প্রতিকূল পরিবেশেও কাউন্সিলের মাধ্যমে ৩০ ডিসেম্বরের আগে যে কোনো দিনে খুলনা নগর বিএনপির কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উন্মুক্ত ময়দানে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে সম্মেলন করা না গেলেও কর্মী সভার মাধ্যমে আন্দোলনমুখী কমিটি ঘোষণা দিতে হবে। তবে তা অবশ্যই হবে কাউন্সিলের মাধ্যমে। ১২ বছর আগে কাউন্সিলের মাধ্যমে নগর কমিটি ঘোষণা হয়নি। ২০০৯ সালে ২৫ নভেম্বর নগর বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন কাউন্সিল না করায় কর্মী ও সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১০ টা অবধি ঢাকায় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সাথে রুদ্ধদার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার আগে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভার্চুয়ালি এবং মহাসচিব ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে সাংগঠনিক সম্পাদকদের বক্তব্য অবহিত হন। সাংগঠনিক সম্পাদকরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে এবং আন্দোলনমূখী কমিটি গঠনের ব্যাপারে একমত পোষণ করেন। তারা গণতন্ত্রমনা দলগুলোর বৃহত্তর ঐক্য কামনা করেন।
স্থানীয় সূত্র বলছে, ১২ বছর আগে খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে জাঁকজমক পূর্ণ পরিবেশে বিএনপির নগর সম্মেলন উদ্বোধন হয়। স্টেডিয়ামের ব্যায়ামাগারে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান মনিকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষনা দেওয়া হয়। সেদিন কাউন্সিলের দাবিকে উপেক্ষা করা হয়। সম্মেলনের এক বছর পর খুলনা মহানগর বিএনপির ১৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। দলের মহাসচিব মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন পুর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন। এ কমিটির নেতৃত্বে নবম সংসদ নির্বাচন, দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন ও একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নে খুলনা-২ আসন থেকে নজরুল ইসলাম মঞ্জু একাই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ কমিটির সময়ে তিন দফা কেসিসির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি মেয়র নির্বাচিত হন। নগর শাখা মেয়াদউত্তীর্ণ হয়ে বয়স দাড়িয়েছে ১২ বছরে।
২০১৫ সালে অক্টোবর মাসে থানা ও ওয়ার্ড শাখা গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। নানা কারণে সে উদ্যোগে ভাটা পড়ে। বিরোধী দলে থাকাকালীন স্থানীয় নেতাদের কাঁধে ৬ শতাধিক মামলা। প্রতিদিন তাদের হাজিরা দিতে হচ্ছে। স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নামে চার্জফ্রেম হয়েছে। এ নিয়ে দলে অভ্যন্তরে ভীতির সৃষ্টিও হয়েছে।
নির্দলীয় সরকারের অধিনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আন্দোলন বেগবান করতে এবং গঠনতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলের হাইকমান্ড নিস্ক্রিয় ও মেয়াদউত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে বলা হয়েছে, পকেট কমিটি নয় কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা দিতে হবে। যাতে যোগ্য ও পরীক্ষিত সংগঠকরা নেতৃত্ব পান।
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুর কাছে জানতে চাইলে বলেন, ১২ অক্টোবরের সভায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ও মহানগরীতে সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্তের আলোকে ৩০ ডিসেম্বরের আগে যেকোন দিন নগর শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে আগামী সপ্তাহ থেকে তোড়জোড় শুরু হবে। তিনি দলের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা দুর্বৃত্তদের এবং সুবিধাবাদীদের দল থেকে বহিস্কারের দাবি তুলবেন। দলের অভ্যন্তরে উপ দল সৃষ্টিকারী দু’নেতার বিরুদ্ধে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তিনি উল্লেখ করেছেন বিতর্কিত ব্যক্তিদের অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্বে আনা হয়েছে। নগর সম্মেলনের আগে আবর্জনা পরিষ্কারে কেন্দ্রের কাছে দাবি তুলবেন। কাউন্সিলের দিনে নগর কমিটি বিলুপ্ত হবে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের রাজনীতির বিকাশ এবং নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে নয়া কমিটিতে আন্দোলনমুখী নেতৃত্ব আসবে বলে তিনি দাবি করেন। ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন হবে বলে তিনি আশাবাদী।
খুলনা গেজেট/এএ