খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়ে তিন গুণেরও বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। হাসপাতালটি ৫০০ শয্যার হলেও ভর্তি করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬৫৫ রোগী। শয্যা খালি না পেয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা অবস্থান নিয়েছেন হাসপাতালের মেঝে-বারান্দায়। শুধু সাধারণ রোগীই নয়, একই অবস্থা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদেরও।
এ অবস্থায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীদের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে দিনের পর দিন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতেও লাগে দীর্ঘসময়।
রোববার (১৬ জুলাই) খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইতিহাসে আজ সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬৫৫ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। এর আগে শনিবার (১৫ জুলাই) রোগী ভর্তি চিকিৎসাধীন ছিল ১ হাজার ৫৫৬ জন। এক দিনের ব্যবধানেই বেড়েছে ৯৯ জন রোগী। আর শুক্রবার (১৪ জুলাই) ছিল ১ হাজার ৫০৫ জন রোগী।
হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে, ব্লাড ব্যাংকের সামনের বারান্দা, দুই, তিন ও চার তলায় লিফটের সামনেও শুয়ে আছেন অসংখ্য রোগী। ফাঁকা নেই কোনো মেঝে-বারান্দা। হাসপাতালের বিছানা না থাকায় কাঁথা কিংবা মাদুরের ওপর শুয়ে আছেন রোগীরা। মাঝখানের এক-দেড় ফুট খালি জায়গা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে রোগীর স্বজন ও হাসপাতালের লোকজন। ৫০০ শয্যার জন্য বরাদ্দ ওষুধ ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে তিন গুণেরও বেশি রোগীকে।
বাগেরহাটের মঈন ইসলাম বলেন, জ্বর দেখা দিলে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। সেখানে পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ওই হাসপাতাল থেকে খুলনায় পাঠানো হয়। শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। তবে সিট পাইনি। অনেক ঘুরে মেঝেতে একটু ফাঁকা জায়গা পেয়েই মাদুর বিছিয়ে ও মশারি টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছি। চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্র লিখছেন। প্যারাসিটামল দিচ্ছে। তবে অধিকাংশ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এখানে চিকিৎসকের পদ ৫০০ শয্যা অনুপাতে ৩০০টি, কিন্তু এর মধ্যে আবার ৯২টি পদ শূন্য রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল কাঠামো এখনও ২৫০ শয্যা অনুপাতে রয়েছে। সেখানেও ২২৬টি পদের মধ্যে ১৪৪টি শূন্য। এ ছাড়া নার্সের ৯টি পদ শূন্য রয়েছে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়ে তিনগুণের বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এতো রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শয্যা সংখ্যার অতিরিক্ত হাজারেরও বেশি রোগী মেঝেতে রয়েছে। তাদের শয্যা দিতে না পারাটা অমানবিক। কিন্তু কিছুই করার নেই।
রোগী বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের সেবা ভালো হওয়া, অস্বচ্ছলতা আর বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় রোগী বাড়ছে। এ বিভাগের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি আশপাশের জেলা থেকেও রোগীরা আসছেন। সাধারণ অসুখ হলে আশে পাশের সরকারি হাসপাতালে বা ক্লিনিকে চিকিৎসা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করছি।
খুলনা গেজেট/এমএম