্টের আওতায় চাহিদা বেড়েছে। তবে তিনি সামনে চৈত্র মাস তাই ৬ ফুট গভীর পুকুর খনন করে চাষীদের গলদা চাষের পরামর্শ দেন।

উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ একদিকে যেমন চাষিদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করছে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্যও বজায় রাখছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে এই প্রযুক্তির প্রচার ও প্রশিক্ষণ দিলে বাংলাদেশে গলদা চিংড়ি চাষ আরও প্রসারিত হবে এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!