সাতক্ষীরায় প্রেমের সম্পর্কে বাঁধা মনে করায় আশাশুনিতে কলেজ পড়ুয়া বন্ধুকে নির্যাতন ও শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে মোবাশ্বির হোসেন নামের এক কলেজ ছাত্রকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদল্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে, আরও দুই বছরের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন। তবে রায় ঘোষণার সময়ে মোবাশ্বির হোসেন আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলো না।
যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামীর নাম মোবাশ্বির হোসেন (২৩) সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বৈকারঝুটি গ্রামের আব্দুল মজিদ মোড়লের ছেলে ও আশাশুনি ডিগ্রী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
মামলার বিবরণে জানা যায়, আশাশুনি উপজেলার বৈকারঝুটি গ্রামের শঙ্কর সরকারের ছেলে চন্দ্রশেখর সরকার ও একই গ্রামের মোবাশ্বির হোসেন ছোটবেলা থেকে একই সাথে পড়ালেখা করতো। শোভনালী নলকুড়া বিলে তাদের দু’জনেরই পৈতৃক একটি মাছের ঘের রয়েছে। চম্পাফুল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আশাশুনি ডিগ্রি কলেজ থেকে একই সাথে এসএসসি ও এইসএসসি পাশ করার পর চন্দ্রশেখর সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ও মোবাশ্বির হোসেন আশাশুনি ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হয়।
এদিকে মোবাশ্বির সাথে একই গ্রামের ইন্দ্রানী ঘোষ ওরফে পাপিয়া নামের এক যুবতীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একজন হিন্দু মেয়ের সঙ্গে একজন মুসলিম যুবকের প্রেম মেনে নিতে পারেনি চন্দ্রশেখর। তাদের প্রেমের এই সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দু’বন্ধুর মধ্যে বাগবিতন্ডা হতো। এর ধারাবাহিকতায় চন্দ্রশেখরকে পথের কাটা ভেবে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে মোবাশ্বির।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর রাতে বাড়ি থেকে চন্দ্রশেখরকে ডেকে বাড়ির পাশের একটি ঘেরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পাপিয়াকে নিয়ে কথা উঠলে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে চন্দ্রশেখরকে মারপিট করতে থাকে মোবাশ্বির। পরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ঘেরের পানির মধ্যে ফেলে দিয়ে আত্মগোপন করেন সে। পরের দিন ওই ঘের থেকে চন্দ্রশেখরের মরদেহ উদ্ধার করে আশাশুনি থানা পুলিশ।
২০ অক্টোবর নিহতের বাবা শঙ্কর সরকার বাদি হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে ছেলেকে হত্যার পর লাশ গুম করার অভিযোগে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই সাতক্ষীরার একটি বাসা থেকে মোবাশ্বিরকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়।
পাপিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে ঘিরে বন্ধু চন্দ্রশেখরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে মর্মে বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলামের কাছে সে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। পরবর্তীতে আদালত থেকে জামিন পেয়ে পালিয়ে যান মোবাশ্বির।
এদিকে, গত বছরের ৩১ মে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গোলাম কবীর মোবাশ্বির হোসেনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পলাতক অবস্থায় লিগ্যাল এইডের আইনজীবী অ্যাড. আনিছুজ্জামান আনিছ আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন।
মামলাটি বিচারের জন্য উক্ত আদালতে প্রেরিত হলে বিচারক প্রয়োজনীয় নথি ও ১৪ জন সাক্ষীর জেরা- জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে আসামি মোবাশ্বিরের বিরুদ্ধে হত্যার পর লাশ গুম করার অভিযোগে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমান, অনাদায়ে, আরও ২বছরের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শঙ্কর সরকার বলেন, তার ছেলের হত্যাকারি মোবাশ্বিরের যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশের রায়ে তিনি খুশী নন। তবে উচ্চতর আদালতে তিনি আপীল করবেন না।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সরকারি কৌসুলি এ্যাড. আব্দুল লতিফ জানান, ঘটনার সময়ে আসামির বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর। বয়স বিবেচনায় তাকে ফাঁসি না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ খুশি বলে জানান তিনি।