সরকারি বিধি নিষেধ আর প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করেই সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বিভিন্ন সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ডাম্পার ট্রাক। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ফিটনেসহীন এসব ডাম্পার ট্রাক পৌর এলাকাসহ আশপাশের সড়কগুলোতে ছুটছে বেপরোয়া গতিতে।
অভিযোগ রয়েছে প্রশিক্ষিত চালকের পরিবর্তে উঠতি বয়সী তরুণ আবার অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের দিয়ে চালানো হচ্ছে এসব ডাম্পার ট্রাক। মূলত ইট ভাটার মাটি টানার কাজে ব্যবহার হচ্ছে গ্রামীণ সড়কে চলাচল নিষিদ্ধ এসব যানবাহন। তাতে সড়কে চলাচলকারী সাধারণ পথচারীদের জন্য যেমন ঝুঁকি বৃদ্ধ পাচ্ছে, তেমনি অবৈধ এসব গাড়ী চলাচলে সড়কসমূহ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে।
উপজেলার সোনারমোড় এলাকার আব্দুল গফফার ও শিশির মোড়ল জানান, অপরিপক্ক চালকের হাতে ডাম্পার ট্রাকের ‘স্টিয়ারিং’ তুলে দেয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। ইতিপুর্বে সোনারমোড় এলাকায় একটি ডাম্পার ট্রাকের চাকা খুলে নানীর সাথে বাড়িতে ফিরতে থাকা এক শিশু ঘটনাস্থলে নিহত হন।
তাদের অভিযোগ গ্রামীণ সড়কে ডাম্পার ট্রাক চালানোর সুযোগ নেই। অথচ ইট ভাটা মালিকরা প্রভাব খাটিয়ে সরকারি নিয়ম নীতিকে তুচ্ছজ্ঞান করে ব্যস্ততম সড়কে ডাম্পার ট্রাক চালানো অব্যাহত রেখেছে।
গোমনতলী গ্রামের আকবর আলী গাজী জানান, ইট ভাটা মালিক বেলাল সাহেব গত চার মাস ধরে গোমনতলী এলাকা থেকে চিংড়ি ঘের থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে তার ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। এসময় উক্ত মাটি পরিবহনের কাজে তিনি পাঁচ/ছয়টি ডাম্পার ট্রাক ব্যবহার করেন। তবে ডাম্পার ট্রাকের চলাচলে কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকলে গ্রামবাসীরা বাধা দেন। তবে এসময় বেলাল সাহেব তাদেরকে চাঁদাবাজির মামলার আসামী করার ভয় দেখিয়ে দীর্ঘ চার মাসেরও বেশী সময় ধরে একই সড়কে ডাম্পার ট্রাক পরিচালনা করে উক্ত সড়কের ব্যাপক ক্ষতি করেছেন। বৃহদাকার চাকার ডাম্পার ট্রাক চলাচলের কারনে যাতায়াতের জন্য ব্যস্ততম সড়কগুলোতে নানা ধরনের যানযট সৃষ্টির পাশাপাশি দুর্ঘটনার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও দাবি তাদের।
নবকুমার বিশ্বাস নামের ঈশ্বরীপুর গ্রামের এক তরুণ জানান, তাদের ঈশ্বরীপুর এ সোবহান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে ডাম্পার ট্রাক বেপরোয়াভাবে চলাচল করায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকছে। বার বার নিষেধ করা সত্বেও কোনভাবে তাদের বিদ্যালয়ের সামনের সড়ক দিয়ে ডাম্পার চলাচল আটকানো যাচ্ছে না।
একই ধরনের কথা জানান হাটচালা গ্রামের আব্দুর রহিম ও বাদশাসহ কয়েক গ্রামবাসী। তাদের অভিযোগ সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রতি বছর রাস্তা তৈরি করলেও ডাম্পার ট্রাকের দরুণ বছর ঘুরতেই একই সড়ক ভাঙনের মুখে পড়ছে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ইট ভাটা মালিকদের নিকট থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে রাতদিন সার্বক্ষনিক ডাম্পার ট্রাক চলাচলে সহযোগীতা করছেন বলেও তাদের অভিযোগ।
এমতাবস্থায় তারা গ্রামীণ ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবৈধ ডাম্পার ট্রাক চলাচল বন্ধে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের জরুরী হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন জানান, মানুষের যানমালের জন্য ঝুঁকি তৈরি হয় এমন কোন কাজ কেউ করতে পারবে না। সবাইকে আইন মেনে চলতে হবে- উল্লেখ করে তিনি বলেন নীতিমালার বাইরে যেয়ে গ্রামীণ সড়কে ডাম্পার ট্রাক চললে প্রচলিত আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম