আমার কোন স্থান নেই। বাড়িঘর, ছেলে স্বামী, থাকার জায়গা কিছুই নাই। পথে-ঘাটে যেখানে সেখান থ্যাহে বেড়াচ্ছি। আশেপাশের মানুষ একটু সাহায্য দে। তাই দিয়ে ভাড়ায় থাহি আর কোনমতে খ্যায়ে না খ্যায়ে দিন কাটাই। শীতের কোন কাপড় নেই। শীতের কারণে বাইরে বেরোতে পারি না। লেপের ভীতরে পড়ে থাহি। সরকারি সাহায্য একটা বয়স্ক ভাতা আছে। মাসে ৩০০ টাহা পাই। তা দিয়ে কি হয়! খ্যায়ে না খ্যায়ে দিন কাটাই। খুব কষ্ট হচ্ছে।
স্বামী মারা গেছে দেশ স্বাধীন হওয়ার ১০ বছর পর। সেই থেকে কষ্ট শুরু হইছে। ছেলে মেয়ে কেউ নেই, নিঃসন্তান। আত্মীয়-স্বজন বুলতিও কেউ নেই। তেরখাদা উপজেলার কসলু বাপের বাড়ি। সেহানেও সব মরে ছ্যাড়ে গেছে। যে বাড়ি থাহি শুনছি সে বাড়ি বিক্রি করে দিবে। খদ্দের দেখতিছে। যাবানি কোহানে? আমারতো থাহার কোন জাগা নেই। কোথায় যাবানি? সরকারের তে তাই আমারে একটু জায়গা করে দিলে শান্তি মতো থাকতি পাতাম। তা ছাড়া আমার কোনো পথ নেই। আমি এহন কোন স্থানে যাবো? আর সেই চিন্তায় আমার খাহা ঘোম নাই।
এভাবেই খুলনা গেজেটের এ প্রতিবেদকের কাছে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার কষ্টের বর্ণনা দিচ্ছিলেন আশি বছরের ঊর্ধ্বে বয়সী স্বামীহারা, নিঃসন্তান গৃহহীন, ভূমিহীন এক অসহায় বৃদ্ধা। নাম তার স্বরূপ জান। দিঘলিয়া উপজেলার যোগীপোল ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ভাড়ায় থাকেন কুয়েট পকেট গেটের বিপরীতে খানাবাড়ি গার্লস স্কুল সংলগ্ন জনৈক এম এ হাসান নামের এক ভদ্রলোকের পরিত্যক্ত বাড়িতে।
রবিবার (৮ জানুয়ারি) সকালে অসহায় এ বৃদ্ধার খোঁজে তার বর্তমান ঠিকানা এম এ হাসানের পরিত্যক্ত বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় পেলাম। কনকনে শীতের মাঝে শাড়ীর এক টুকরো কাপড় জড়িয়ে সূর্যের দিকে তাকিয়ে ছিলেন উষ্ণতার আশায়। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রচন্ড শীতে ঠকঠক করে কাঁপছিলেন। তার এ দুরাবস্থা সহ্য করতে না পেরে তাৎক্ষণিকভাবে বাসায় এসে ঘরে থাকা নতুন ১টা চাদর নিয়ে বৃদ্ধার গায়ে জড়িয়ে দিলাম এবং স্ত্রী’র গায়ে দেওয়ার ১টা সোয়েটারও হাতে ধরিয়ে দিলাম। কিঞ্চিৎ খুশি হয়ে বৃদ্ধা স্বরূপ জান বললেন, আর কিছু দিবেন না? উত্তরে বললাম, আমি কোনও চেয়ারম্যান, মেম্বর বা সরকারি কর্মকর্তা না, সামান্য একজন সাংবাদিক।
রাতে বৃদ্ধার অসহায়ত্বের এ কাহিনী শোনার পর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক শ্রদ্ধেয় গাজী আলাউদ্দিন আহমদ ভাই অসহায় বৃদ্ধা স্বরূপ জানের জন্য এ প্রতিবেদকের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক একটি কম্বল পাঠিয়ে দিলেন।
সরকারের কাছে স্বরূপ জানের আকুতি ‘আমারে একটু থাহার জাগা করে দিলে শান্তি মতো থাকতি পারতাম। স্বামীহারা, নিঃসন্তান, অসহায়, বৃদ্ধা স্বরূপ জানের আকুতি সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশা।
খুলনা গেজেট/ বিএমএস