আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে ‘সরকারের ফাঁদ’ হিসাবে দেখছে বিএনপি। আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিতে এ কৌশল নিয়েছে বলে মনে করছে দলটি। তাই এই পাতা ‘ফাঁদে’ পা না দিয়ে ভিন্ন কৌশলে এগোতে চায় মাঠের বিরোধী দল। সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক দফা আন্দোলনের দিকেই মনোযোগ তাদের।
ইতোমধ্যে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চ‚ড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক এ তথ্য জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। এটা দলের সিদ্ধান্ত। তাই সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সরকারের পাতানো ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। এ ফাঁদ আমরা উলটে ফেলে দেব। দাবি আদায়ে সামনে আন্দোলনের কর্মসূচি আসবে। আন্দোলন হবে একটাই-সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।’
দলটির একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন-খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করার সময় হওয়ার আগেই ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আবার এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও এমন সময় নিতে যাচ্ছে, যখন বিএনপির আন্দোলন চলবে। ক্ষমতাসীন দল কৌশল করেই এই সময়টাতে পরীক্ষা ও নির্বাচন দিয়েছে। তারা ইচ্ছে করলে দু-তিন মাস পিছিয়ে দেওয়ারও সুযোগ ছিল।
নেতারা আরও বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনেই যাবে না বিএনপি। পাঁচটি সিটি নির্বাচনে দলীয় পদে থেকে মেয়র পদে বিএনপির কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবেও অংশ নেবে না। বিএনপির কাছে তথ্য রয়েছে-কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘উকিল’ মার্কা নির্বাচন করতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এজন্য সংশ্লিষ্ট সিটির বিএনপি নেতাদের মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে চাপ দেওয়া হচ্ছে।
তবে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো নেতাই যাবেন না। পদে থেকে নির্বাচনে অংশ নিলে বহিষ্কার করা হবে-দলের এমন সিদ্ধান্তের কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কাউন্সিলর পদে প্রতীক না থাকায় তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই দলের। কাউন্সিলরের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাই। অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সৃষ্টিই হয়েছে ক‚টকৌশল করে তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে। যারা জন্ম থেকেই ক‚টকৌশলের মাধ্যমে ক্ষমতার চেয়ারে বসতে আগ্রহী, তারা অন্য যোগ্য প্রতিদ্বন্দীর কেউ যাতে ক্ষমতার চেয়ারে আসতে না পারে সেজন্য আরও বেশি বেশি ক‚টকৌশল করবে-এটাই স্বাভাবিক। এরই একটি নমুনা এই পরীক্ষা ও পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। অথচ সব সিটি নির্বাচনের মেয়াদ এখনও বহুদিন বাকি। তারপরও নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে এ সরকার আগাম নির্বাচন দিয়ে দিল। এই সময়টায় সাধারণত এসএসসি পরীক্ষা কখনও হয় না। তারপরও তারিখ ঠিক করে দিল। সুতরাং আমরাও এবার দেখব পরীক্ষা, না স্থানীয় সরকার নির্বাচন নাকি জাতির গণতন্ত্রের মুক্তি-কোনটা মানুষ চায়। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন থেমে থাকবে না। ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অধ্যায়ের ৩৪(১) এর ‘খ’ ধারা অনুযায়ী, নির্বাচনের সময় হচ্ছে করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে, উক্ত মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ (৬ মাস) দিনের মধ্যে। সিটি নির্বাচনের মেয়াদের ক্ষেত্রে ওই আইনে বলা আছে, ‘করপোরেশনের মেয়াদ উহা গঠিত হবার পর উহার প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ হতে পাঁচ বছর।’
ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২৫ মে, খুলনা ও বরিশাল সিটিতে ১২ জুন এবং রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে ২১ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আইন অনুযায়ী মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রথম সভার দিন থেকে পাঁচ বছর সময়কালকে তাদের মেয়াদ ধরা হয়। গাজীপুরের মেয়াদ শেষ হবে ১০ সেপ্টেম্বর, খুলনা হবে ১০ অক্টোবর, বরিশালে ১৩ নভেম্বর, রাজশাহী হবে ১০ অক্টোবর এবং সিলেট হবে ৬ নভেম্বর।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ঘোষিত শিডিউল অনুযায়ী নির্বাচনের ফলে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত বসে থাকতে হবে। অর্থাৎ তারা শপথ নিতে পারবেন না। ফলে পাঁচটি সিটি নির্বাচন অনায়াসে পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু সরকার মনে করছে, দুই ঈদের মাঝখানে বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন চরমমাত্রায় নিয়ে যেতে পারে। এমন আশঙ্কা থেকে সরকার এভাবে আগাম নির্বাচন করার ফাঁদ পেতেছে। যাতে সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে নির্বাচনি ডামাডোলে আটকে রাখা যায়।
লক্ষীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘আন্দোলনকে ভিন্ন খানে প্রবাহিত করার জন্য সরকারের কোনো ধরনের ক‚টকৌশলে আর কাজ হবে না। আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। তৃণমূলের সব ইউনিট শক্তিশালী। ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করার জন্য আমরা মাঠে-ময়দানে প্রস্তুত আছি।’