সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে উত্তাল আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের অংশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করে সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ প্রবাসী বাংলাদেশিকে অবশেষে ক্ষমা করে দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। এমন খবর প্রকাশ হওয়ার পরই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতী সরকারসহ সক্রিয় আন্দোলনে সঙ্গে যুক্ত সবার মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। তাৎক্ষণিক এক চিঠিতে আমিরাতের সর্বোচ্চ নেতা শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আন্দোলনকারীদের সুপারিশে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) লেখা ওই চিঠির শুরুতে জায়েদ আল নাহিয়ানের প্রতি সালাম জানান ড. ইউনূস। সম্প্রতি বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে সংহতি জানিয়ে আমিরাতে গ্রেপ্তার এবং সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ বাংলাদেশিকে মুক্তি দেয়ায় আপনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমাদের পক্ষ থেকে ফোনালাপের প্রেক্ষিতে তাদেরকে সাজা থেকে মুক্তি দিয়ে আপনি ফের আপনার মহানুভবতা এবং সহমর্মিতামূলক নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ক্ষমার এই অনন্য দৃষ্টান্তের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় এবং জোরদার হবে।
প্রবাসী ৫৭ বাংলাদেশির সাজা মওকুফে আপনার মহানুভবতার্পূণ এই সিদ্ধান্ত তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে গভীর স্বস্তি ও আনন্দ ফিরিয়ে দিয়েছে। এতে আন্দোলনে সংক্রিয় ব্যক্তিবর্গ, দেশের আপামর জনসাধারণসহ আমিরাতে বসবাসকারী প্রবাসীদের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সেই সঙ্গে আমিরাতের আইনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে বলছি, প্রবাসীদের আমরা আমিরাতের নিয়মনীতির বিষয়ে আরও সচেতন করে তুলবো।
শেষে আবারও বলছি, আপনার এমন মহানুভবতাপূর্ণ সিদ্ধান্তে দুই দেশের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।
এদিকে শিগগিরই এই বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। তবে নির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানাননি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফেডারেল আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ৫৭ বাংলাদেশিকে আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ক্ষমা করেছেন। শিগগিরই তাদের বাংলাদেশে পাঠানো হবে।
দুবাইভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক খালিজ টাইমস জানিয়েছে, দণ্ডপ্রাপ্ত এই বাংলাদেশিদের সাজা কার্যকর বন্ধ এবং দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরুর আদেশ জারি করেছেন আরব আমিরাতের অ্যাটর্নি জেনারেল চ্যান্সেলর ড. হামাদ আল শামসি।
গত জুলাই মাসে বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করেন এই ৫৭ জন প্রবাসী বাংলাদেশি। দেশটিতে যেকোনো ধরনের বিক্ষোভ নিষিদ্ধ হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করে আমিরাত কর্তৃপক্ষ।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত ১৯ জুলাই সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ওই বিক্ষোভ করেন। পরে আবুধাবির ফেডারেল কোর্ট অব আপিল এই ৫৭ জন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন, ৫৩ জনকে ১০ বছর এবং বাকি একজনকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
খুলনা গেজেট/এমএম