খবর বের হয়েছিল আগেই। কিন্তু তখন পুরোপুরি অস্বীকার করেছিলেন উন্মুক্ত চাঁদ। অথচ শেষ পর্যন্ত সেই খবরটিই হলো সত্য। মাত্র ২৮ বছর বয়সেই নিজ দেশের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমালেন ভারতের ২০১২ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে এক বার্তার মাধ্যমে ভারতের ক্রিকেট থেকে নিজের নাম মুছে নিয়েছেন চাঁদ। তার বদলে এখন তিনি খেলবেন যুক্তরাষ্ট্রের মাইনর লিগ ক্রিকেটে। এটিকে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দলের হয়ে খেলা শুরুর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে সিলিকন ভ্যালি স্ট্রাইকার্সের হয়ে খেলবেন চাঁদ। যেখানে তার প্রতিপক্ষ সোশ্যাল ল্যাশিংস। এর বাইরে মেজর লিগ ক্রিকেটের সঙ্গেও দেশটির ক্রিকেট উন্নতির জন্য কয়েক বছরের চুক্তি করেছেন চাঁদ। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের উঠতি ক্রিকেটারদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
২০১২ সালের যুব বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১১১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে নিজ দেশকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন চাঁদ। তখন থেকেই তার ওপর অন্যরকম প্রত্যাশা ছিল ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীদের। কিন্তু তা পূরণ করতে পারেননি চাঁদ, পারেননি দীর্ঘ ৯ বছরেও জাতীয় দলে নাম লেখাতে।
তাই এবার নিজ দেশের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে পাড়ি জমালেন যুক্তরাষ্ট্রে। ভারতের ক্রিকেট থেকে নিজের অবসরের কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘কেমন অনুভূতি হওয়া উচিত আমি জানি না। কারণ, সত্যি বলতে আমি এখনও বুঝে উঠতে পারছি না। কখনও দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে না পারার চিন্তা আক্ষরিক অর্থে কিছু সময়ের জন্য আমার হৃদস্পন্দন বন্ধ করে দিয়েছিল।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে ভারতে ক্রিকেটের পথচলায় বেশ কিছু গৌরবময় মুহূর্ত ছিল আমার। ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় মুহূর্তগুলোর একটি। আমি কখনোই সেই অনুভূতি ভুলব না। এছাড়া ভারত ‘এ’ দলকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক এবং ত্রিদেশীয় সিরিজ জেতা আমার স্মৃতিতে চিরকালের জন্য গেঁথে আছে।’
ভারতের ক্রিকেটে ৬৭ প্রথম শ্রেণির, ১২০ লিস্ট ‘এ’ ও ৭৭ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন চাঁদ। দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে ৩১.৫৭ গড়ে ৩৩৭৯, লিস্ট ‘এ’তে ৪১.৩৩ গড়ে ৪৫০৫ ও কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে ২২.৩৫ গড়ে ১৫৬৫ রান করেছেন ২৮ বছর বয়সী চাঁদ। ভারত ‘এ’ দলের অধিনায়কত্বও করেছেন লম্বা সময়।
স্কুলে পড়া অবস্থায়ই রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক হয়ে যায় চাঁদের। ক্যারিয়ারের চতুর্থ ম্যাচেই প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান তিনি, খেলেন ১৫১ রানের ইনিংস। মাত্র ১৮ বছর বয়সে আইপিএল অভিষেক হয় তার। তবে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ও রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি।
২০১৬ সালে বিজয় হাজারে ট্রফির স্কোয়াড থেকে বাদ পড়ে যান তিনি। পরে ম্যাচ টাইমের অভাবে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস থেকে নিজেই নাম সরিয়ে নেন। কিন্তু পরবর্তী নিলামে তার প্রতি আগ্রহ দেখায়নি কেউই। সেটিকে নিজের জীবনের সবচেয়ে বাজে সময় হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন চাঁদ।
পরে ২০১৯-২০ মৌসুমে দিল্লি ছেড়ে উত্তরখণ্ডের হয়ে খেলতে চলে যান চাঁদ। কিন্তু সেখানেও মেলেনি সাফল্য। সাতটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে মাত্র ১৩.৯২ গড়ে ১৯৫ রান করেন তিনি। সবশেষ প্রায় দেড় বছর আগে ঘরোয়া পর্যায়ে কোনো স্বীকৃত ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছেন অমিত সম্ভাবনাময় উন্মুক্ত চাঁদ।
খুলনা গেজেট/এনএম