যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। ২৪ ঘন্টায় ২৬ জন ডেঙ্গু রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনই কেউ না কেউ মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ২৬ জন ডেঙ্গু রোগী নতুন ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া অনেকে যশোর ও খুলনায় চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। কেউ কেউ বাড়িতেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও উদাসীনতায় এ উপজেলায় মশাবাহিত এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে চলেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নওয়াপাড়া পৌরসভার প্রায় সকল ওয়ার্ডেই বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়া দূর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং ড্রেন গুলো সঠিক নিয়মে পরিস্কার না করার কারণে জলাবদ্ধতা বেড়েই চলেছে। ফলে এসকল স্থানে জন্ম নিচ্ছে ডেঙ্গু রোগের বাহক ভয়ংকর এডিশ মশা।
তাছাড়া শিল্প-বাণিজ্য ও বন্দর নগর নওয়াপাড়ার পৌর এলাকায় অধিকাংশ বাসা বাড়ির সদস্যরা ছাদ বাগান ও ইনডোর প্লান্টের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কিন্তু সচেতনতার অভাবে এসকল গাছের টব গুলো দিনের পর দিন পরিস্কার না রাখা এবং পানি পরিবর্তন না করায় এসকল টবে এডিশ মশা বংশ বিস্তার লাভ করছে। ফলে দিন গেলেই এ উপজেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেয়া তথ্যমতে, ২৪ ঘন্টায় ২৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নতুন রোগীদের মধ্যে পুরুষ রোগী ১৭ জন আব বাকী রয়েছেন মহিলারা।
তারা হলেন, উপজেলার পুড়াখালী এলাকার সালমা বেগম (৩৪) ছায়রা বেগম(৩৬) তিসা আক্তার (৩), লক্ষীপুর এলাকার কবির হোসেন (২২), রিপা খাতুন(২৮), সুন্দলী গ্রামের অধরা মন্ডল (১১), বাঘুটিয়া গ্রামের আক্কেল শেখ (৬৫) সজল হোসেন, (২৩), লিটন রহমান (৪০), লেবুগাতী গ্রামের সেলিম হোসেন (২৪)শেখ সাদি (২০), আকলিমা বেগম (২৪), বাগদা এলাকার লতিফা বেগম, (৩৫), দেয়াপাড়া এলাকার সেলিনা বেগম(২৩) সজিব হোসেন (১৮), চলিশিয়া গ্রামের হাজেরা আক্তার (২৯), সুমাইয়া খাতুন (১৩), মধ্যেপুর গ্রামের দাউদ আলী(৩৫) জব্বার খান (৬৫), হুমায়ুন কবির (১৮), মফিজুল ইসলাম (৩৫), মনোয়ারপুর এলাকার অনিক (২০), মেহেদী হাসান রনি(২৭),পাচাঁখড়ি গ্রামের শহিদুল ইসলাম (৩৪) রিমন হোসেন (১২), নওয়াপাড়া গ্রামের মিলন হোসেন(২৬)। এছাড়াও ১০ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়িতে চলে গেছেন। মাহতাব হোসেন নামের এক ডেঙ্গু রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
ডেঙ্গু রোগী সালমা বেগম, ছায়রা বেগম বলেন, ডেঙ্গু পজেটিভ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। গেল বছর এ উপজেলায় কোন ডেঙ্গু রোগী ছিল না। তবে এ উপজেলায় মশক নিধণ কার্যক্রম তেমন চোখে পড়েনি। যে কারণে প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে।
কর্তব্যরত চিকিৎসক মোঃ সবুজ বলেন, কোনোভাবেই কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শিশু-কিশোর, বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষ এ রোগের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। ডেঙ্গু উপসর্গ দেখা দিলে ভয় আর আতঙ্ক নয় তাৎক্ষণিক হাসপাতালে এসে চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা নিতে হবে। এ ছাড়াও বাসাবাড়িতে এডিস মশার লার্ভা যাতে না হয়। সে ব্যপারেও সতর্ক থাকার পাশাপাশি ঘুমানোর সময় মশারির ব্যবহার করার কথা জানান ওই চিকিৎসক।
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাহামুদুর রহমান রিজভী বলেন, সম্প্রতি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ২৬ জন ডেঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হলেও এর বাইরে অসংখ্য ডেঙ্গু রোগী রয়েছেন বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন। অনেকে ডেঙ্গু জ্বরকে সাধারণ জ্বর মনে করে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অধিকাংশ সুস্থ্য হয়ে উঠছেনও। তবে পরবর্তীতে শারীরিক দূর্বলতাসহ নানা জটিলতা নিয়ে অনেকেই হাসপাতালে আসছেন। যাদের শারীরিক অবস্থায় ডেঙ্গু রোগীর লক্ষন স্পষ্ট। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সকলকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ডেঙ্গু ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি পৌর কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে। সেই সাথে বাসা বাড়ির ফ্রিজ, এসি, গাছের টবসহ তৈজসপত্রাদীতে জমে থাকা পানির ব্যপারে সচেতন থাকতে হবে। এসকল পানিতে বেশি পরিমাণ এডিশ মশার জন্ম হয় বলে তিনি দাবি করেন। পাশাপাশি মশক নিধন কার্যক্রম, জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ জলাব্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকার অনুরোধ করেন তিনি।
নওয়াপাড়া পৌরসভার মেয়র সুশান্ত কুমার দাস বলেন, পৌর এলাকার প্রতিদিন ৪টি ওর্য়াডে মশক নিধন মেশিন দিয়ে স্প্রে করা হয়।
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর বলেন, এখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি রোগী দেখা দিয়েছে। প্রথমে এখানে প্রতিরোধে তেমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ডেঙ্গুর ভয়বহতা সম্পর্কে
আমরা জেনেছি। সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এসজেড