উপকূলীয় খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়ার ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ এখনো অরক্ষিত। প্রতিদিন দুইবার জোয়ারে ডুবছে এবং ভাটায় জাগে। এর ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে ওই এলাকার পানিবন্দী ৫০টি পরিবার। এদের সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ মানুষেরা। দীর্ঘদিন ধরে নদীর পানিতে জোয়ার ভাটায় সংকটে রয়েছে এক হাজার বিঘার মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী। কর্মহীন হয়ে পড়েছে পানিবন্দী পরিবার গুলো।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে প্রবল জোয়ারে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণ পানিতে তলিয়ে যায় উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৫০ টি গ্রাম। ঘূণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার অতিমাত্রায় জোয়ারের পানিতে উপজেলার শাকবাড়ীয়া ও কপোতাক্ষ নদীর প্রায় ৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে লবণ পানি প্রবেশ করে। ভেঙ্গে যায় বেড়িবাঁধের ১২টি পয়েন্ট। বিধ্বস্ত হয়েছে এক হাজার ২৫০টি ঘর। তলিয়ে যায় দুই হাজার পাঁচশ’ চিংড়ি ঘের। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা এবং ১৫ হেক্টর জমির কৃষি ফসল নষ্ট হয়েছে। স্হানীয় মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে ভেঙ্গে যাওয়া ১০টি পয়েন্ট বাঁধা সম্ভব হলেও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের গাতীরঘেরী ও মহারাজপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ দশহালিয়ার পয়েন্ট বাঁধা যায়নি। গত মাসে গাতীরঘেরীর পয়েন্ট বাঁধা সম্ভব হলেও দক্ষিণ দশহালিয়ার পয়েন্ট এখনো অরক্ষিত।
গত বুধবার সরজমিনে দেখা যায়, ভাঙ্গনের পয়েন্ট থেকে নিয়মিত জোয়ারের পানি উঠানামা করায় মৎস্য ঘেরগুলোর মধ্য দিয়ে গভীর খালের সৃষ্টি হয়েছে। নোনা পানির ভিতরে ভাসছে কয়েকটি পরিবার। ঘরের ভিতর পানি উঠায় পাটাতোন তৈরি করে থাকতে হচ্ছে তাদের। সুপেয় পানির নেই কোন ব্যবস্থা।
দশহালিয়ার গ্রামের মেহেরুন্নেছা বলেন, স্বামী সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে আছি। ছয়মাস ধরে পানিবন্দী হয়ে রয়েছি। আমাদের আর কোন জায়গা নেই তাই এই অবস্হায় আছি। গরীব মানুষ জমি কেনার টাকা থাকলে অন্য এলাকায় জমি কিনে এখান থেকে চলে যেতাম। আম্ফানে ডুবে ছিলাম এখনো ডুবে আছি। জানিনা কবে নাগাদ এই অবস্হা থেকে মুক্তি পাবো।
একই গ্রামের চিংড়ি চাষী আলমগীর হোসেন, মতি সরদার, মান্নান শেখসহ আরও অনেকে জানান, বাঁধটি ভাঙার পর এর পরিধি ছিল অল্প। সে সময় উদ্যোগ নিলে সহজেই মেরামত হয়ে যেত। কিন্তু কতিপয় স্বার্থান্বেষির অসহযোগীতার কারণে সম্ভব হয়নি। এখন সেখানে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয়ের আয়োজন চলছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ডিভিশন-২) উপ-সহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন বলেন, দশহালিয়ার পয়েন্ট জরুরি মেরামতের আওতায় কাজ চলমান আছে। খুব শীঘ্রই ওই স্হানে বাঁধ দেওয়া সম্ভব হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে কয়রা উপজেলায় ১০ টি জায়গা ভেঙ্গে গিয়েছিল। দশহালিয়ার পয়েন্ট ছাড়া সবগুলো বাঁধা সম্ভব হয়েছে। তবে দশহালিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি ওই এলাকার মানুষ পানিবন্দী অবস্হা থেকে মুক্তি পাবে।
খুলনা গেজেট/এনএম