খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা
বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিতে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেব : আইনমন্ত্রী

‘৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণ মামলা না নেওয়া বিচারকের পর্যবেক্ষণ বেআইনি ও অসাংবিধানিক’

গেজেট ডেস্ক

৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণ মামলা না নেওয়ার জন্য বিচারক যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

শনিবার সুপ্রিম কোর্টে এক দোয়া মাহফিল শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

আইনমন্ত্রী জানান, প্রধান বিচারপতির কাছে এ বিষয়ে আগামীকাল (রোববার) চিঠি দেওয়া হবে।

গত ১১ নভেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার দেশব্যাপী তুমুল আলোচিত রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ মামলার রায় দেন। রায়ে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেন আদালত। এই মামলায় কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বিচারক। আদালত বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলায় অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। অযথা আদালতের সময় নষ্ট করা হয়েছে।

আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। পুলিশ যেন ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর কোনো ধর্ষণের মামলা না নেয়।

পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, মামলার দুই ভুক্তভোগী আগে থেকেই সেক্সুয়াল (যৌন) কর্মে অভ্যন্ত। অহেতুক তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন। এতে আদালতের ৯৪ কার্যদিবস নষ্ট হয়েছে। এরপর থেকে পুলিশকে এ বিষয় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এরপর থেকে ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর যদি কেউ মামলা করতে যায় তা না নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

আদালতের এমন পর্যবেক্ষণে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরাও ক্ষোভ ঝাড়ছেন। রাজধানীতে কর্মসূচিও পালন করা হচ্ছে। মধ্যরাতে রাজধানীতে মশাল জ্বালিয়ে পদযাত্রা করা হয়েছে। ‘চরিত্রের প্রশ্নে বিচারহীনতা রাষ্ট্র আর কত দিন’ স্লোগানকে সামনে রেখে ‘শিকল ভাঙা’র এই পদযাত্রার সময় নারীরা ‘রাজপথে নারীর সাড়া জাগরণ নতুন ধারা’, ‘ঘুম ভাঙানো মাসিপিসি চলো পুরুষতন্ত্র পিষি’, ‘আর কত আজব ইনকিলাব হোক আসল ইনকিলাব’ ‘৭২ ঘণ্টা পার হলে ধর্ষণ ন্যায্য?,’ ‘চরিত্রের প্রশ্নে বিচারহীন, আর কত দিন’, ‘চলন-বলন-পোশাক রাখো, রাষ্ট্র এবার দায় নাও’, ‘পুরুষের ক্ষমতা, ভেঙে হোক সমতা’, ‘পথে-ঘাটে দিনে-রাতে, চলতে চাই নিরাপদে- ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

শাহবাগ জাদুঘরের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে সিটি কলেজ, কলাবাগান হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে শেষ হয়। পরে সংসদ ভবনের সামনে প্রতিবাদী সমাবেশে নারীরা তাদের দাবি তুলে ধরেন৷ এ সময় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রেহনুমা ইসালম, শিল্পী কৃষ্ণ কলি ইসলাম, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা, আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীরা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ বলেন, ‘আইনের যে ধারা বাতিলের দাবিতে আমরা একত্রিত হয়েছি- তা যে কত জরুরি সে বিষয়টি রেইনট্রি মামলার রায়ে প্রমাণিত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একবিংশ শতকে এসে একটি স্বাধীন দেশে এ ধরনের রায় হতে পারে না, যেখানে কিনা বিচারক বলেন যে যারা অভিযোগ এনেছেন তাদের যৌন সম্পর্কের অভিজ্ঞতা আছে। আদালতের বিচার করার কথা, ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট (চারিত্রিক সনদ) দেওয়ার কথা না। এই বিচারক ভেবে বসেছেন তার দায়িত্ব হচ্ছে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দেওয়া।’

‘বিচারক পুলিশকে বলছেন- ৭২ ঘণ্টার পরে ধর্ষণ মামলা না নিতে’ উল্লেখ করে অধ্যাপক রেহনুমা প্রশ্ন করেন, ‘তার মানে ধর্ষণ করে ৭২ ঘণ্টা মেয়েকে আটকে রাখলেই পুলিশ আর মামলা নেবে না?’

 

খুলনা গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!