কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২৪ সালের ২৬ জানুয়ারি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)’র এপ্রোচ সড়ক উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা । গত বছরের ১২ জানুয়ারি প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সড়কটির উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের কাজের মধ্যে রয়েছে মাত্র ১১৮৫ মিটার সড়কের আধুনিকায়ন এবং সড়কের দু’পাশে ড্রেন নির্মাণ। নির্মাণ কাজে ধীর গতির কারণে মূল সড়কের আধুনিকায়নের কাজ শুরু তো দূরের কথা এখনও পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণের কাজই শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্স (প্রাঃ)লিমিটেড।গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দিয়ে যাতায়াতকারীদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
জানা যায়, শুরু থেকেই অপরিকল্পিত এবং অনেকটা অগোছালোভাবে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স (প্রাঃ) লিমিটেড। সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সড়কটির উন্নয়ন কাজের চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। এরমধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স কালো তালিকাভুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, কুয়েট এপ্রোচ সড়ক উন্নয়ন কাজ দ্রুত সম্পন্নের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের তাগিদ খুব একটা আমলে নেয়নি। কারণ তখন তাদের পাওয়ার ছিল। এখন তাদের পাওয়ার কমে যাওয়ায় আমাদের তাগিদ গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে।গত কয়েকদিন হল তারা কাজের গতি বাড়িয়েছে। আমরা তাদেরকে লিখিত দিয়েছি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে লাইসেন্স তালিকাভুক্ত করা হবে।
এদিকে ২০ মাস ধরে চলা সড়কের খোঁড়াখুড়ির দুর্ভোগের সাথে নতুন করে যোগ হচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে গ্যাস, ওয়াসা , টেলিফোন ও ইলেকট্রনিক লাইন স্থাপনের খোঁড়াখুড়ির কাজ।
কাজের ধীর গতিতে অসন্তোষ কুয়েট কর্তৃপক্ষ। কুয়েটের প্রধান প্রকৌশলী এ,বি,এম মামুনুর রশিদ খুলনা গেজেটকে বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরুর পর থেকে সড়কটি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা -কর্মচারীসহ যানবাহন চালক এবং পথচারীদের সীমাহীন দুর্ভোগের শুরু হয়ে যায়, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, এ মাসের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি সিটি কর্পোরেশনকে বারবার তাগিদ দিচ্ছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের সড়ক সেইভাবে আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে প্রেসার দিতে পারি না। তারপরও তাদেরকে আমরা দ্রুত কাজটি সম্পন্নের জন্য বারবার বলছি।
কাজের ধীরগতি সম্পর্কে প্রকল্পের পিএম প্রকৌশলী আশরাফ আলী বলেন, শুরু থেকে প্রকল্পটির কাজে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষ করে সড়কের সীমানা নির্ধারণ সঠিকভাবে না হওয়ায় সড়কের দু’পাশের ড্রেন নির্মাণে বিলম্ব হয়েছে। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিল। এখন পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ইনশাল্লাহ।
গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু হানিফ বলেন, “বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ৬ মাস পূর্বে সড়কের উপর কালভার্টের অর্ধেকাংশ নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দুঃখের বিষয় কালভার্টের নির্মাণ অংশে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হয়নি।বিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারের সামনে এ অবস্থার কারণে দেড় সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রীর বিদ্যালয়ে আসা যাওয়াতে মারাত্মক বিঘ্নের সৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে কালভার্টের বাকি অংশ দ্রুত নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি “।
প্রতিভাময়ী ফ্রি ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, সড়কটির কাজ দীর্ঘদিনেও শেষ না হওয়ায় এবং বিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারে সড়কের উপর কালভার্টের অর্ধেকাংশ নির্মাণ করে সেটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী না করায় বিদ্যালয়ের ৬ শতাধিক ছোট ছোট ছেলে মেয়ে এবং অভিভাবকদের সড়কটির দিয়ে যাতায়াতে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
খুলনা-যশোর জাতীয় মহাসড়কের ব্যস্ততম ফুলবাড়িগেট থেকে কুয়েট এপ্রোচ সড়ক শুরু। এপ্রোচ সড়কের পরেই রয়েছে তেলিগাতী কেডিএ সিটি আউটার বাইপাস সড়ক। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(কুয়েট) ছাড়াও সড়কটিতে রয়েছে খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, খুলনা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এইচএস টি টিআই) গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খুলনা মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খানজাহানআলী থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, প্রতিভাময়ী প্রি ক্যাডেট স্কুল, আল হিরা প্রি ক্যাডেট মাদ্রাসাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক , প্যাথলজিসহ অসংখ্য দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রশিক্ষণার্থীসহ অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করে থাকে। চলাচল করে শতশত যানবাহন। গত ২০ মাসে সড়কটির দুই পাশ দিয়ে ড্রেন নির্মাণসহ উন্নয়ন কাজের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষ এবং যানবাহন চালকদের যেন দুর্ভোগের শেষ হচ্ছে না। বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে দ্বিগুণ হয় । আর শুষ্ক মৌসুমে সড়কটি দিয়ে যাতায়াতকারীদের ধূলাবালির যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কুয়েট কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এলজিইডি ও কেসিসি’র যৌথ উদ্যোগে দ্বিতীয় নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে সড়কটি আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সিটি কর্পোরেশন গত বছরের জানুয়ারিতে মাহবুব ব্রাদার্স প্রাঃ লিঃ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সড়কটি আধুনিকায়ন এবং সৌন্দর্য বর্ধনের উন্নয়ন কাজের কার্যাদেশ প্রদান করে। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২৪ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো।
কার্যাদেশ অনুযায়ী খুলনা-যশোর মহাসড়কের ফুলবাড়িগেট হতে গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুল পর্যন্ত ১১৮৫ মিটার সড়ক আধুনিকায়নে ব্যয় ধরা হয় ২২ কোটি ৮৪ লাখ ৫৪ হাজার ২৩০ টাকা। গভারমেন্ট অফ বাংলাদেশ (জিওবি) এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) কাজটিতে অর্থায়ন করছে।
প্রকল্পের আওতায় খুলনা-যশোর মহাসড়কের কুয়েট রোডের প্রবেশদ্বারে আধুনিক ট্রাফিক আইল্যান্ড ও গাড়ি পার্কিং এর সুব্যবস্থা থাকবে। কুয়েট রোডের প্রবেশদ্বার হবে ৬০ ফুট প্রশস্ত। ২ লেন বিশিষ্ট সড়কটির প্রত্যেক লেন প্রশস্ত হবে সাড়ে ২২ ফুট। ১ ফুট উঁচু হবে সড়কটি। সেই হিসেবে মূল এপ্রোচ সড়কটি প্রশস্ত হবে ৪৫ ফুট। সড়কের মাঝখানে রোড ডিভাইডারসহ দুই পাশে পানি নিষ্কাশনে থাকবে ৫ ফুট প্রশস্ত ড্রেন। ড্রেনের উপর দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের জন্য ফুটপাতের ব্যবস্থা থাকবে। কুয়েট প্রধান ফটকের সামনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নির্মিত হবে দৃষ্টিনন্দন আইল্যান্ড।
গত বছরের ১২ জানুয়ারি প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময় ২০২৪ সালের ২৬ জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু মাহাবুব ব্রাদার্সের ক্ষমতার প্রভাব থাকায় বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে তোয়াক্কা না করে, জনগণের দুর্ভোগের কথা না ভেবে তারা তাদের মতো করে এতদিন কাজ করে আসছিলো।