নগরীর ইস্টার্ণগেট মশিয়ালী এলাকায় গুলিতে তিনজন নিহতসহ ৮জন গুলিবিদ্ধ ও বিক্ষুব্ধদের গণপিটুনিতে একজন নিহতের ঘটনায় কেএমপি’র অনুসন্ধানী তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। বুধবার (২২ জুলাই) সারাদিন চার সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে এসে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। এদিকে, বহুল আলোচিত হত্যাকান্ডের ছয়দিন অতিবাহিত হলেও হামলায় ব্যবহৃত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এখনও উদ্ধার করতে পারিনি পুলিশ। গ্রেফতার হয়নি মামলার মূল আসামী শেখ জাকারিয়া জাকার ও তার ভাই মিল্টনসহ এজাহারভুক্ত ১৮ আসামী।
অপরদিকে, ট্রিপল মার্ডার মামলায় গ্রেফতারকৃত শেখ জাফরিন হাসান, জাহাঙ্গীর, আরমান ও রহিম রিমান্ডে পুলিশে গুরুত্বপুর্ণ তথ্য দিয়েছে বলে সুত্রে জানাগেছে। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশিনার (অপরাধ) এসএম ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটির অন্য সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার গ্রহন করেন। তদন্ত কমিটির সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) মোঃ আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) কানাইলাল সরকার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) শিপ্রা রাণী দাস প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার গ্রহন ও মূল রহস্য অনুসন্ধান শুরু করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং ঘটনায় আহত কয়েকজন বুধবার সারাদিনে গত ১৬ জুলাইয়ের মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনার নেপথ্যের কারণ বর্ণনা করেন।
হামলার শিকার গ্রামের মৃত আমজাদ শেখের ছেলে মোঃ আজাদ শেখ(৪০) এবং প্রত্যক্ষদর্শী কুদ্দুস শেখের ছেলে রফিক শেখ বলেন, গ্রামের সর্বস্থরের মানুষ জাকারিয়া-জাফরিন-মিল্টন বাহিনীর কাছে জিম্মি থেকে বহু নির্যাতন, নিপীড়ন, হামলা, মামলা সহ্য করে বসবাস করছিল। তাদের নির্যাতনের শিকার গ্রামের সাধারণ মানুষ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কারো সহযোগিতা পায়নি। এমন কি তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ বা তাদের বাহিনীর কোন সদস্যের অপরাধের বিষয় কাউকে কিছু বললে মুহুর্তেই প্রতিবাদকারীর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিতো জাকারিয়া গং। সর্বশেষ ১৬ জুলাই মিল শ্রমিক মুজিবরের বাসায় অস্ত্র-মাদক রেখে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয় জাকারিয়ারা। তখন গ্রামের লোকজন থানার ওসি শফিকুল ইসলামকে জাকারিয়া-জাফরিন-মিল্টন বাহিনীর ষড়যন্ত্রের কথা বলে মুজিবরকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু ওসি গ্রামবাসীর কথায় না ছেড়ে একটি ফোন পেয়ে তাকে থানায় ধরে নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ৮টায় গ্রামবাসী জাকারিয়া-জাফরিনের বাড়ীর সামনে আসলে তাদেরকে লক্ষ্য করে কলাবাগান থেকে জাকারিয়া, জাফরিন, মিল্টন, জিহাদ, রাজুসহ ১৫/১৬ জন অস্ত্র দিয়ে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ ও ককটেল নিক্ষেপ করে; এভাবেই ভয়ঙ্কর সে রাতের বর্ণনা তদন্ত কমিটির সামনে তুলে ধরেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
তারা আরও বলেন, ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মিল শ্রমিক নজরুল শেখ, শেখ গোলাম রসুল নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্র সাইফুল খুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ওই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আফসার শেখ, মোঃ খলিল শেখ, জুয়েল শেখ, মোঃ রবি শেখ, শেখ শামিম, সুজন শেখ, ইব্রাহীম শেখ, রানা শেখসহ ৯/১০ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে আফসার শেখ ও মোঃ খলিল শেখকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠান হয়।
এদিকে, ঘটনার ছয়দিন অতিবাহিত হলেও খলনায়ক জাকারিয়া ও মিল্টন গ্রেফতার না হওয়ায় গ্রামবাসী এখন আতঙ্কিত রয়েছে বলে ক্ষুব্ধ মশিয়ালী গ্রামবাসী। বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণে ব্যবহৃত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রগুলো এখনও উদ্ধার করতে না পারায় দুশ্চিন্তায় এলাকাবাসী।
তদন্ত কমিটির সদস্য কেএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) কানাইলাল সরকার বলেন, এ মামলায় গ্রেফতারকৃত ৪ আসামী রিমান্ডে রয়েছে। বাকীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত তদন্ত ও আগ্নেয়াস্ত্রের অনুসন্ধান চলছে। শিগগরিই সকল রহস্য উন্মোচন হবে বলে আশাবাদী তিনি।
খুলনা গেজেট/এআইএন