আগামী বছর থেকে সারাদেশের ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল কার্যক্রম শুরু করবে সরকার। পর্যায়ক্রমে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ কার্যক্রমের আওতায় আসবে ২০২৩ সালে। প্রথম বছর ২০২১ সালে কার্যক্রম চালু হবে ২৫০ উপজেলায়। বর্তমানে দেশের ১৬টি উপজেলায় মিড-ডে মিল চালু আছে।
এ প্রসঙ্গে স্কুল ফিডিং প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো. রফিকুল আমিন খান জানান, ২০২১ সালে ২৫০টি উপজেলায় এই কার্যক্রম শুরু হবে। পরের বছর আরও ১০০ উপজেলা যুক্ত হবে এই কার্যক্রমের সঙ্গে। শেষ বছর ২০২৩ সালে বাকি সব প্রাথমিক বিদ্যালয় এ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্কুল মিল কর্মসূচির আওতায় উপজেলা নির্বাচন করা হবে দারিদ্র্য ম্যাপ অনুযায়ী। করোনার কারণে এখনও উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়নি। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের স্কুলে নেওয়া, প্রান্তিক এলাকায় শিক্ষার্থীদের এনরোলমেন্ট বাড়ানোর জন্য উপজেলা বাছাই করা হবে। এই প্রকল্পে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ ইতবেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মিড-ডে মিল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।
মিড-ডে মিল কার্যক্রম নিয়ে গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক কেএম এনামুল হক বলেন, ‘সরকারের এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী কার্যক্রম। একই সঙ্গে আমরা চাই দেশের সব ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল চালু করা হোক। বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিশুরা যেখানে লেখাপড়া করে তারা এই কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সেকেন্ড চান্স এডুকেশন ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাসহ সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সন্তানরা যেসব বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে, তাদের এই কার্যক্রমের আওতায় নিতে হবে।’
মন্ত্রণালয় স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওতায় দেশের ১০৪ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ পুষ্টিমানসমৃদ্ধ বিস্কুট এবং মিড-ডে মিল কার্যক্রমের আওতায় ১৬ উপজেলায় চাল, ডাল ও ভোজ্যতেল বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছে সরকার। স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওতাধীন ১০৪টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাথাপিছু ২৫ থেকে ৫০ প্যাকেট বিস্কুট দেওয়া হচ্ছে। আর মিড-ডে মিলের জন্য মজুত যেসব চাল, ডাল রয়েছে তা বিতরণ করা হচ্ছে। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই পদক্ষেপ নেয় সরকার।
গত ২০ জুলাই কুড়িগ্রামের রৌমারীতে জুন ও জুলাই মাসের সংরক্ষণ করা স্কুল ফিডিং প্রকল্পের বিস্কুট ও মিড-ডে মিলের চাল, ডাল ও ভোজ্যতেল বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে রান্নাকরা খাবার ও উচ্চ পুষ্টিমানসমৃদ্ধ ফর্টিফাইড বিস্কুট দেশের ১৬ উপজেলার মোট ২ হাজার ২৫৬টি বিদ্যালয়ের ৪ লাখ ২৯ হাজার ৩৪৬ শিক্ষার্থীর মাঝে প্রতি স্কুল দিবসে পরিবেশন করা হচ্ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিস্কুট সরবরাহ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। জাতীয় স্কুল মিল নীতি-২০১৯ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই মিল নীতির আওতায় ২০২৩ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রম চালু করা হবে।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওতায় দেশের দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় বিস্কুট বিতরণ কর্মসূচি চালু করা হয় ২০১০ সাল থেকে। দফায় দফায় বাড়িয়ে বর্তমানে ১০৪ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিস্কুট বিতরণ করা হচ্ছে।
এই প্রকল্প শুরুর পর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও লেখাপড়ায় মনোযোগ বাড়লে বরগুনার বামনা, জামালপুরের ইসলামপুর এবং বান্দরবানের লামা উপজেলায় ডব্লিউএফপি’র সহযোগিতায় ২০১৩ সাল থেকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে মিড-ডে মিল বা দুপুরে রান্নাকরা খাবার বিতরণ করা হয়। এই পাইলট প্রকল্প ফলপ্রসূ হওয়ার পর জাতীয় মিড-ডে মিল নীতিমালা-২০১৯-এর আওতায় দেশের ১৬টি উপজেলায় দুপুরে রান্নাকরা খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে সরকার।
স্কুল মিল কর্মসূচির আওতায় উপজেলা নির্বাচন করা হয়েছে দারিদ্র্য ম্যাপ অনুযায়ী। সরকারি এই কার্যক্রমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খাবার দেওয়া হচ্ছে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী ও রাজিবপুর, দিনাজপুরের ফুলবাড়ি, পাবনার বেড়া, নওগাঁ জেলার পোরশা, গাইবান্ধার সাঘাটা, শেরপুরের নালিতাবাড়ি, জামালপুরের ইসলামপুর, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও কাউখালী, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, যশোরের ঝিকরগাছা, খুলনার বাটিয়াঘাটা, বরগুনার বামনা, লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলা এবং সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায়।
খুলনা গেজেট/এআইএন