খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

৩ পিলারে থমকে আছে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ

একরামুল হোসেন লিপু

২০২১ সালের ২৪ মে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় খুলনাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এবং প্রত্যাশিত ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ। কাজ শুরুর ২০ মাসে দৃশ্যমান হয়েছে মাত্র তিনটি পিলার। শুরু থেকেই শম্বুক গতিতে চলছিলো নির্মাণ কাজ।  গত দুই সপ্তাহ ধরে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।

জানা গেছে,  ২০ মাসে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৩৩ শতাংশ আর মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ১৪ শতাংশ। যা নিয়ে হতাশ দিঘলিয়ার মানুষ। কার্যাদেশ অনুযায়ী ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিলো।

এদিকে জমি অধিগ্রহণের প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হলেও সেতুর দিঘলিয়া অংশে অধিগ্রহণকৃত জমির উপর থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি।

সম্প্রতি সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, উভয় প্রান্তেই নির্মাণ কাজ বন্ধ। ২০ মাসে সেতুর কাজের অগ্রগতি বলতে সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ২৪, ২৫ এবং সেতুর শহরাংশ রেলিগেট প্রান্তে ১৩ নং মাত্র এই ৩ টি পিলার দৃশ্যমান। আর শহরাংশে রেলিগেট প্রান্তে ১৪ নং পিলারের ক্যাপ ঢালাইয়ের কাজ এবং দিঘলিয়া প্রান্তে ২১ নং পিলারের টেষ্ট পাইলিং রডের কারণে থমকে রয়েছে। সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন হলেও সেতুর শহরাংশের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ইতিমধ্যে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির প্রস্তাবনা দিয়েছে। কাজের এই অচলাবস্থার কারণে বর্ধিত সময়ের মধ্যেও সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া নিয়ে মারাত্মক সংশয় দেখা দিয়েছে।

ভৈরব সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার( পিএম) প্রকৌশলী এস এম নাজমুল হোসেন বলেন, বালি, সিমেন্ট, পাথর সবই আছে, শুধু রডের কারণে কাজ করতে পারছি না।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ)’র আর্থিক দৈন্যতার কারণে সেতুর নির্মাণকাজ থমকে গেছে। কোম্পানীর হেড অফিস ঢাকায় অর্থ বরাদ্দের জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া সত্বেও অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে না। অন্য একটি সূত্র জানায়, রডসহ নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজে গড়িমসি করছে। সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) বলছে প্রকল্পের ফান্ডে অর্থের কোনো ঘাটতি নেই।

সওজ ‘র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ খুলনা গেজেটকে বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যতটুকু কাজ করেছে সে অনুযায়ী তাদেরকে আমরা বিল পেমেন্ট দিয়েছি। কাজ না করে বাড়তি বিল নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মৌখিকভাবে বলছি, বারবার লিখিত দিচ্ছি, সেতুর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য।

প্রকল্প কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভৈরব সেতু নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই সওজ ‘র খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করেন। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেতুর নির্মাণকাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ১৩ দিন পর ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার ৬ মাস পর ২০২১ সালের ২৪ মে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুর কি দিঘলিয়া প্রান্তে সরকারি খাস জমির উপর ২৪ নং পিলারের টেস্ট পাইলিং এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কর্মযজ্ঞ।

ভৈরব সেতুর পিলার বসবে মোট ৩০ টি। এর মাধ্যমে সেতুর শহরাংশে কুলিবাগান হতে রেলিগেট ভৈরব নদীর তীর পর্যন্ত ১ থেকে ১৪ নং পিলার এবং সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ১৭ থেকে ২৮ নং পিলার বসবে। সেতুর রেলিগেট প্রান্তে নদীর পাড় থেকে ৪২ মিটার ভেতরে ১৫ নং এবং সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে নদী পার হতে ১৮ মিটার ভেতরে ১৬ নং পিলার বসবে। এই দুই পিলারের উপর স্টিলের সেতু বসবে।

প্রসঙ্গতঃ ভৈরব সেতুর মোট দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। এরমধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। বাকী টাকা সেতু সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে।

খুলনা গেজেট/েএইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!