খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যমুনায় বিএনপির ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৮
  মার্কিন দূতাবাসে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া
  ধর্মকে কেন্দ্র করে দেশে এমন উন্মাদনা দেখতে চাই না : মির্জা ফখরুল

আগুনের লেলিহান শিখায় বাবু মোড়লের স্বপ্ন পুড়ে ছাই

নিতিশ সানা, কয়রা

নিজের জমানো অর্থ আর ধার-কর্জের টাকা দিয়ে চায়ের দোকান শুরু করি। এক মাস হলো দোকান চালু করেছি। স্বপ্ন ছিল দোকানটাকে বড় করবো, ধার-দেনা পরিশোধ করবো। সংসারে আর অভাব-অনটন থাকবে না। কিন্তু নিমিশেই চোখের সামনে সেই স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেল। এখন কি ভাবে ঋণের টাকা শোধ করবো? সংসার কিভাবে চালাবো, বুঝছি না। এভাবে বলছিলেন কয়রা সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ গ্রামের বাবু মোড়ল। শনিবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে কয়রা উপজেলার দেউলিয়া বাজারে আগুন লেগে তার চায়ের দোকানটি পুড়ে যায়।

চা দোকানী বাবু মোড়ল বলেন, এমন ভয়াবহ আগুন আগে দেখেনি। দেখতে দেখতে মহুর্তের মধ্যে চারিদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। ফায়ার সার্ভিস না আসলে সব শেষ হয়ে যেতো। দিন মুজরির কাজে আর সংসার চলে না৷ তাই নিজের বসতঘরের পাশে এক লাখ টাকা খচর করে একটি চায়ের দোকান চালু করি। তিল তিল করে জমানো ৫০ হাজার টাকা, সুদে ১০ হাজার টাকা ও সমিতি থেকে ৪০ হাজার টাকা লোন নিয়ে দোকান শুরু করেছিলাম। ভালোই চলছিলো, প্রতিদিন ৭০০-৮০০ টাকা আয় হতো। ভালোই চলছিল দোকানের উপার্জিত অর্থ দিয়ে ৮ সদস্যের পরিবার। কিন্তু আগুনে সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

শুধু বাবু মোড়লই নয়, এমন স্বপ্ন পুড়েছে দেউলিয়া বাজারের অনেক ব্যবসায়ীর। এমনই একজন আবু সাইদ। তিনি নিজের বাড়ির সাথে দেড় বছর আগে একটি চায়ের দোকান চালু করেন। তাতে ভালো চলছিল আবু সাইদের পরিবারের ৬ সদস্যের। বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে দুইটা সমিতি থেকে ৪৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি মনিটর ও দোকানের মালামাল তোলেন আবু সাইদ। তবে আগুনে পুড়ে সব ছাই হয়ে গেছে।

এদিকে পাশের দোকানের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে সওকত মোড়লের বসতঘরে পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, ঘর থেকে কিছু বের করার আগেই আহুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। গায়ের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই।

মনিরুজ্জামান মুকুল বাজারের ক্রোকারিজ সামগ্রী ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, পাশের ঘরে আগুন লাগা দেখে দোকানের মালামাল বের করার চেষ্টা করলেও বের করতে পারিনি। আগুনের তীব্রতা অনেক বেশি ছিল। মুহূর্তেই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কয়রা বাজারে ভাড়া বেশি হওয়ায় দেউলিয়া বাজারে এবছর দোকান এখানে নিয়ে আসছি। দোকানে থাকা প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছুই রক্ষা করতে পারিনি।

খুলনার কয়রার সদর ইউনিয়নের দেউলিয়া বাজারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মোট ১০টি বসতঘর, দোকান ও গোডাউন পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। শ‌নিবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাজারে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের একঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ফায়ার সা‌র্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় বাসিন্দা আফজাল ও ম‌নিরুল ইসলা‌মের মৎস্য ব্যবসার ঘরে থাকা ককসেট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে পাশ্ববর্তী একটি দোকানে রাখা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের লেলিহান শিখা তীব্র আকার ধারণ করে। এসময় স্থানীয় শত শত মানুষ আগুন নেভাতে এগিয়ে আসে। দু’দিন আগে কয়রায় আসা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুনের শিখা দেখে তাৎক্ষণিক ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের প্রায় একঘন্টার অ‌ভিযানের পর আগুন নেভানো সম্ভব হয়। কোন মানুষ হতাহত না হলেও আসবাবপত্র, অবকাঠা‌মোসহ বসতঘর ও দোকানের মালামাল পুড়ে ব্যাপক ক্ষ‌তি হয়।

কয়রা স্টেশ‌নের ফায়ার সা‌র্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, দেউলিয়া বাজারে ধোয়া উড়তে দেখে শনিবার দুপুর ১২ টা ৪০ মিনিটে ঘটনাস্থলে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করি। এক ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। তবে তার আগেই বাজারের ৬টি দোকান, ২টি বসতঘর ও ২টি গোডাউন পুড়ে যায়।

খুলনা গেজেট/ এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!