খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬
মনোনয়নপত্র দাখিল

১৩ বছর অপেক্ষার পর যশোর চেম্বার অব কর্মাসের নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোরের ব্যবসায়ীদের ১৩ বছরের অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে। ইতিমধ্যে নির্বাচনের দিনক্ষণও ঠিক হয়েছে যশোর চেম্বার অব কমার্সের। শনিবার (২৬ অক্টোবর) মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে ২১ পদের বিপরীতে ২১ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের মাঝে চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সর্বশেষ ২০১১ সালে ব্যবসায়ীদের এ সংগঠনের নির্বাচন হয়েছিল। এরপর নানা জটিলতার আটকে ছিল নির্বাচন।

এদিন সকাল থেকেই ব্যবসায়ীরা জড়ো হতে থাকেন চেম্বার অব কমার্স ভবন চত্বরে। এসময় ব্যবসায়ীরা নির্বাচন বোর্ডের আহবায়ক সিনিয়র সহকারী কমিশনার আনোয়ার হোসেনের হাতে তাদের মনোনয়ন পত্র জমা দেন। সাধারণ শ্রেণীর ১২টি পদে ১৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন, মেসার্স অগ্রানী এন্টারপ্রাইজের মালিক মঞ্জুর হোসেন মুকুল, ওরিয়ন ট্রেডার্সের সাজ্জাদুর রহমান সুজা, বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের কাসেদুজ্জামান সেলিম, আহাদ আয়রন স্টোরের এজাজ উদ্দিন টিপু, চাকলাদার এন্টারপ্রাইজের আব্দুল হামিদ চাকলাদার ঈদুল, কাস ট্রেডের খায়রুল কবীর চঞ্চল, মেসার্স আলম ট্রেডিংয়ের নূর আলম পাটোয়ারি, নুর এক্সিমের নুরুজ্জামান লিটন, মেসার্স পদ্মা স্টোরের তানভিরুল ইসলাম সোহান, মেসার্স মুন লাইট মটরসের মকছেদ আলী, মেসার্স এস ইসলাম ট্রেডার্সের এসএম সাইফুল ইসলাম লিটন, মোহনা এন্টারপ্রাইজের কামরুজ্জামান ও এমইউ সি-ফুডস লিমিটেডের শ্যামল দাস।

সহযোগী শ্রেণীর ছয়টি পদের বিপরীতে সাতজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন, গাঙচিল ডেভলপারসের প্রোপাইটর মিজানুর রহমান খান, মেসার্স জাহিদ হাসান টুকুনের মালিক জাহিদ হাসান টুকুন, মেসার্স গোলাম রেজা প্রোপাইটর গোলাম রেজা, মেসার্স খোকন এন্টারপ্রাইজের সৈয়দ শাহজাহান আলী খোকন, তুবা এন্টারপ্রাইজের রেজাউল করীম, স্কয়ার ইলেকট্রিকের সহিদুল ইসলাম ও কনক ইন্টারন্যাশনালের ইসমাইল হোসেন মিলন।

এছাড়া, গ্রুপ শ্রেণীর তিনটি পদে মাত্র একজন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। তিনি হলেন, যশোর জেলা জ্বালানী তেল পরিবেশক মালিক গ্রুপের প্রোপাইটর সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল।

আগামী ২৭ ও ২৮ অক্টোবর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করবে নির্বাচন বোর্ড। ২৯ অক্টোবর বৈধ মনোয়নপত্রের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে মনোনয়নপত্রের সিদ্ধান্তের উপর আপিল বোর্ডের কাছে আপত্তি দাখিল করা যাবে। ২ নভেম্বর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত আপত্তি শুনানি ও নিস্পত্তি। ৫ নভেম্বর বৈধ মনোনয়নপত্রের চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ। ৭ নভেম্বর প্রার্থীতা প্রত্যাহার। ৯ নভেম্বর প্রার্থীদের চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ। ৩০ নভেম্বর দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

পহেলা ডিসেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচনী ফলাফলের বিরুদ্ধে আপিল আপত্তি দাখিল করা যাবে। আপিল শুনানি শেষে ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন বোর্ড চুড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হবে। পরে ওইদিনই পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক মন্ডলির নির্বাচনের তালিকা প্রকাশ করা হবে। ৮ ডিসেম্বর মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ ও ৯ ডিসেম্বর মনোনয়ন পত্র দাখিল করা হবে। ওইদিনই বাছাই ও বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১০ ডিসেম্বর সাথে ওইদিনই বৈধ প্রার্থীর চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১২ ডিসেম্বর নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী সদস্য নিবার্চনের মাধ্যমে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
এবার যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচনে মোট ভোটার রয়েছেন ১৮শ’। তাদের মধ্যে সাধারণ সদস্য ৯শ’৭২জন, সহযোগি সদস্য ৮২৭জন ও গ্রুপ সদস্য রয়েছেন একজন।
এ বিষয়ে নির্বাচন বোর্ডের আহবায়ক সিনিয়র সহকারী কমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, তাদের সকল কাজ স্বাভাবিকভাবেই চলছে। নির্বাচনে কোনো বাধা নেই। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৩০ নভেম্বর শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দুই বছরের জন্যে সংগঠনটির হাল ধরেন। তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি একে আজাদের হস্তক্ষেপে নির্বাচিত হওয়ার এক বছর পর ২০১২ সালের ৩ মার্চ তারা দায়িত্ব পান। নির্বাচিত ওই কমিটি নতুন ভবনে তাদের কার্যক্রমও শুরু করে। দুই বছর মেয়াদী কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সংগঠনের বিধি অনুযায়ী পরবর্তী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল। এ তফসিল অনুযায়ী ভোট গ্রহণের দিন ছিল ওই বছরের ১২ জুলাই। তফসিল ঘোষণার দিন ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ওই কমিটির অধীনে নির্বাচন করতে অনীহা প্রকাশ করেন। এমনকি নোটিশ বোর্ডে টাঙানো তফসিল ছিঁড়ে নিয়ে যান কয়েক ব্যবসায়ী। এরপর নির্বাচন ভেস্তে যায়। সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটির মেয়াদের শেষ দিন ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর যশোর-৩ সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সাথে সাক্ষাৎ করে প্রশাসনের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। ওইদিন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন প্রশাসকের দায়িত্ব নেন।

২০১৪ সাল থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রশাসকের দায়িত্ব পালনের সময় দু’দফা তফসিল ঘোষণা করলেও নানা জটিলতার কারণে নির্বাচন হয়নি। ২০১৫ সালের ১৬ মে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল আরিফকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান করে তফসিল ঘোষণা করা হয়। ওই সময় ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া মা ফাতেমা ফিস হ্যাচারির সত্বাধিকারী ফিরোজ আহমেদ মামলা করেন। এতে ভোটের আগের দিন নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়।

এদিকে, ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর যশোর চিফ জুডিশিয়াাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রায় দেন নির্বাচনে কোনো বাধা নেই। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর আবারও যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উপ-পরিচালক এটিএম গোলাম মাহবুবকে চেয়ারম্যান করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ভোট গ্রহণের দিন ছিল ২৮ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনও শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এরপর ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আসাদুল হক। এর মাঝে আবারো আরেক দফা নির্বাচনী প্রস্তুতি পন্ড হয় ২০২৩ সালে। ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি জাল আয়কর সনদ দিয়ে ভোটার করানো হয়েছে অভিযোগ তুলে মেসার্স পারভেজ ট্রেডার্সের মালিক মেহেদী হাসান যশোর সদর সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। এ মামলায় ওই বছরের ৮ জানুয়ারি ব্যবসায়ী ঐক্য প্যানেলের ১৮ প্রার্থী বিবাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। পরে ব্যবসায়ী অধিকার পরিষদের ১৮ প্রার্থী বিবাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। এদিন বিচারক মামলাটি খারিজ করে দেন। একইসাথে যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি হওয়ায় ভোটার তালিকা পুণরায় যাচাই এবং যদি কোনো অসঙ্গতি থাকে তা দূর করে দ্রুত নির্বাচন সম্পন্ন করার আদেশ দেন বিচারক।

শেষ মেষ যশোরের সাধারণ ব্যবসায়ীরা নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানান। একপর্যায়ে গত ১৯ আগস্ট জেলা প্রশাসক বরাবরও স্বারকলিপি প্রদান করেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এরপর নতুন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামি ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ব্যবসায়ীদের কাঙ্খিত নির্বাচন।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!