২০২০ সালে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমেছে। এর পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত বিভিন্ন তদন্ত কার্যক্রম এবং গ্রেফতারের ঘটনাও বেড়েছে। তবে এসব ঘটনায় কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেররিজম (সিআরটি)’ নামের ওই রিপোর্টে মূলত বাংলাদেশের গত বছরের সন্ত্রাসবাদের চিত্র বিশ্লেষণ করে এসব মন্তব্য করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ রুখতে স্পষ্টভাবে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ সরকার।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছর বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট তিনটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কারও মৃত্যু হয়নি। একইসঙ্গে সন্ত্রাসবাদ রুখতে এবং নিজের ভূখণ্ডকে সন্ত্রাসীদের স্বর্গ হিসেবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে স্পষ্টভাবে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করেছে বাংলাদেশ সরকার। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সরকারের নতুন জাতীয় সন্ত্রাস দমন ইউনিট কাজ শুরু করে। সরকারের প্রধান অ্যান্টি-টেররিজম এজেন্সি হিসেবে কাজ করতেই এই বিশেষ শাখার যাত্রা হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ নিজেদের ভূখণ্ডের সীমান্ত ও বিভিন্ন বন্দর দিয়ে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক জোরদার করেছে বলেও রিপোর্টে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে চিহ্নিত সন্ত্রাসী বা সন্দেহভাজনদের নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে একটি ‘অ্যালার্ট লিস্ট’ তৈরিতেও একযোগে কাজ করছে ওয়াশিংটন-ঢাকা।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদনে গত বছর হওয়া সুনির্দিষ্ট তিনটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে একটি ঘটনা চট্টগ্রামের। ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে একটি পুলিশ বক্সের কাছে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটে। এতে দুই পুলিশ ও এক সাধারণ নাগরিক আহত হন।
এছাড়া একই বছরের ৩১ জুলাই নওগাঁ জেলার একটি মন্দিরে হামলা ঘটনা ঘটে। সেখানে একটি বোমা পেতে রাখা হয়েছিল। তবে সেখানে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এই দু’টি ঘটনারই দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস।
এরপর তৃতীয় ঘটনা হিসেবে ঢাকায় একটি হামলা চেষ্টার কথা বলা হয়। ২০২০ সালের ২৪ জুলাই রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় পুলিশের মোটরসাইকেলে একটি ছোট আইইডির সন্ধান পাওয়া যায়। এটিকে আইএস-অনুপ্রাণিত তৃতীয় হামলা প্রচেষ্টা বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার ও অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সাম্প্রতিক সময়ে হামলা পরবর্তী পুলিশের বিভিন্ন তৎপরতাকেও গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে মার্কিন ওই প্রতিবেদনে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে এই প্রতিবেদনের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জানান, ২০২০ কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেররিজম (সিআরটি) প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত বছর সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী পরিস্থিতি ঠিক কেমন ছিল, তা এই রিপোর্টে বিস্তারিত উঠে এসেছে।
মূলত যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছরই বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। এতে পূর্ববর্তী বছরের সন্ত্রাসবাদের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়।