খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৮৩
  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

৩৭০ টাকায় লাখপতি কৃষক শরিফুল

চৌগাছা প্রতিনিধি

মাত্র ৩৭০ টাকা বিনিয়োগ করে এখন লাখপতি চৌগাছার কৃষক শরিফুল ইসলাম। কিনেছেন জমি, তৈরী করেছেন পাকাবাড়ি, দুই সন্তানকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। সব কিছুই হয়েছে একটি মাত্র ছাগলের কল্যানে। বর্তমানে তিনি পালন করছেন ৪০ টি গাড়ল, ৬০ টি ছাগল আর ৭টি গরু।

উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের খড়িঞ্চা নওদাপাড়া গ্রামের মৃত আইসের আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম (৪২)। এক সময় কৃষি কাজ করেই চলত তার সংসার। প্রায় ৮ বছর আগে নিজ গ্রাম থেকে ৩৭০ টাকা দিয়ে একটি ছাগল ক্রয় করেন তিনি। ছোট্ট ছাগলটি অতি যত্নে লালন পালনে বড় করে তোলেন। এক সময় সেই ছাগল ২টি বাচ্চা দেয়। মা ছাগল ও তার বাচ্চাদের নিজের সন্তানের মত করে বড় করে তুলতে থাকেন। দু’বছর যেতে না যেতেই ছোট্ট একটি ছাগলের দল হয়ে যায় কৃষক শরিফুলের। এর থেকে দু’একটি ছাগল বিক্রি করে সংসারে ব্যয় করতে থাকেন, কিন্তু বছর পার হলেই বাড়তে থাকে দলে ছাগলের সংখ্যা। তার ইচ্ছা ছাগল পালন করেই তিনি জীবনে স্বাবলম্বী হবেন।

২০১৭ সাল ৩০ হাজার টাকার ছাগল বিক্রি করে তিনি চলে যান চুয়াডাঙ্গা জেলার শিয়ালমারি হাটে। সেখান থেকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে পাঁচটি ভাল জাতের গাড়ল কিনে আনেন। মাত্র তিন বছরে তার গাড়লের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৪০ আর ছাগলের সংখ্যা হচ্ছে ৬০, এরই মধ্যে ছাগল বিক্রি করে কেনেন ২ টি গরু, বর্তমানে তার গোয়ালে আছে ৭টি গরু।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পড়ন্ত বিকালে গাড়ল আর ছাগল মাঠে চরানো শেষে বাড়িতে ফিরছেন। গোয়াল ঘরে যার যে স্থানে রাখা দরকার সেখানেই সব ছাগল গরু আর গাড়লকে রাখা হয়।

তিনি জানান, দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে বেড়ে উঠা। মূলত মাঠে কাজ করেই চলত জীবন জীবিকা। এক সময় মনস্থির করি মাঠে কাজ করার পাশাপাশি ছাগল পালন করলে মন্দ হয়না। সেই থেকে পথচলা, বর্তমানে তার যে গাড়ল আছে তার বাজার প্রায় ৪ লাখ টাকা, আর ৬০ টি ছাগল গড়ে ৮ হাজার টাকা করে হলেও ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আছে ৭টি গরু যার বর্তমান বাজার দর ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।

দীর্ঘ পথ চলায় অনেক টাকার ছাগল, গাড়ল ও গরু বিক্রি করেছেন। মাঠে ১৫ কাটা জমি কিনেছেন, তৈরী করেছেন পাকাবাড়ি। স্ত্রী পারভীনা খাতুন, ছেলে ফিরোজ কবির আর মেয়ে তিশা খাতুনকে নিয়ে তার সংসার। ছেলে বিএ পড়ছে আর মেয়ে তিশা স্থানীয় স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী। তার এই কঠোর পরিশ্রমে স্ত্রী সন্তান সকলেই সর্বদা সহযোগিতা করেন।

তিনি বলেন, মাঠে একবেলা কাজ করি আর এক বেলা এই পশুদের পিছনে সময় দিই। মাঠে যে আয় হয় তাতেই চলে সংসার। শতাধিক পশুর জন্য তিনি এক বিঘা জমিতে ঘাস রোপন করেছেন। ওই ঘাস হচ্ছে পশুদের প্রধান খাদ্য। বর্ষায় গরু, ছাগল, গাড়ল বাড়িতেই থাকে। ওই সময় ঘাস আর বিচেলি মিশিয়ে তাদের খাদ্যের যোগান দিতে হয়। খরার সময় ছাগল ও গাড়লের দল নিয়ে মাঠে চরাতে যাই। সে সময়ে তোলা খাবার কমই দিতে লাগে। তিনি আরও বলেন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে আমাকে ট্রেনিংএ পাঠিয়েছিল। সেখান থেকে অনেক কিছুই শিখেছি। গরু, ছাগলের ছোটখাটো কোন রোগবালা হলে নিজেই চিকিৎসা দিতে পারি। বর্তমানে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বেশ সুখেই আছি। উপজেলা সচেতন মহল মনে করছেন কৃষক শরিফুল ইসলাম বেকার যুবকদের কাছে নিঃসন্দেহে এক দৃষ্টান্ত।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রভাষ চন্দ্র গোস্বামী বলেন, শরিফুলের ইচ্ছা শক্তিকে আমরা যথাযথ ভাবে মূল্যায়ন করেছি, সব সময়ে তার পাশে থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে, আমি নিজেও তার বাড়িতে গেছি এবং খোঁজখবর নিয়েছি। ছাগল পালনকারীদের মাঝে আমরা পি.পি.আর ভ্যাকসিন ও কৃমি মুক্তকরণ ওষুধ সরবরাহ করে থাকি, যার ফলে ছাগলের মৃত্যুহার কমেছে ফলে লাভবান হচ্ছেন ছাগল পালনকারীরা।

 

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!