খুলনা মহানগরসহ সারা দেশের সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন শ্রেণিতে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। করোনা পরিস্থিতিতে এ বছর বিদ্যালয় থেকে ভর্তি ফরম বিতরণ না করে আবেদন শুধুমাত্র সরকারী ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নেয়া হচ্ছে। তবে সরকারি কড়াকড়ি নিয়মের কারণে ১১ বছরের কম বয়সী শিশুরা এবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে আবেদন করতে পারছে না। সরকারি বিদ্যালয়ে অনলাইন আবেদনের ক্ষেত্রে বয়স নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
অভিভাবকদের অভিযোগ, পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ অসংখ্য শিক্ষার্থী ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদনের কোন সুযোগ পাচ্ছে না । নীতিমালায় যেসব শিক্ষার্থীর বয়স জন্ম সনদে ১১ বছরের কম রয়েছে তাদের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীর নির্ধারিত বয়সের কম হলে অনলাইনে আবেদন করা যাচ্ছে না। ফলে অসংখ্য শিক্ষার্থীর ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তির আবেদন শুরু হলেও বয়সের জটিলতার কারনে ৫ম শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ ১১ বছরের কম বয়সী শিশুরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারছেনা।
অভিভাবকরা অনলাইনে ভর্তির আবেদনের জন্য বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে গেলে যাদের বয়স ১১ বছরের কম তাদের নাম সফটওয়্যার নিচ্ছে না। ফলে অনেকেই পরে সমস্যা হয় কিনা- সেই ভয়ে আবেদন করছে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নতুন নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে তারা। অনেকে সংশ্লিষ্ট পৌরসভা এবং ইউনিয়নে বয়স সংশোধনের চেষ্ট করেও পারেননি।
অন্যদিকে জন্ম সনদের তারিখ পরিবর্তন করে কোন কোন অভিভাবক আবেদন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ভর্তি নীতিমালার বাইরে গিয়ে কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত খুলনা জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ সাদিকুর রহমান খান।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালায় বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ৬ বছরের বেশি হতে হবে। সে হিসেবে দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণির ভর্তির বয়স নির্ধারিত হবে। তবে ভর্তির বয়সের ঊর্ধ্বসীমা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় নির্ধারণ করবে।
খুলনা নগরীর দৌলতপুর বিএল কলেজ রোড, বয়রা বাজার, মহশেশ্বরপাশা বাজারসহ বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, আবেদন করতে আসা অনেকেই বয়স কম হওয়ায় আবেদন সম্পন্ন করতে পারেননি।
মহেশ্বরপাশা কালিবাড়ির কম্পিউটার দোকানদার উজ্জলের শেখের সাথে কথা বলে জানা যায়, বয়স কম হওয়ায় আবেদন করতে আসা এমন অনেকেই আবেদন করতে পারেনি।
খুলনা সদরের কৃষ্ণমোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি সৈয়দ আনিসুজ্জামান বলেন, স্কুলে ভর্তির বিষয়ে সরকারি নির্দেশনার কথা বললেও কিছু অভিভাবকদের জোরাজোরিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করে তারাই এখন সমস্যার সম্মুখিন।
দৌলতপুর পাবলা এলকার নিতাই নামে এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, বিগত বছরগুলোতে সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনের ক্ষেত্রে এভাবে বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি।
এ সম্পর্কে খুলানা সদর থানা শিক্ষা অফিসার শেখ মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, ভর্তি নীতিমালা ঠিক করে দেয়া হয়েছে কত বছর পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কোন শ্রেণিতে আবেদন করতে পারবে। নীতিমালার বাইরে গিয়ে কিছু করার নেই। নীতিমালার মধ্য থেকে যারা আবেদন করতে পারবে, শুধু তারাই আবেদন করবে। বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় অভিভাবকগণ সরকারি নির্দেশনা না মেনে ভর্তির সময়ে শিক্ষকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে ভর্তি করবে আর সমস্যা হলে তখন কর্তৃপক্ষের দোষ দিবে সেটাতো হবেনা।
তবে অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন, ভর্তির জন্য যে সার্ভার রয়েছে সেটা এখন বন্ধ থাকায় ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে শিশুদের অনলাইনে ভর্তি করা যাচ্ছেনা।
আবার কোন কোন অভিভাবক বলেন, প্রাইমারি স্কুল কর্তৃপক্ষ সরকারি নিয়ম জেনেশুনে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করলেও কখনও কোনো সংশোধনী বা সমস্যার কথা বলেননি। এখন সেই শিক্ষার্থী যদি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে না পারে তাহলে এ দায়ভার কে নেবে?
খুলনা গেজেট/কেএম