দাবি আদায়ে টানা ৯ম দিনের মতো খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এ অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। কুয়েট শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স এসেসিয়েশন, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতি স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার কেন্দ্রের বারান্দায় পৃথকভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য সুপার গ্রেড কার্যকর এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঘোষিত কর্মসূচির সাথে একাত্মতা পোষণ করে কুয়েট শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মবিরতি পালনের সাথে চলছে প্রতিদিন অবস্থান কর্মসূচি।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বেলা ১২ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত চলা এই অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল হাসিব। সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মোঃ আলমগীর হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড.এম এম এ হাসেম, প্রফেসর ড. আশরাফুল গনি ভূঁইয়া, প্রফেসর ড. শাহাজাহান আলী, প্রফেসর ড. মোঃ হাবিবুর রহমান, প্রফেসর ড.হেলাল-আন-নাহিয়ান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ একরামুল হক, মোঃ সোহাগ হোসেন প্রমুখ।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তৃতাকালে শিক্ষকেরা তাদের ন্যায্য দাবি সরকার মেনে না নেওয়া পর্যন্ত কর্ম বিরতি এবং অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল হাসিব ও সাধারণ সম্পাদক ড. মোঃ আলমগীর হোসেন অবস্থান কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তৃতাকালে বলেন, আমাদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে আমাদেরকে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করে দিন।
এদিকে একই দাবিতে টানা ৯ম দিনের মতো কুয়েট অফিসার্স এসোসিয়েশন, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমিতি যৌথভাবে সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালনের পাশাপাশি অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকাল সাড় ১০ টা থেকে বেলা সাড়ে ১২ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার কেন্দ্রের বারান্দায় অনুষ্ঠিত এ অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন অফিসার্স এসোসিয়শনের সভাপতি প্রকৌশলী মোঃ আসলাম পারভেজ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোঃ রুমেন রায়হান, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি মোঃ রোকনুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব, কর্মচারী সমিতির সভাপতি এরশাদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাসিবসহ এসোসিয়েশন ও সমিতির নেতৃবৃন্দ।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তৃতাকালে নেতৃবৃন্দ তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যায় ব্যক্ত করেন।
সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কর্মচারীদের এই আইনের আওতামুক্ত রাখা এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রণীতব্য প্রহসনের অভিন্ন নীতিমালা প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলাদেশ আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ফেডারেশন (বাআবিকফ) এর সাথে একাত্মতা পোষণ করে কর্মচারী সমিতির পক্ষ থেকে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে।
উল্লেখ্য, এর আগে দাবি আদায়ে কুয়েট অফিসার্স এসোসিয়েশন ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতি অর্ধ দিবস কর্মবিরতি, মৌন মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
দাবি আদায় সম্পর্কে কুয়েট অফিসার্স এসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুমেন রায়হান খুলনা গেজেটকে বলেন, সর্বজনীন পেনশনের যে স্কিম সরকারের একটি মহল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির যে উদ্যোগ নিয়েছে এটা নিয়ে আমাদের ঘোর আপত্তি রয়েছে। ২০১৫ সালের পর থেকে আমাদের কোন বেতন কাঠামো দেওয়া হয় নাই। এর মধ্যে যে পরিমাণ মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদেরকে বাদ দিয়ে প্রত্যয় স্কিম করা হয়েছে। যেখানে আমাদের এককালীন টাকার কথা বলা নেই, আমাদের গ্রাইচুটির কথা বলা নেই, প্রভিডেন্ট ফান্ডের কথা বলা নেই।
তিনি বলেন, আমরা সবাই আশাবাদী থাকি চাকরি রিটারমেন্টের পরে একালীন কিছু টাকা পাবো, যে টাকা দিয়ে শেষ বয়েসে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারবো। কিন্তু সেই পেনশন থেকে আমাদের আজ অব্যাহতি দিয়ে প্রত্যয় স্কিম করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের এ ন্যায্য দাবি আদায় না পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
খুলনা গেজেট/এনএম